ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

নারীসহ নিহত ২, পুলিশের নিয়ন্ত্রণে মাধবদী

প্রকাশিত : ০৮:৩৯ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৮:৪২ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

নরসিংদীর সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগীরথপুর এলাকার এক পাঁচতলা বাড়িতে গতকাল সকাল ১০টা থেকে ছয় ঘণ্টার অভিযান চালানো হয়। অভিযানে এক নারী ও এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাধবদী পৌর এলাকার ছোট গদাইর চর (গাংপার) মহল্লার একটি সাততলা বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থানকারীদের সমঝোতার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করছিল অভিযান পরিচালনাকারীরা।

সদরের বাড়িটিতে আড়াই ঘণ্টা ‘অপারেশন গর্ডিয়ান নট’ বা জটিল গেরো নামের ওই অভিযান চলার মাঝখানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী ভগীরথপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তিনি আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে আবারও বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সহকারী মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন, সিভিল সার্জন ডা. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

বিকেল ৪টার দিকে ভগীরথপুরে ছয় ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। তবে দুজন পুলিশের গুলিতে নাকি নিজেদের ঘটানো কোনো বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি সিটিটিসির প্রধান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযানে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আর ছোট গদাইর চরের অন্য জঙ্গি আস্তানায় আপাতত আমরা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান করেছি। আমরা সমঝোতার চেষ্টা করছি। যদি তারা রাজি না হয় তাহলে আমরা দিনের আলোয় অপারেশন শুরু করব।’

গতকাল সন্ধ্যায় শিবপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) সকাল ৭টায় মাধবদীতে অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা আছে।’

সূত্র মতে, নরসিংদীর দুই বাড়িতে দুই জঙ্গি আস্তানার খবর গোপন মাধ্যমে জানা যায়। সোমবার সন্ধ্যার পর পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় বাড়ি দুটি ঘেরাও করে ফেলে। সারা রাত বাড়িগুলো ঘেরাও রেখে পুরো এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরই মধ্যে পুলিশের সোয়াত টিম, এলআইসি টিম, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল, এন্ট্রি টেররিজম ইউনিট, র‌্যাব, বগুড়ার পুলিশ, সিআইডিসহ বিভিন্ন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রথমে বাড়ি দুটির অন্য সব ইউনিটের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে সকাল ৬টার দিকে ঘটনাস্থলের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি মাইকিং করে কাউকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পরই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দুই বাড়ির গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ও দুটি অ্যাম্বুল্যান্স এনে রাখা হয়।

সকাল ১০টার দিকে নরসিংদীর দুটি আস্তানা পরিদর্শন করেন সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম। এর পরপরই তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। তারা প্রথমে ভগীরথপুরের বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে জঙ্গিদের প্রথমে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। এর পরও ভেতর থেকে থেমে থেমে গুলিবর্ষণ করা হলে সিটিটিসি ও সোয়াত টিম প্রথমে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ, পরে গুলি চালায়।

এরই মধ্যে আইজিপি ঘটনাস্থলে আসেন এবং এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “নরসিংদীর ভগীরথপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গর্ডিয়ান নট’। তাদের প্রথমে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। এতে সাড়া না পাওয়ায় প্রথমে টিয়ার গ্যাসের শেল ও পরে গুলিবর্ষণ করা হয়। এ সময় তারাও পাল্টা গুলি করে।” আইজিপি ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর দুপুর আড়াইটার দিকে বেশ কয়েক রাউন্ড টানা গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা যায়। পরে সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান সেখানে অভিযান সমাপ্ত করে ছোট গদাইর চরে অভিযানের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। গদাইর চরের নিলুফা ভিলা নামের বাড়িটির মালিক আফজাল হোসেন বলে জানা গেছে।

আরকে//