নারী নির্মাতার আত্মহত্যার চেষ্টা
প্রকাশিত : ১০:৩১ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১২:১১ এএম, ২০ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার
একজন নারী নির্মাতা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। আজ দুপুরে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ খবর জানিয়েছেন তিনি নিজেই। রাজধানী ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে এখন ভর্তি আছেন নাট্যনির্মাতা তাসলিমা মুক্তা। নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এই শহরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু নির্মম এই শহরে বেঁচে থাকার আশাটুকুও যখন নিভে যাচ্ছিল তখন আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেওয়ার চিন্তা করেন।
ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি তার কষ্টের কথা তুলে ধরেন। তিনি লিখেছেন, ‘অনেকের ভাষায় সুইসাইড করা মহাপাপ। কিন্তু যেখানে বেঁচে থাকাটাই কঠিন, সেখানে সুইসাইড করা পাপ না পুণ্য, হিসাবটা করে কে? কয়দিন থেকেই প্রচণ্ড ডিপ্রেসড। বিশেষ করে কাজ নিয়ে। চারপাশের অবস্থা নিয়ে। যদি সত্যি জানতাম একদিন এ অবস্থা হবে, তাহলে সত্যি শাহবাগে ফুল বিক্রি করা ভালো ছিল।’
মুক্তা আরও লিখেন, ‘আমারা যারা বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় কাজ করতে আসি, তাদের বেশির ভাগ ফ্যামিলি ঢাকায় থাকে না। এমনকি অনেকে সব ছেড়েই ঢাকা আসে। যেমন আমার ফ্যামিলি নেই। কেউ নেই, কিন্তু এই ১৪ বছরের সাত বছর এডি হিসেবে কাজ করে বাকি সাত বছর পরিচালনায় এসে কী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েছি, তা আমার মতো অনেকেই জানে। খাওয়া তো বাদ দিলাম, বাসা ভাড়া, সিকনেস শত কষ্ট করে একজন প্রডিউসার জোগাড় করার পর নাটক বানানো, কিছু সময় বিক্রি হয়ে যায়, কিন্তু প্রডিউসারকে টাকা দিতে চ্যানেল দেরি করে। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব, আমার চেয়ে খারাপ খারাপ মেকিং করা অনেক নাটক লবিংয়ের কারণে শুধু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ওইদিন এক প্রডিউসার কল ধরেই বল্লো #রাজ তোমাদের কাজ দেয় না। তোমরা ওরে ভোট দিলা। টাকা পাই, টাকা দেয় না। অ্যাক্টরটা কোনোভাবে মিনিমাইস করা যায় আরেকটা। কতগুলো করব। ফ্যামিলিবিহীন মানুষ এক টাকা দিয়ে হেল্প করার মতো কেউ নেই। কাজ করি খাই। প্রডিউসাররা টাকা না দিলে আমাদের টেকনিক্যাল মানুষগুলাকে টাকা দিতে পারে না। মানুষ টাকা পায়, দিতে পারি না। ঈদ যায়, পূজা যায়, আমাদের কিছুই হয় না।’
তাসলিমা মুক্তা আরো যোগ করেন, ‘সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে পরশু আমার বাসার ইলেকট্রিক লাইন কেটে দিছে। যেটা আসলে আমি নিতে পারি নাই। এত ছোট লেগেছিল বলার বাহিরে। এখন পাঁচ মাসের বাসা ভাড়া বাকি। বলবেন আপনারা, তুমি মিডিয়া আসছ কেন? ভালোবেসে আসছি। দেশের জন্য কিছু করব, ক্রিয়েটিভ কিছু করার নেশা যাদের আছে, শুধু তারাই জানে। তাই বাধ্য হয়ে কাল বলেছিলাম, আর মিডিয়ায় কাজ করব না। ছেড়ে দেব। বাট পারি নাই, তাই সবকিছু থেকে বিদায়ই নিতে চেয়েছিলাম। বাঁচার সত্যি কোনো ইচ্ছে নেই, এ অভিমানেই চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আর একটুর জন্য হাতে মেইন শিরাটা বেঁচে গেল। সারা রাত এক সমুদ্রের রক্তে মধ্যে পড়ে ছিলাম। অনেকেই জানে, আমার থ্যালাসেমিয়া আছে। জানি না বিকেলে না আবার রক্ত নিতে হয়। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। এমনিতেই লোন আবার আজকে লোন জমা হলো। মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি আসলেই মরতে চাই। আর চাপ, হাইপ্রেশার সাহায্য হয় না। অনেকেই বলবে, এত তাড়াতাড়ি হেরে গেলাম। হেরে গেলাম। আমার মুভি বানানোর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।’
এসি