পোগবার নেতৃত্ব কেড়ে নিলেন মরিনহো
প্রকাশিত : ১২:২৮ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:০৪ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
ক্রিকেটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বনাম গুরু গ্রেগ চ্যাপেল। বিরাট কোহলি বনাম কোচ অনিল কুম্বলে। ফুটবলে স্যর আলেক্স ফার্গুসন বনাম ডেভিড বেকহ্যাম।
মহাতারকা বনাম কোচ সংঘাতের নতুন এপিসোডের মঞ্চ এবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে ক্রীড়া দুনিয়ায়। জোসে মোরিনহো বনাম পল পোগবা- ঠাণ্ডা লড়াই চলছিলই। উত্তাপ বেড়ে যায় কারাবাও কাপে ম্যান ইউনাইটেড ডার্বির কাছে হারের পরে। পোগবাকে সেই ম্যাচে খেলাননি মোরিনহো। ম্যাচের শেষে কার্যত ম্যানেজারের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার মন্তব্য করেন, ‘ঘরের মাঠে আমাদের একটাই ট্যাকটিক্স হওয়া উচিত। আক্রমণ, আক্রমণ আর আক্রমণ।’ মোরিনহো যেহেতু রক্ষণাত্মক কোচ বলে পরিচিত, এই মন্তব্য আরও বেশি করে তাকে ক্ষুব্ধ করার কথা।
মোরিনহো সেই ম্যাচের আগেই সহ-অধিনায়কের পদ কেড়ে নেন পোগবার থেকে এবং সরাসরি তাকে জানিয়ে দেন, আর কখনও তিনি ম্যান ইউনাইটেডকে নেতৃত্ব দেবেন না। এই সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পরে এমন উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ক্রমশ তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, পোগবা এবং মোরিনহোর এক সঙ্গে থাকা প্রায় অসম্ভব। যে কোনও একজনকে যেতেই হবে। শোনা যাচ্ছে, ম্যান ইউ শীর্ষ কর্তাদের প্রাথমিক সমর্থন আপাতত ম্যানেজারের দিকে রয়েছে।
এরই মধ্যে আগুনে ঘি ঢেলেছে বুধবার সকালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অনুশীলনের একটি ভিডিও। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে যা মুহূর্তে ‘ভাইরাল’ হয়ে গেছে। কী দেখা যাচ্ছে সেই ভিডিওতে? না, পল পোগবা প্রথমে ‘হাই ফাইভ’ করছেন দলের অন্যতম কোচ মাইকেল ক্যারিকের সঙ্গে। এর পর হাত মেলাচ্ছেন এক কর্তার সঙ্গে। ঠিক সেই সময়েই তার পাশে উপস্থিত হচ্ছেন জোসে মোরিনহো। আর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ছবিটাই সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। পোগবা একদম গম্ভীর হয়ে গেলেন। মোরিনহো কিছু একটা বললেন তাকে। পোগবার মুখের প্রতিক্রিয়া দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মোটেও প্রসন্ন হওয়ার মতো কিছু শোনেননি ম্যানেজারের থেকে। এর পর মোরিনহো হাত নেড়ে পোগবাকে অন্যদিকে যেতে বললেন। পোগবা গেলেন কিন্তু দেখে মনে হল, নিতান্ত বাধ্য হয়েই গেলেন। হাত নেড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতেও দেখা গেল তাকে। এক বার পোগবাকে পাল্টা প্রশ্ন করার ভঙ্গিতে মোরিনহোকে জিজ্ঞেস করতে শোনা গেছে, ‘কে, আমি?’ অনুশীলনে যে বেশ তর্কাতর্কির সুর ছিল, সেটা ভিডিও থেকে পরিষ্কার।
মোরিনহোর সঙ্গে অতীতেও ফুটবলাদের ঝামেলা হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদেই যেমন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। চেলসি থেকেও তাকে সরে যেতে হয় কার্যত ফুটবলারদের বিদ্রোহের মুখে। এর পরেই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের ‘স্পেশ্যাল ওয়ান’ যোগ দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও তার সঙ্গে ফুটবলারদের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা অব্যাহত। পোগবাকে নিয়ে তৈরি হওয়া জট সেই আলোচনায় আরও মশলা যোগ করবে, সন্দেহ নেই।
মোরিনহো যদিও দাবি করেছেন, ‘সিদ্ধান্তটা আমিই নিয়েছি। ও আর আমাদের সহ-অধিনায়ক থাকবে না। তবে আমাদের মধ্যে কোনও ঝগড়া বা অন্য কোনও সমস্যা হয়নি।’ তা হলে কেন এমন সিদ্ধান্ত? পর্তুগিজ কোচের সাফ কথা, ‘আমিই ম্যানেজার। আমি এমন সিদ্ধান্ত নিতেই পারি।’ তবে পোগবার সঙ্গে তার কোনও ঝামেলা নেই জাতীয় মন্তব্য কেউ বিশ্বাস করছে না। বরং গবেষণা শুরু হয়ে গেছে, এই ঝামেলার বলি হয়ে কে বিদায় নেবেন? পোগবার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে মেসির বার্সেলোনা। গত বছর সেই সওদায় রাজি হয়নি ম্যান ইউ কর্তৃপক্ষ। এবারে ম্যানেজারকে ধরে রাখতে কি পোগবাকে ছেড়ে দেওয়া হবে?
সহজে এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারছেন না। কারণ পোগবা সবে বিশ্বকাপ জিতে ফিরেছেন। বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে দারুণ ফুটবলও খেলেছেন। তাকে ছেড়ে দেওয়া মানে ম্যান ইউয়ের হাত থেকে এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা এক ফুটবলার বেরিয়ে যাওয়া। আবার পোগবাকে রাখা মানে মোরিনহোর অবস্থান কঠিন হয়ে গেল। তখন সেটা মেনে নিয়ে তার পক্ষে থাকা কার্যত অসম্ভব হয়ে যাবে। এর মধ্যেই ম্যান ইউ কর্তারা বলতে শুরু করেছেন, ‘ভক্তদের কাছে একমাত্র প্রাধান্য পায়, ম্যাচের ফলাফল। আমাদের ম্যাচ জিততে হবে।’ মোরিনহো যে খুব বেশি জয়ও উপহার দিতে পারেননি, সেটা তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। গুরুতর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তার অধীনে ড্রেসিংরুম সংহতি নিয়েও।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মোরিনহো বনাম পোগবা, অনেক নাটক এখনও বাকি!
সূত্র: আনন্দবাজার
একে//