নীতিমালা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি
বন্ধ হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষকদের রাজনীতি
তবিবুর রহমান
প্রকাশিত : ০৪:১৬ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৭:০৭ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার
দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবশে নিশ্চিত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের রাজনীতির বাইরে রাখার চিন্তা করছে সরকার। ইতোমধ্যে এ বিষয় একটি নীতিমালা তৈরি করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এমনকি এ উদ্যোগকে নীতিগত সমর্থন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতিক দলের বড় বড় পদধারী নেতারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। এতে করে এসব শিক্ষকরা পাঠদানে ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে পারছেন না। ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
এমন প্রেক্ষপটে এমপিওভূক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক- কর্মচারীদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পথ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষকদের পাঠদান ব্যাতিরেকে সার্বক্ষণিক রাজনীতি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসছে। রাজনৈতিক পদ পদবির কারণে কেউ কেউ ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও পাঠদানে সময় দিতে পারছেন না। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরাসরি শিক্ষকদের রাজনীতি বাইরে রাখতে চাইছে সরকার।
সূত্রমতে, গত ২৯মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকরি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো বিধি-বিধান না থাকায় তারা অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ায় সার্বক্ষণিক রাজনীতি করেন।
ফলে তারা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ততটা আগ্রহী হন না। মাঠ পর্যায়ে এসব শিক্ষকের চাকরি নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে।
এ বিষয় জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষার নাম উন্নয়ন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছে। এছাড়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেক শিক্ষক বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ দানে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেই চিন্তা মাথায় রেখেই সরকার এমন উদ্যোগ নিয়েছে।
ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ থেকে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্তে নীতিমালার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আইনের সারসংক্ষেপসহ চূড়ান্ত করা খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে নীতিমাল তৈরি করা হবে।
এছাড়া অভিযোগসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ফেব্রুয়ারি মাসের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন মিলেছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসার পর গত ৩০ এপ্রিল বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বলেছে।
এছাড়া এমপিওভুক্তসহ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষক সরাসরি রাজনীতিক দলের পদে আছেন। শিক্ষকতা মহান পেশা হলেও পাঠদানে তাদের মনোযোগ নেই। অনেক শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের শিক্ষক নেতারা এলাকার সালিশ মীমাংসা নিয়ন্ত্রণ করেন। বাজার কমিটি, অটোরিকশা সমিতিসহ বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত সংগঠনে তারা যুক্ত হয়ে সুবিধা নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকরা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত থাকার ফলে তাদের কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেন না সাধারণ শিক্ষকরা। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে দশবার চিন্তাভাবনা করে নেয়। রাজনৈতিক দলের পদ-পদবী থাকায় ক্ষমতাবানদের সঙ্গে ওঠাবসা থাকে। ফলে, তারা শ্রেণিকক্ষে অথবা প্রতিষ্ঠানে সময় দেন না।
টিআর / এআর