দেশে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান আবু নোমান হাওলাদার
প্রকাশিত : ০৫:১৪ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৫:৩০ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার
দেশের ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রি খাতের পরিচিত নাম বিবিএস ক্যাবলস। ২০০৯ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে স্বল্প সময়েই দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্যাবল উতপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিত করতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটির। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নোমান হাওলাদার দেশের অর্থনীতিতে রেখে চলেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তারই স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মনোনীত হয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ ‘সিআইপি’ পদবীতে। তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না আবু নোমান হাওলাদার। বিবিএস ক্যাবলকে নিয়ে যেতে চান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে। সেই সাথে দেশে আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে চান তিনি। ইটিভি অনলাইনের সাথে বিশেষ এক সাক্ষাতকারে এসব কথা জানিয়েছেন সিআইপি আবু নোমান হাওলাদার। সাক্ষাতকার নিয়েছেন ইটিভি অনলাইনের সহ সম্পাদক শাওন সোলায়মান।
ইটিভি অনলাইনঃ শুরুতে বিবিএস ক্যাবলস নিয়েই জানতে চাইব আপনার কাছে। বিবিএস ক্যাবলসের পণ্য বিদেশে রপ্তানী হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পারি। কবে নাগাদ এই রপ্তানী শুরু হবে?
আবু নোমান হাওলাদারঃ এই বছরই আমাদের পণ্য বিদেশে রপ্তানী হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। তবে সেখান থেকে কিছুটা পিছিয়ে আসতে হয়েছে আমাদেরকে। ২০১৯ সাল নাগাদ অথবা ২০২০ এর শুরুতে আমরা বৈদেশিক বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানী করতে পারব বলে আশা করছি।
তবে এই পিছিয়ে আসার পেছনে একটি কারণ আছে। আমরা যা দেখলাম যে, আমাদের দেশের বাজারেই এখনও যে পরিমাণ চাহিদা আছে সেখানে এখনও আমাদের প্রতিযোগিতা রয়েছে। এখন বাজারে আমাদের অবস্থান দুই-এ। আমাদের লক্ষ্য এক নম্বর অবস্থানে আসার। যদি এক নম্বর নাও হয়, দেশের বাজারে সন্তোষজনক অবস্থান তৈরি করে তবেই আমরা বিদেশের বাজারে যাত্রা করবো।
ইটিভি অনলাইনঃ বিদেশের বাজার হিসেবে প্রাথমিকভাবে আপনাদের লক্ষ্য কোন কোন দেশ?
আবু নোমান হাওলাদারঃ বিদেশের বাজারে আমাদের অন্যতম লক্ষ্য ইউরোপের বাজার। তবে প্রথমত আমাদের তালিকায় আছে আফ্রিকার বাজার। দ্বিতীয়তে মধ্যপ্রাচ্য। আর সবশেষে আমরা ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করতে চাই। ইউরোপের কিছু কিছু দেশ আছে যেখানে নিজেদের বড় কোন ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রি নাই। যেমন ফিনল্যান্ডে ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রি আছে মাত্র দুইটি। এটির মধ্যে সবথেকে বড় যেটি সেটিও আমাদের বিবিএস ক্যাবলসের থেকে আকারে এক-তৃতীয়াংশ।
ইটিভি অনলাইনঃ এক্ষেত্রে আপনাদের জন্য প্রতিবন্ধক কী হতে পারে?
আবু নোমান হাওলাদারঃ ইউরোপের বাজারে পণ্য উতপন্ন করে তা বাজারজাত করলে আমরা ভালো করতে পারবো না। এক্ষেত্রে আমাদের এখান থেকেই পণ্য উতপন্ন করে সেখানে রপ্তানি করতে হবে। সেক্ষেত্রে চীন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রাথমিকভাবে আমরা চাই, চীনের পরবর্তী সোর্স হিসেবে ইউরোপ বা আফ্রিকা আমাদের বাজার থেকে পণ্য নিক।
ইটিভি অনলাইনঃ সামনের সময়গুলোতে বিশ্ববাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজার কেমন এবং সেইসাথে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু?
আবু নোমান হাওলাদারঃ আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের জন্য সামনের দিনগুলো বেশ সম্ভাবনাময়ী। কিছু কিছু জায়গায় উন্নতি করতে পারলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তৈরি পোশাক খাত এবং অন্যান্য আরও কিছু পণ্য রপ্তানী করে আমরা আমাদের সক্ষমতা দেখিয়েছি। যে জায়গাগুলোতে সমস্যা আছে সেগুলোতে উন্নতি করতে পারলে নতুন ক্ষেত্রগুলো থেকেও ভালো কিছু আসবে। যেমন সড়ক যোগাযোগ, ইলেকট্রিসিটি এবং অন্যান্য শক্তি ও জ্বালানীর জোগান, কাস্টমস জনিত সমস্যা এবং আইনশৃংখলা রক্ষায় আরও ততপর হওয়া। এগুলোর মধ্যে বিদ্যুতের সমস্যা এখন অনেকখানিই সমাধান হয়েছে।
একুশে টিভি অনলাইনঃ এক্ষেত্রে আমাদের দেশের জনশক্তিকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি?
