ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

‘কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করলে চাকরি সহজ হবে’

প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে শিক্ষার্থী, চাকরি মিলছে না। স্নাতকোত্তর পাশের পর তিন থেকে চার বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। করতে হচ্ছে কোচিংও। তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গলদটা আসলে কোথায়? অন্যদিকে দেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের বা জনসংখ্যার বোনাস যুগ অতিবাহিত করছে। যেখানে দেশের বেশির ভাগ মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু কতটা কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে সে কর্মক্ষমের সুযোগ? এসব প্রশ্নের সুলোক সন্ধানে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক আলী আহসানের। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাটা অনেকটা পাঠ্যবই নির্ভর। পাঠ্য বইয়ের বাইরেও যে একটা জগত আছে সেটা ছাত্রদের বোঝার সুযোগ রাখতে হবে। পৃথিবীর পরিবর্তীত চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্য বই তৈরি করতে হবে। পাঠ্য বইয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব খাত বেশি গুরুত্ব পায় সেগুলো সন্নিবেশ  ঘটাতে হবে। একজন ছাত্র শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরিতে ঢুকলে যে অভিজ্ঞতা দরকার সেটা শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তার সঠিক নম্বর বা মূল্যায়ন থাকতে হবে। অর্থাৎ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার নানাদিক  ছাত্রদের পাঠ্য বইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করলে চাকরি পাওয়া সহজ হবে।

দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটির শেষ পর্ব আজ পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশে কোচিংয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বাণিজ্যের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? 

আলী আহসান: পৃথিবীর সব দেশেই প্রাইভেট সেক্টরে শিক্ষা ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেও আছে। এটা দোষের না। তবে প্রাইভেট সেক্টরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ৫ কোটি টাকা ইমভেস্ট হচ্ছে তাই ইচ্ছামত লাভ করতে হবে এই সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। এখানে অনুমোদন দিতে হবে ডেলিগেটেড পার্সনকে। কিন্তু যাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হলো তিনি যদি মানবিক বা ডেলিগেটেড না হয়, তিনি তো শুধু লাভের বিষয়টি-ই দেখবে। এখানে ইউজিসি অনেকটা ঠুটো জগন্নাথ হিসেবে কাজ করে। কারণ তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। ইউজিসি’র চোখে খারাপ দেখলে তারা শুধু মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে পারে। এখন মন্ত্রণালয় যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধে কোন পদক্ষেপ না নেই, তবে ব্যবসা তো চলবেই। কারণ আমাদের দেশটা মুক্তবাজার অর্থনীতির।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে অনেকটাই সনদনির্ভর। দেশপ্রেম, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এগুলোর চর্চার অভাবে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী দেশের সম্পদ হওয়ার পরিবর্তে অভিশাপে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

আলী আহসান: আমাদের যে শিক্ষানীতি হয়েছে- আমি যদি ভুল না বলে থাকি, কেন জানি ইচ্ছা করে শিক্ষাকে নষ্ট করা হচ্ছে। আমাদের কখনও সৃজনশীল, কখনও প্রশ্নব্যাংকের নামে শুধু অভিজ্ঞতাই নিয়ে যাচ্ছি। এখনও আমাদের সারা দেশের উন্নতির জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিতে যেতে পারিনি। আমরা বাহিরের দেশকেও অনুস্মরণ করছি না। আবার নিজস্বতাও রক্ষা করছি না। যদিও সৃজনশীল  আনলাম বাহির থেকে। তারপও সেটা  প্রকৃত সৃজনশীল হিসেবে কাজে লাগাতে পারলাম না। সৃজনশীলে দেখা যাচ্ছে বাহির থেকে একটা প্যারা দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন সেই পাঠ্য বইয়ের গধবাঁধা নিয়েমেই হচ্ছে। যেখানে শিক্ষকদেরও দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষার এ পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বের হয়ে আসা যায়? কিভাবে শিক্ষাকে কর্মমৃখী করা যায়?

আলী আহসান: শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রাইমারি লেভেল থেকে ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নামের প্রশিক্ষণ দিলে হবে না। দিতে হবে কার্যকরি প্রশিক্ষণ। আমাদের শিক্ষাকে শুধু পাঠ্যবই মুখী রাখলে হবে না। এটাকে বহির্মুখী করতে হবে। অর্থাৎ খবরের কাগজ থেকেও ছাত্রদের প্রশ্ন আসতে হবে। অযাচিত প্যারাগ্রাফ দিয়েও তাদের প্রশ্ন করতে হবে। তবেই ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার পরিধি সংকীর্ণ থাকবে না। তারা ব্যাপকভাবে শিক্ষা নিতে পারবে। দেশ ও দেশের বাইরের পরিস্থিতি ও চাকরির বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী গড়ে উঠতে পারবে।

 

এসএইচ/