ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১২ ১৪৩১

মাশরাফির যে ১০ কৌশলে ধরাশায়ী পাকিস্তান

প্রকাশিত : ১১:৩৮ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:০৪ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

গতরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে রবিবাসরীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এ জয় শুধু জয় নয়। রীতিমত টাইগারদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সরফরাজ বাহিনী। ব্যাটিং-বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই অসাধারণ নৈপূণ্য দেখিয়ে ৩৭ রানের জয় ছিনিয়ে নিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। এই ম্যাচ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মূলত মাশরাফির অনন্য পরিকল্পনা ও অসাধারণ কৌশলের কাছেই ধরাশায়ী হয়েছে সরফরাজ বাহিনী।  

সাকিব-তামিমের মতো ফর্মে থাকা বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদ্বয়কে ছাড়াই খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। দু’জনেই ইনজুরির শিকার হয়েছেন সিরিজের মাঝামাঝি। দলে নেই সাব্বির রহমান। মুশফিকের পাজরেও চোট। ফর্মে নেই সৌম্য ও মোসাদ্দেক। এতগুলো প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান যখন দলকে সাপোর্ট দিতে পারছে না তখন পাকিস্তানের তারুণ্যনির্ভর তেজদ্বীপ্ত দলটিকে হারানো বাংলাদেশের জন্য ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মতো।

সেই স্বপ্নই সত্যি হয়েছে টাইগার অধিনায়ককের ১০ টি কৌশলে। যেমনটি বেরিয়ে এসেছে ম্যাচশেষে মাশরাফির কথায়।  

১. পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করার কৌশল নিয়ে ম্যাচ শেষে টাইগার অধিনায়ক বলেন, আমরা কিছু পরিবর্তন এনেছিলাম। সাধারণত আমি নিজেই বোলিং উদ্বোধন করি। কিন্তু এ দিন আমরা শুরু করি মিরাজকে দিয়ে। তাতেই ফল পাওয়া যায় হাতে হাতে। প্রথম ওভারেই উইকেট পতন হয়। মিরাজের বলে আউট হন ফখর জামান। শুণ্যে লাফিয়ে অসাধারণ ক্যাচটি তালুবন্দি করেন রুবেল হোসেন।

২. মাশরাফি সাধারণত বোলিং উদ্বোধন করেন। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডার বিবেচনায় নিয়ে তিনি নিজে বল হাতে নেন তিন নম্বরে। মোস্তাফিজকে আগে বল করতে দেন। মোস্তাফিজ সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। যতক্ষণ বল করেছেন ততক্ষণেই পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের ভুগতে হয়েছে। ‍পাকিস্তান দলের সেরা নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটসম্যান সরফরাজ ও বাবর জামানসহ ৪ জনকে আউট করেছেন।

৩. ম্যাচে পুঁজি মাত্র ২৩৯ রান হওয়ায় মাশরাফির কৌশল ছিল রান আটকে রেখে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরা। সেটিতে সফল হয়েছেন। মেডেন দিয়ে বোলিং শুরু করা অধিনায়ক প্রথম স্পেলে ৩ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়েছিলেন। ২৩৯ রানের অল্প পুঁজি নিয়েও লড়াইটা করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

৪. বাংলাদেশ দল গতরাতে অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে। এটিও মাশরাফির পরিকল্পনায় ছিল। আগের ম্যাচগুলোর ভুল ত্রুটি শোধরে মাঠে মাটি কামড়ে থাকে বাংলাদেশ। রুবেল ও মাশরাফি দুটি অকল্পনীয় ক্যাচ নিয়েছেন। পাজরে আঘাত নিয়েও উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো মুশফিকের নেওয়া দুটি ক্যাচও ছিল অনন্য।

৫. তারুণ্য নির্ভর পাকিস্তান দলটি মূলত স্পিন ভালো বুঝে। তাই মাশরাফির পরিকল্পনায় ছিল সিমার বেশি রাখা। এছাড়া সাকিবের মতো বিশ্বসেরা স্পিনারের জায়গায় মাশরাফির হাতে বিকল্পও ছিল না বলা চলে। তাই মাশরাফি একজন সিমার বেশি খেলান। এটি কাজে দিয়েছে।

