আমি কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করি না: ইলিয়াস কাঞ্চন
প্রকাশিত : ০৮:৩০ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৮:৩৩ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার
সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে কাজ করতে গিয়ে আমি কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করিনা। আমাকে কি কারণে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো তা আমার বোধগম্য নয়। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর ২৫ বছর পর এসে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
বিভিন্ন বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্তৃক অবাঞ্ছিত ঘোষণার প্রতিবাদে সোমবার দুপুর ২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘প্রথমেই বলতে চাই আমার এবং আমার সন্তানদের জীবনের স্পর্শকাতর ঘটনা- ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রীর জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যু। ২৫ বছর পর এসে আমার স্ত্রীর এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্তৃক ভুল তথ্য দিয়ে নাটক সাজানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের বরাত দিয়ে সংবাদে লেখা হয়েছে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে আমার নিজস্ব গাড়িতে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে ঐদিন জাহানারা কাঞ্চন (আমার স্ত্রী) হোটেল সোনারগাঁও থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে দুই সন্তানকে সাথে করে বান্দরবানে আমার স্যুটিং স্পটে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে চট্টগ্রামের অদূরে চন্দনাইশ পেরিয়ে পটিয়ার কাছাকাছি একটি ট্রাকের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সেদিন গাড়িতে অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানও ছিলেন। পুরো দেশবাসী ঘটনাটি জানেন। প্রশাসন থেকে বিভিন্ন অনুসন্ধানেও ঘটনাটি উঠে এসেছিল। আমি এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দকে আহবান জানাচ্ছি। তাদের উদ্দেশ্যে আরও বলতে চাই আমার দরজা তাদের জন্য সবসময় খোলা। তারা আমার প্রতিপক্ষ নন, যে কোনো সময় তারা আমার সাথে আলোচনা করতে পারেন।’
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘আমাকে কেন অবাঞ্ছিত করা হয়েছে তা প্রকাশিত সংবাদে উঠে আসেনি। তবে এ ঘটনা নতুন নয়। ২০১২ সালে শহীদ মিনারে পরিবহন মালিক শ্রমিক সমাবেশে আমার ছবিতে জুতার মালা পরনো হয়েছিল, আমার ছবি পোড়ানো হয়েছিল। এমনকি রাজধানীর কুড়িল রেলক্রসিং-এ দাঁড়িয়ে থাকা আমার গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে আমার উপর আক্রমণের প্রয়াসও চলেছিল। এমনকি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় খুলনা এবং ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেপথ্যের নায়ক উল্লেখ করে আমার ছবি পোড়ানো হয়েছিল। তখন আমি বিষয়টি জানার পরেও আপনাদের বলিনি সকলের মঙ্গলের কথা ভেবে। এমনকি এসব ঘটনায় আমি বিচলিতও হইনি। নিজেকে নিয়ে চিন্তিতও নই। আমি চিন্তিত সড়ক নিয়ে, সড়কের মানুষকে নিয়ে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমরা প্রচণ্ড আশাবাদী বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে যে ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে সরকারের প্রতিটি সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনারোধে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ে সেধরনের কর্মসূচিতে আরও বেশি করে উদ্যোগী হয়েছে। আমি মনে করি এ জন্য সরকারি, বেসরকারি এবং সকল সামাজিক সংগঠন বিশেষ করে রোড সেফটি বিষয়ে কাজ করছেন সে সকল সংগঠনকে জনগনের মানসিকতা পরিবর্তনের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালনে আরও তৎপর হয়ে উঠতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুজ্জামান, মহাসচিব সৈয়দ এহসান-উল হক কামাল, যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ, যুগ্ম মহাসচিব বেলায়েত হোসেন নান্টু, যুগ্ন মহাসচিব লায়ন গনি মিয়া বাবুল, অর্থ সম্পাদক নাসিম রুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসাইনসহ আরও অনেকে।
এসি