সোনাগাজীর পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ভবন নির্মাণ না হওয়ায় মক্তবে পাঠদান
ফেনি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০৬:০৫ পিএম, ১ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার
সোনাগাজীতে চর চান্দিয়া ইউনিয়নের নদী উপকূলীয় দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা দ্বিতল ভবনটি ২০১১ সালে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নতুন ভবন নির্মাণের আশায় থেকে জোড়াতালি দিয়ে পাশের একটি মক্তবঘরে চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা থাকায় স্থানীয়দের উদ্যোগে এক কক্ষ বিশিষ্ট মক্তব ঘরের মাঝখানে বেড়া দিয়ে করা হয়েছে দুটি কক্ষ। এখন মক্তব ঘরটিই ওই এলাকার শিশু শিক্ষার একমাত্র মাধ্যম।
জানা যায়, ১৯০০ সালে দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া গ্রামের স্থানীয় হোসেন আহম্মদ নামে এক ব্যক্তি ৩৩ শতক জমি দান করেন স্কুলের জন্য। ওই জমির ওপর টিন আর বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়টি চালু করা হয়। আট-দশ বছর পর টিনের ঘরটি জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা পুনরায় ঘরটি সংস্কার করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হলে নতুন ঘর ও পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনটি গত ২০১১ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয় ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও শিক্ষাজীবন থমকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় স্থানীয়রা কোনমতে আপাতত পাঠদান চালিয়ে যাবার জন্য ওই মক্তবের একটু সংস্কার করা হয়।
বিদ্যালয়টির নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় নানা সমস্যার মধ্যে পাশ্ববর্তী সড়কের ওপর থাকা একটি ফোরকানীয়া মক্তবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। সেখানেও কক্ষ সংকট থাকায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির পাঠদান এক সঙ্গে আর দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় সকাল বেলা তাদের শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। এদের ছুটি শেষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি কক্ষে বসে ক্লাস করে। অপর কক্ষটিতে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলে। একটি কক্ষে দুই শ্রেণির পাঠদান এক সঙ্গে হওয়ায় দুইজন শিক্ষকও এক সঙ্গে কাজ করে থাকে। এতে উভয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ ভালভাবে বুঝতে ও লিখতে অসুবিধা হয়ে থাকে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে প্রয়োজন নতুন ভবন ও কক্ষের। বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সীমাহীন কষ্ট করে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা এ্যানি জানায়, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় তাদেরকে মক্তবে লেখা-পড়া করতে হচ্ছে। ঘরটিও বেড়াগুলো ভালো না হওয়ায় বৃষ্টি হলে পানি পড়ে তাদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় পাঠদান চলাকালে জোয়ারের পানি ডুকে তাদের জামা-কাপড় ভিজে লেখা-পড়াসহ বাড়ি যেতে অনেক অসুবিধা হয়। এছাড়াও এখানে নেই কোন মানসম্মত টয়লেট। আবার কখনো কখনো জোয়ারের পানি ঢুকে টেবিল চেয়ার সব ভিজে গেলে সেদিন ক্লাশ ছুটি হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.ইব্রাহিম ভূঁঞা বলেন, এক সময় স্কুলটিতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিলো। ভবন ও নানা সমস্যার কারণে বিত্তবান অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাশের ইউনিয়নের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলে মেয়েরাই এখন এই স্কুলের শিক্ষার্থী। বর্তমানে স্কুলটিতে দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধের পর বিদ্যালয়ের আগের জায়গায় চর জেগে ওঠেছে। ওই স্থানে সরকারিভাবে বিদ্যালয়ের তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মানের জন্য সরকারিভাবে প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে কিছুদিন যাওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সৈয়দ আহম্মদ বলেন, বিদ্যালয়ের বন্ধ হওয়া কাজটি পুনরায় চালু করার জন্য তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়ে বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন সমাধান পাননি। পাশের একটি জায়গায় স্কুল ঘর নির্মাণের জন্য মাটি ভরাটের পর থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে গেছে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী এএনএম মনির উদ্দিন আহম্মদ বলেন, সোনাগাজীতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এক প্রকল্পে প্রায় ২৯ কোটি ১৮লাখ টাকা ব্যয়ে সাতটি আশ্রয় কেন্দ্র কাম বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের জুন মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সাতটি ভবনের মধ্যে দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ছিল। দরপত্রের শর্তানুযায়ী সাতটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের এসএস এ ই জয়েন্ট বেঞ্জার নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার বিভাগকে। ২০১৭ সালে সালের মাঝামাঝি সময়ে আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মাটি কাটা শুরু করেছিল। কিন্তু মাটি কাটা শেষে তারা হঠাৎ কাজ বন্ধ করে কেন চলে গেল তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, একাধিক বার জানতে চেয়েও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম বলেন, যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছে তাদেরকে অবশ্যই নির্মাণ কাজ করতে হবে। অন্যথায় তাদের বিল প্রদান বন্ধ করনসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, নদী উপকূলীয় হওয়ায় ওই এলাকায় বিদ্যালয়টির জন্য ভবন নির্মাণ করা অতীব জরুরি। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এসএইচ/