৬. বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলতে গেলে বাংলাদেশ সাধারণত খেলা শেষ হওয়ার আগেই হেরে যায়। সাহস হারিয়ে ফেলার বিষয়টি ফুটে উঠে খেলোয়ারদের শরীরী ভাষায়। এজন্য খেলোয়ারদের চাঙা রাখতে মাশরাফি কৌশল অবলম্বন করেন। সবাইকে উজ্জীবিত রাখতে সর্বদা সাহস যুগিয়েছেন। গতরাতে সবার শরীরী ভাষা ছিল পজেটিভ। যেটিতে কাবু হয়ে যায় পাক ব্যাটসম্যানরা।

৭. অনিয়মিত বোলারদের দিয়ে বেশি বল করিয়েছেন মাশরাফি। বিশেষ করে মাহমুদুল্লাহকে দিয়ে ১০ ওভার বল করিয়েছেন। সৌম্যকে দিয়ে ৫ ওভার বল করিয়েছেন। অনিয়মিত বোলারদের স্টাডি করতে না পারায় পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা পরাস্ত হয়েছে ম্যাচে।

৮. সাকিব অনিশ্চিত হওয়ার পর টিম ম্যানেজমেন্টের কৌশল ছিল একজন ব্যাটসম্যানকে বেশি খেলানো। যেটি কাজে দিয়েছে গতম্যাচে। ৭ ব্যাটসম্যান চার বোলার নিয়ে মাঠে নামেন মাশরাফি। ভেবে দেখুন কাল ছয় ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে গেলে হয়তো বাদ পড়তে হতো মিঠুনকে। সেক্ষেত্রে পুঁজিটা কি এতো বড় হতে পারতো!

৯. আগের ম্যাচে ভালো বল করা নাজমুল ইসলাম অপুকে বাদ দিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট সিমার রুবেল হোসেনকে সুযোগ দেয়। সিদ্ধান্তটি যে সঠিক ছিল সেটি রুবেলের পারফরমেন্সে বুঝতে কারো বাকি নেই। তুলে নিয়েছেন পাকিস্তানের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিককে।

১০. ইমাম ও শোয়েব মালিকের জুটিতে মনোবলে চিড় ধরা টাইগারদের আক্রমনাত্বক করে তুলতে যাঁর কিছু একটা করা দরকার ছিল, সেই তিনিই করলেন বিশেষ কিছু। এই বয়সেও মাশরাফি মিডউইকেটে হাওয়ায় ভেসে লুফে নিলেন ক্যাচ। সেটি যার তার ক্যাচ নয়। শোয়েব মালিকের, পাকিস্তানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। এশিয়া কাপে যিনি ছিলেন দারুণ ফর্মে।

শোয়েবকে (৫১ বলে ৩০) ওই সময়ে ফেরাতে না পারলে, কে জানে, হয়তো এই ম্যাচের গল্পটা অন্যভাবে লিখতে হতো। সেই ক্যাচের পর সতীর্থদের শরীরী ভাষাও গিয়েছিল বদলে। চনমনে বাংলাদেশ তো এরপর ৩৭ রানে জিতেই নিল। বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয় আর সব মিলিয়ে তৃতীয়বারের মতো উঠল এশিয়া কাপের ফাইনালে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২৩৯ (লিটন ৬, শান্ত ০, মুমিনুল ৫, মুশফিক ৯৯, মিঠুন ৬০ ইমরুল ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মিরাজ ১২, মাশরাফি ১৩, রুবেল ১, মুস্তাফিজ ১*; জুনাইদ ৪/১৯, আফ্রিদি ২/৪৭, হাসান ২/৬০, নওয়াজ ০/৩৯, মালিক ০/১৪, শাদাব ১/৫২)।

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২০২ (ফখর ১, ইমাম ৮৩, বাবর ১, সরফরাজ ১০, মালিক ৩০, শাদাব ৪, আসিফ ৩১, নওয়াজ ৮, হাসান ৮, ; মিরাজ ২/২৮, মুস্তাফিজ ৪/৪৩, মাশরাফি ০/৩৩, রুবেল ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ১/৩৮, সৌম্য ১/১৯)।

ফল: বাংলাদেশ ৩৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম

/ এআর /