ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

পানি বিশুদ্ধ করার অভিনব পদ্ধতি

প্রকাশিত : ১২:৫১ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার

পানির অপর নাম শুধু জীবনই নয়, অনেক ক্ষেত্রে মরনও হয়। খাবার উপযুক্ত বিশুদ্ধ পানিকে জীবন বলা গেলেও ময়লা আবর্জনা আর জীবানুযুক্ত যুক্ত পানিকে জীবন না বলে মরনই বলতে হয়। আমাদের দেশের ন্যায় সারা বিশ্বেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ একটি বড় সমস্যা। শিল্পোন্নত দেশ জার্মানিতেও পানিতে বিদ্যমান নানা ক্ষতিকর পদার্থ দূর করা সব ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। আর সেই ঝুঁকি এড়াতে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রক্রিয়ার খোঁজ করছেন।

জার্মানির দক্ষিণেই ছোট্ট নদী বয়ে যাচ্ছে। শহরের পরিশোধন কেন্দ্র থেকে পরিশোধিত পানি সেই নদীতে গিয়ে পড়ে। খালি চোখে দেখলে পানি পরিষ্কার মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে তা ঠিক নয়। পানিতে ওষুধের বর্জ্য পাওয়া গেছে। যেমন ব্যথার ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন, রক্তচাপ কমানোর ওষুধ।

রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের পানি রসায়নবিদরা অবশ্য শুধু সে কারণেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন না। পানি রসায়নবিদ ড. ভ্যার্নার রাইফেনহয়সার বলেন, গবেষণা অনুযায়ী সামান্য পরিমাণ ডাইক্লোফেনাকও পানির জীবজগতের ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন, ট্রাউট মাছের ফুলকা ও কিডনিতে পরিবর্তন দেখা যায়। তাই এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একটি দল বাভেরিয়ার ভাইসেনবুর্গ শহরের পরিশোধনাগারে নর্দমার বর্জ্য পানি থেকে ওষুধের অবশিষ্ট অংশ ছেঁকে ফেলার চেষ্টা করছেন।

পরিবেশ বিজ্ঞানী সাশা যোর্ডেল বলেন, মানুষ যে ওষুধ সেবন করে তা আমাদের শরীর সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারে না। মূত্রের মাধ্যমে তার একটি বড় অংশ বের হয়ে যায়। ডাইক্লোফেনাকের প্রায় ৭০ শতাংশই শরীর ত্যাগ করে। মলম ও জেল জাতীয় ওষুধের অবশিষ্ট অংশ স্নানের সময় শরীর থেকে বেরিয়ে বর্জ্য পানিতে মিশে যায়।

ওষুধের অবশিষ্ট অংশ ধ্বংস করতে শোধনাগারে নিজস্ব এক চুল্লি তৈরি করা হয়েছে। তারপর বর্জ্য পানির ওপর ওজন গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। জীবাণু মেরে ফেলতে এই প্রক্রিয়া বেশ উপযুক্ত প্রমাণিত হয়েছে। ওষুধের অবশিষ্ট অংশ ভেঙে বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ওজন নিক্ষেপের পর বর্জ্য পানীয়র নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল যাচাই করা হয়েছে। ওজন প্রক্রিয়ার অভাবে নমুনার রঙ লালচে কমলা হয়ে ওঠে। ওজন নিক্ষেপ করলে রঙয়ের কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে না।

 

ড. ভ্যার্নার রাইফেনহয়সার বলেন, হরমোন জতীয় ওষুধ বর্জ্য ওজন নিক্ষেপ করার পর পাওয়া যায়নি। কিন্তু ডাইক্লাফেনাকের ৯০ শতাংশ, কমপক্ষে ৮৫ শতাংশ ধ্বংস হয়। অবশ্যই পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছি না। রক্তচাপ কমানোর ওষুধও এই প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি ধ্বংস হয় না। তা ছাড়া এর ফলে কিছু গোলমেলে পদার্থও সৃষ্টি হতে পারে। এর অর্থ, ওজোনেশন প্রক্রিয়া এই সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই বিশেষজ্ঞদের দল দুটি ফিল্টার প্রণালি পরীক্ষা করছেন। একটি প্রণালিতে বালু ও ব্যাকটেরিয়া দিয়ে পানি শোধন করা হয়।

গবেষকরা তাই নতুন এক ধরনের গ্র্যানুলার অ্যাক্টিভেটেড কার্বন প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রত্যাশা দেখাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে প্রকৃতিও সাহায্য করে। সাশা র্যোডেল বলেন, এই গ্র্যানুলার অ্যাক্টিভেটেড কার্বনের বিশেষত্ব হলো, বহু ব্যবহারের ফলে তার কার্যকারিতা শেষ হলে তার ওপর একটি জৈব স্তর সৃষ্টি হয়।

তার মধ্যে অতি ক্ষুদ্র মাইক্রোঅরগ্যানিজম অবশিষ্ট পদার্থ ভেঙে ফেলে। ফলে কার্বন নিজেই নিজেকে পরিশোধন করে। এর অর্থনৈতিক সুবিধা হলো, ফিল্টারের মধ্যেই অনেককাল ধরে কার্বন রেখে দেওয়া যায়। ফলে পরিশোধন প্রক্রিয়ার ব্যয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যায়।

২০১৭ সালে বিশ্বে প্রায় ৭৯ হাজার কোটি ডলার মূল্যের ওষুধ কেনা হয়। যা এক দশক আগের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলার বেশি। পানি থেকে জীবাণু ও ওষুধের অবশিষ্ট পদার্থ দূর করার সুলভ প্রক্রিয়ার জন্য চাপ বাড়ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, অ্যাক্টিভেটেড কার্বনের ওপর জৈব স্তর সৃষ্টি হতে প্রায় ১ বছর সময় লাগে। এই প্রক্রিয়া বড় আকারের প্ল্যান্টেও প্রয়োগ করা যায় কি না, তখনই সেটা বোঝা যাবে।