ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

অনুরোধ সত্ত্বেও আইভি আপা সেদিন ট্রাকে উঠেননি : ড. মাহফুজা

প্রকাশিত : ০৭:৩৫ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১০:২৫ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

২০০৪ সালের ২১আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ ছিল। আমরা জানি, এদেশে মাঝখানে ( ২০০১-০৬) সন্ত্রাসের রাজনীতির উত্থান ঘটেছিল। সন্ত্রাস বিরোধী জনসমাবেশ করার জন্যই আওয়ামী লীগ সভা ডেকেছিল। সেই সমাবেশে আমি নিজেও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে নিজের কোন কাজে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় সমাবেশে যাওয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকেই ট্রাকের উপর ছিলেন। যে ট্রাকটিকে মঞ্চ বানানো হয়েছিল। অনেক নেতা আইভি আপাকে (মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ‍যিনি মাহফুজা খানমের বোন) বলেছিলেন ট্রাকে উঠে আসার জন্য।

কিন্তু আইভি আপা ট্রাকে উঠেননি। না বললেই নয়, আপার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি সব সময় সাধারণ নেতাকর্মীদের পাশে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তিনি সব সময় তার কর্মীদের সঙ্গে থাকতেন। এটা তার একটা আদর্শিক বোধ ছিল।

আপনারা জানেন, সমাবেশটি ছিল সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ। আর সেই সমাবেশেই বোমা ফেলা হয়। যে বোমা ফেলা হয়েছিল তা ছিল সেনাবাহিনী ব্যবহৃত বোমা।

যে দল এদেশে স্বাধীনতা এনেছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছিল সেই দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশুন্য করার জন্য এ হামলা চালানো হয়েছিল।

ওই দিন আমি সন্ধ্যায় টেলিভিশন দেখছিলাম। তখন এ ঘটনা জানতে পারি। আইভি আপা খুব স্মার্ট ছিলেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও টিপটাপ চলতেন। টিভির খবরে যখন আপাকে দেখানো হচ্ছিল তখন দেখলাম আপার চেহারায়, শাড়িতে প্রচুর রক্ত লেগে রয়েছে।

তাঁর পা দুটি উড়ে গিয়েছিল। আপাকে পরে সিএমএইচে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সিএমএইচে দেখা করতে পারিনি।

এখানে বলা হয়নি, আমরা ২০০০ সালে পেশাজীবী নারী সংগঠন করেছিলাম। আমি ছিলাম সেই সংগঠনের সভানেত্রী। ডা. দীপু মনি, শিরীন শারমীন সবাই সেই সংগঠনে জড়িত ছিল।

এ প্রজন্ম হয়তো জানে না, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নয়মাস আইভি আপা মনপ্রাণ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে বীরাঙ্গনাদের ডেলিভারি করানো, যুদ্ধ শিশুদের বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠানো, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া নারীদের কাউন্সেলিং করা সহ নানা কাজে তিনি তখন সক্রিয় ছিলেন।

আমরা কয়েকজন মিলে জাহাঙ্গীর গেইট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। এরপর আমাদেরকে আর যেতে দেওয়া হয়নি। এর কয়েকদিন পর তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন।

দেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আইভি রহমান ছিলেন পরিচিত মুখ। মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীকার আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন, নারী আন্দোলনে আইভি আপা ভূমিকা রেখেছিলেন। দেশের মানুষের জন্য আইভি আপা ছিলেন উদাহরণ।

আইভি অাপার হত্যা মামলার রায়ের জন্য আমাদেরকে চৌদ্দ বছর অপেক্ষা করতে হলো। আইভি অাপার দুই মেয়ে ও এক ছেলে চৌদ্দ বছর কেঁদেছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লু ভাই (জিল্লুর রহমান) ও অাইভি অাপার সংসারও অনুকরণীয়। তাদের স্বামী-স্ত্রীর বুঝাপড়া ছিল বেশ ভালো। দু`জনেই রাজনীতি করতেন। নিজ নিজ অবস্থা থেকে দু`জনেই বেশ অবদান রেখে গেছেন।

১৪ বছর পর মামলাটির রায় হলো। আমি মনে করি, বিচারক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করেছেন। এই রায় কার্যকর হোক সেই প্রত্যাশা আমি রাখছি। আমরা দীর্ঘদিন বিচারহীণতার সংস্কৃতিতে ছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক বিচার কার্য সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে আমিদেরকে সেই কলংক মুছিয়ে দিচ্ছে।

লেখক : ড. মাহফুজা খানম গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের ছোট বোন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

অা অা// এআর