জাতীয় ঐক্যে অন্তঃকোন্দল, নেপথ্যে নেতৃত্ব নাকি জামায়াত?
একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৭:০৬ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৩:৪৫ পিএম, ১ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার
ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচনের দিনকাল। দিন যতই এগোচ্ছে, দেশের রাজনীতিও ততটাই উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি বড় ধরণের সমাবেশ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চলেছে। থেমে নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও। দলটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রাজপথের লড়াইয়ে নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দেশের দুই প্রধান বিরোধীদল যখন পরষ্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে দাঁড়িয়ে, তখন শুকতারার মতো জ্বলে উঠলো ‘প্রথিতযশা ‘ রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ভূইফোঁড় সংগঠনের নেতাদের প্লাটফরম ‘জাতীয় ঐক্য‘। তবে এরইমধ্যে জাতীয় ঐক্যে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। নেতৃত্ব নিয়ে সঙ্কোচ, সন্দেহ, সরকারের কৌশল আর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত নিয়ে অসন্তোষের কারণে শেষ পর্যন্ত ‘জাতীয় ঐক্য‘ আলোর মুখ দেখবে বলে মনে করছেন না অনেকেই।
তবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মূল বাধা জামায়াতে ইসলামী। তবে আরেকটি অংশ মনে করছে ঐক্য প্রক্রিয়া ‘বানচালের‘ মূল কারণ হতে পারে দলের মূল নেতৃত্ব। আর মূল নেতৃত্বকে কেন্দ্র করেই হোঁচট খেতে পারে ‘জাতীয় ঐক্য‘ এমনটাই মনে করছেন দেশের রাজনীতিক সচেতনরা। অন্যদিকে বলা হচ্ছে, এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপির অবস্থান কেমন হবে তাও একটি ফ্যাক্টর। জামায়াত ইস্যুতে বিএনপি কতটুকু ছাড় দেবে বা জামায়াতকে ত্যাগ করবে কি না, সেটা ঐক্য প্রক্রিয়াকে ভাবিয়ে তুলছে বলে মনে করছেন অনেক নেতাকর্মী।
জানা গেছে, শুরু থেকেই বিকল্পধারা সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে সন্দেহ রয়েছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরই বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে প্রেসিডেন্ট মনোনীত করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি। তবে নভেম্বরে দায়িত্ব দেওয়ার পরই পরের বছর অর্থাৎ ২০০২ সালের জুন মাসে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে খালেদা জিয়ার সরকার। জামায়াত ইস্যুতে কট্টর অবস্থান ছাড়াও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় প্রবীণ এই নেতার। এরপর থেকেই বদরুদ্দোজা ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান পরিবর্তন হয়। বিএনপির দলীয় নীতি নির্ধারক তারেক রহমানেরও কট্টোর সমালোচক এই বদরুদ্দোজা চৌধুরী। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের পরেই তারেক রহমানের হাওয়া ভবনসহ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হন প্রথিতযশা এ রাজনীতিক। আর এসব কারণেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী ইস্যুতে আস্থা রাখতে পারছে না দলীয় হাইকমান্ড।
এদিকে বিএনপি যেমন বদরুদ্দোজা চৌধুরীর উপর আস্থা রাখতে পারছে না, তেমন বিকল্পধারার হাইকমান্ডও বিএনপির উপর আস্থা রাখতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তারা বর্ম বানিয়েছে জামায়াত ইস্যুকে। দলটির যুগ্মমহাসচিব ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকল্পধারার পক্ষ থেকে আমরা রেজুলেশন নিয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল বা ব্যক্তিকে শরিক রাখলে বিএনপিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যাবে না।‘
অন্যদিকে যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ঐক্যের ভিত্তি ভারসাম্যের ভিত্তিতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্রকে এখনো অস্বীকার করে, তাদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সবার সঙ্গে আমরা ঐক্য কামনা করি। বি চৌধুরী আরও বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপি ও আমরা অনেক কাছাকাছি এসেছি।
এদিকে বিএনপি-বিকল্প ধারা যখন পরষ্পর মুখোমুখি, তখন এই ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্য নীতি-নির্ধারকরা আস্থা রাখছেন দুই নেতার উপরই। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যের প্রধানের পদে বদরুদ্দোজা চৌধুরী অথবা গণফোরাম সভাপতি ও প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের-যে কেউ প্রধান হলে আপত্তি নেই অন্য দলগুলোর। সে ক্ষেত্রে লিঁয়াজো করছেন জেএসডি সভাপতি আ. স. ম আব্দুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আরও কয়েকজন নেতা। এ দিকে লিঁয়াজো কমিটি গঠনের কথা থাকলেও, বিএনপির গ্রিন সিগনালের দিকে চেয়ে আছে নাগরিক ঐক্য। আজকের জনসভার পরই লিঁয়াজো কমিটির বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরবেন বিএনপির নেতারা, এমনটাই জানা গেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের সোমবারের বৈঠকে যোগ দেননি বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। অন্যদিকে গতকাল রাতে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাড়ির বৈঠকে যাননি ড. কামাল হোসেন। দুজনই আলাদাভাবে বলেছেন, শরীর খারাপের জন্য তারা বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। এর আগেও বেশ কয়েকটি বৈঠকে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে উপস্থিত হননি এই দুই নেতা। বৈঠকে একজন উপস্থিত থাকলে, অন্যজন থাকছেন অনুপস্থিত। এতেই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় কোন্দলের বিষয়টি সামনে উঠে আসে।
তবে অনেকেই বলছেন, ঐক্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে আরও একটি কারণে। জাতীয় নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়েও এই ঐক্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির কাছে দেড়শোর মতো আসন চায় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া দলগুলো, যা বিএনপির জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে জামায়াত ও জানিয়ে দিয়েছে তারাও নির্বাচনে শতাধিক আসন চায়। এ কারণেও জাতীয় ঐক্য ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এমজে/