ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

সাভারে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

সাভার সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৬:১৫ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

ঢাকার অদূরে ডা. জাফরউল্লা চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও এখানকার চিকিৎসকদের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালটির দুই প্যারামেডিক চিকিৎসককে আটক করেছেন থানা পুলিশ। এর আগে মঙ্গলবার রাতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় চাঁদাবাজি ও জমিদখলের অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আশুলিয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের হাসপাতালে এই নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

আটককৃতা হলেন- প্যারামেডিক চিকিৎসক শিল্পী খাতুন ও মনি আক্তার।

নিহত নবজাতকের বাবা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ফার্মেসি ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, গত ১৩ অক্টোবর প্রসব বেদনা জনিত সমস্যায় তার স্ত্রী লাইজু বেগমকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। এরপর কয়েক দফা আল্ট্রাসনোগ্রাম ও বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে প্রসূতি ও তার শিশু সুস্থ্য আছে বলে জানায় চিকিৎসকরা। কিন্তু মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর ওজন প্রায় সাড়ে তিন কিলোগ্রাম হওয়ায় তারা চিকিৎসকদের বারবার সিজার করতে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকরা তাদের কথায় কর্ণপাত না করে উল্টো তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করে বলেন- ডা. জাফরউল্লাহ সাহেবের অনুমতি ছাড়া কোনও অবস্থাতেই সিজার করা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা প্রকট হলে তারা আবারোও প্রসূতিকে সিজার করানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই সময় গাইনি ওয়ার্ডে কর্তব্যরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসক নাহিদ মোস্তাদির ও শাকিল তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে শিল্পী খাতুন, মনি আক্তার, জুয়েনা ও তাসলিমা নামে চার প্যারামেডিক চিকিৎসকসহ ছয় নার্স স্বাভাবিক প্রসবের জন্য তার স্ত্রীকে নিয়ে যায়। এরপর প্রসব বেদনায় দীর্ঘক্ষণ তার স্ত্রী উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে। ভোরে নবজাতক মারা গেছে বলে তাকে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিহত নবজাতকের মা লাইজু বেগম অভিযোগ করে বলেন, স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ওই সময় নার্স ও প্যারামেডিক চিকিৎসকরা দীর্ঘক্ষণ তার পেটে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে প্রচণ্ড ব্যথায় তিনি ছটপট করলেও তার কথা কেউ শোনেনি। এমনকি তার প্রসবের সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া কোনও চিকিৎসক ছিল না বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, চিকিৎসকদের অবহেলার কারণেই তার সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি। তাই এসব হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কারণে যাতে আর কোনও মাকে সন্তান হারাতে না হয় সে জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

তবে অভিযোগের সত্যতা জানতে যাচাই করতে পুলিশ ও সাংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কলাপসিবল গেইট ভেতর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এসময় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও গেইট খুলে না দেওয়ায় সেখানকার নিরাপত্তাকর্মী শফিকুলকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালটির গাইনি বিভাগের ইনচার্জ ডা. তামান্না দিলরুবা ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত না থাকলেও নবজাতকের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতাল কোনও প্রাইভেট ক্লিনিক না যে এখানে বেশি টাকার বিনিময়ে রোগীদের জিম্মি করে সিজার করব। ওই নারীর নরমাল ডেলিভারির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। তবে দুর্ঘটনাবশত তার নবজাতক মারা গেছে। যার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

তবে রোগীর মুমুর্ষূ সময়ে সিজার করানোর জন্য ডা. জাফরউল্লাহর অনুমতি কেন লাগবে সে ব্যাপারে কোনও সদোত্তর দিতে পারেননি এই চিকিৎসক।

এদিকে ঘটনার সময় গাইনি বিভাগে উপস্থিত দুই চিকিৎসক নাহিদ মোস্তাদির ও শাকিলকে হাসপাতালে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ জানান, প্রাথমিক তদন্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় দুই প্যারামেডিক চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বাকি অভিযুক্তদের নাম উল্লেখসহ থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

একে//