বি. চৌধুরীর ওপর বিএনপির ক্ষোভের নেপথ্যে
প্রকাশিত : ০১:০৭ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০১:০৮ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া যখন দলের হাল ধরেন তখন তাঁকে সর্বাত্মক সহায়তা করেন বি. চৌধুরী। খালেদা জিয়ার পর বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা হিসেবে ভাবা হতো তাঁকে। জিয়াউর রহমানের সেই বিশ্বস্ত সহচরকেই রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেওয়ার মাত্র সাত মাস সাত দিনের মাথায় বিদায় নিতে হয়েছিল। কেন বি. চৌধুরীর ওপর আস্থা হারায় বিএনপি? এর কারণে উঠে এসেছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
বি. চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ২০০২ সালের জুন। ওইদিন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল জিয়াউর রহমানের এ বিশ্বস্ত সহচরকে।
বিএনপি সংসদীয় দলের সভা শুরু হয় ২০০২ সালের ১৯ জুন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তাঁর উপস্থিতিতে বিএনপি`র নবীন সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ওপর প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যারা তাঁর পক্ষে ছিলেন তাঁরা কথা বলতে পারেন নি বিরোধীদের দাপটে।
ওই সভায় তাদের ক্ষোভের বিষয় ছিল মূলত দু`টি। প্রথমত: রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না যাওয়া, আর দ্বিতীয়ত: জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা। এজন্য বিএনপির এমপিরা বি. চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইমপিচমেন্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আরও যেসব কারণে তাঁর ওপর আস্থা হারায় বিএনপি।
* জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদন না করা।
* রাষ্ট্রপতির বাণীতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ না করা।
* বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাকে মুন্সিগঞ্জে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতির ছেলে এবং সংসদ সদস্য মাহী বি. চৌধুরীর তোরণ নির্মাণ।
* রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন বক্তব্যে `বাংলাদেশ জিন্দাবাদ` ব্যবহার না করা, কারণ `বাংলাদেশ জিন্দাবাদ` বিষয়টি বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ধারণ করে।
* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমদকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর না করা।
অধ্যাপক আফতাব আহমদের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতর অনুমোদন করেছিল। রাষ্ট্রপতি সেই ফাইলে স্বাক্ষর না করায় পরবর্তীতে আফতাব আহমদকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক জিন্নাতুননেসা তাহমিদা বেগমকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
* রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন `বাংলাদেশ টেলিভিশনে` রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বেশি সময় পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তোলেন বিএনপির কিছু নেতা। এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির কভারেজ কমিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিটিভিকে বলা হয়েছিল - এমন খবর সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরণের ঘটনা আর কখনো ঘটেনি।
* তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য এক মাস আমেরিকায় অবস্থান করে দেশে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি কোন খোঁজ-খবর নেননি।
* দলের মনোনীত হয়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মি. চৌধুরীর নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়া।
* রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা ব্যয় বাড়ানো।
* সেনাবাহিনীসহ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেন রাষ্ট্রপতি।
* রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের বাইরে অধিক সংখ্যক জাতীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া।
* বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন নিয়ে সরকারের একটি মহল থেকে আপত্তি এলে তা পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তোলে।
২০০৬ সালে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমি রাষ্ট্রপতি হবার পরে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে আবেদন জানালো আমি যেন চ্যান্সেলর হিসেবে সেখানে ডিগ্রীগুলো দিতে যাই। আমি সেগুলো করেছি কিছুদিন পরে, একজন মন্ত্রী আমার কাছে এলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে বললেন যে, আমি যেন এত বেশি এক্সপোজড না হই অর্থাৎ এ ধরনের অনুষ্ঠান যেন আমি না করি।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের মন্তব্য
তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং বিএনপির সিনিয়র নেতা সাইফুর রহমান বলেন, স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। কিন্তু তিনি (বদরুদ্দোজা চৌধুরী) জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
বিএনপির তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব:) অলি আহমদ মন্তব্য করেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে যেতে হবে, নইলে তাঁর বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম তাকে প্রেসিডেন্ট বানানো ঠিক হবে না। আমার কথা ফলেছে।’
বিএনপি নেতা ও তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন এবং তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী নাজমুল হুদাও রাষ্ট্রপতির সমালোচনায় সরব ছিলেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আরো পড়ুন :রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বি. চৌধুরীর পদত্যাগ: কি ঘটেছিল তখন?
/ এআর /