আবু নোমান হাওলাদারঃ আমাদের দেশের জনগণ কিন্তু আসলেই আমাদের জন্য এক বড় শক্তি। আমাদের জনগণের মধ্যে সবথেকে ভালো যে বিষয় তা হলো তারা কিছু না কিছু করতে চায়। তাদের মধ্যে ভোগ-বিলাসিতা কম। যা তারা আয় করে তার থেকে প্রয়োজনীয় খরচের পাশাপাশি সঞ্চয়ের মানসিকতাও আছে। তবে আমাদের মাঝেই আবার কিছু নেতিবাচক দিক আছে। বলতে খারাপ শুনায় তবুও আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যাদের আচরণগত সমস্যা আছে। আচরণগত সমস্যা বলতে আমি বোঝাচ্ছি যে, শক্তি-সামর্থ্য থাকতেও কারও কারও মধ্যে ফাঁকি দেওয়ার একটা প্রবণতা আছে। এগুলো কমাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
ইটিভি অনলাইনঃ একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। অতি সম্প্রীতি আপনাকে সিআইপি মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। আপনার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার বা রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে আপনার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেলো। এ বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
আবু নোমান হাওলাদারঃ সিআইপি হওয়া অবশ্যই সম্মানের। বাংলাদেশ সরকার আমাকে সিআইপি মনোনীত করেছে। এটা রাষ্ট্রীয় একটা স্বীকৃতি। আমি সম্মানিত এবং গর্বিত বোধ করি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আমার এবং আমার প্রতিষ্ঠানের যে ক্ষুদ্র অবদান, জনগণের জন্য যে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছি তার একটা স্বীকৃতি। আমি সরকারকে যে ট্যাক্স বা ভ্যাট প্রদান করি তার একটা স্বীকৃতি। সবকিছু মিলিয়ে এটা একটা অনুভূতি দেয় যে, হ্যাঁ, আমি কিছু একটা অর্জন করতে পেরেছি।
তবে আমি মনে করি, সিআইপি হওয়াতে আমার কর্ম উদ্দীপনাতে বা আচরণ এবং অভ্যাসগত কোন পরিবর্তন আসেনি। সেইসাথে আমি বলতে চাই, আমার এখন লক্ষ্য হচ্ছে নিজেকে কাজের সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা। আমার এই জীবদ্দশায় যতবেশি সম্ভব মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে কাজ করে যাব। এখন পর্যন্ত কাজ করতে পেরে আমার যে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা হয়েছে তা দেশের প্রয়োজনে সবার সাথে বন্টন করবো। ব্যবসায়িক খাতে আমি আরও অবদান রাখতে চাই। দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য আরও কাজ করতে চাই আমি।
ইটিভি অনলাইনঃ কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ যেহেতু আসলোই আপনার কাছে জানতে চাই যে, দেশে শিক্ষিত বেকার তরুণদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের যুগে থেকেও ক্যারিয়ার নিয়ে তরুণদের মধ্যে হতাশা দেখছি। বিশেষ করে প্রাইভেট খাতে ক্যারিয়ার গড়তে তরুণদের একরকম অনীহাই আছে বলা যায়। এই খাতে শুরুতে খুবই কম বেতনে চাকরি করতে হয়। এ বিষয়ে একজন চাকরিদাতা হিসেবে আপনি কী বলবেন?
আবু নোমান হাওলাদারঃ আমি আপনার প্রশ্নটা ধরতে পেরেছি। প্রথমত ‘কোয়ালিফাইড লোকজন’- এই জায়গাটায় আমার আপত্তি আছে। আমাদের বিবিএস ক্যাবলস প্রতিষ্ঠানে তো প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ইন্টারভিউ বোর্ডে আমি থাকলে একজন স্নাতক পাস করা ইঞ্জিনিয়ার ব্যক্তিকে আমি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ইন্টারভিউ নেই। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার কোন ব্যক্তি যদি ইন্টারভিউতে আসেন তাহলে তাকে সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীর লেভেল ইন্টারভিউ নেই। মাস্টার পাস করা ইঞ্জিনিয়ার আসলেও এই লেভেলেই ইন্টারভিউ নেই।
আমি খুব হতাশ হই যখন দেখি একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বা মাস্টার্স পাস করা ইঞ্জিনিয়ার ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারেন না। বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা আসেন তাদের অনেক অনেক ঘাটতি আছে। বলতে কঠিন শুনায় কিন্তু এসব ছেলেদের বাবা-মা যদি ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকতেন তাহলে তারা কষ্ট পেতেন এই ভেবে যে, তাদের ছেলেমেয়ারা অনেক সহজ ও সাধারণ বিষয়ও জানেন না। বলতে পারেন যে, তাদের মধ্যে বেসিক বিষয়টাই নেই।
ইটিভি অনলাইনঃ এর কারণ কী এই যে, আমাদের শিক্ষা সেই অর্থে কর্মমুখী শিক্ষা নয়?
আবু নোমান হাওলাদারঃ আমি বলবে যে, আমাদের দেশের শিক্ষাদান পদ্ধতিতে কিছু সমস্যা আছে। বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু জায়গায় ঠিকমতো পড়ানো হয় না, ক্লাস হয় না। সে জায়গাগুলোতে উন্নতি দরকার। আমি বলবো যে আমাদের ছাত্ররা যথেষ্ট যোগ্য। আমরা হয়তো তাদেরকে ঠিকমতো শিক্ষাটা দিতে পারছি না। আর এটা মোটেই উচিত হচ্ছে না। আমরা একটা সার্টিফিকেট দিয়ে ছাত্রদের মাঝে একটা স্বপ্নের বীজ বপন করে দেই। কিন্তু তাদেরকে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তৈরি করি না।
ইটিভি অনলাইনঃ এই অবস্থায় তরুণদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
আবু নোমান হাওলাদারঃ আমি বলব যে, প্রথমত যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে সুনাম আছে সেগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি হতে হবে। এরপর পড়াশুনার সময়টা তাদেরকে মনযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে হবে। এখানে শর্টকাটের কোন সুযোগ নেই। যারা এই সময়টাতে পড়াশুনা করবে, পরিশ্রম করবে তারাই পরবর্তীতে ভালো করবে।
//এস এইচ এস//