ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারীর অভিজ্ঞতা [ভিডিও]
প্রকাশিত : ০৯:৪৮ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৮ রবিবার
প্রসবকালীন সময়ে নারীর সবচেয়ে বড় সমস্যা ব্যথা। এই ব্যথা থেকে রেহাই দেওয়ার কথা বলে বাড়ছে সিজার। সিজারের ফলে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বাড়ে তেমনি বাড়ছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী, গত দশ বছরে সিজারের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। এর ফলে একদিকে যেমন মাতৃমৃত্যু হার বাড়ছে অন্যদিকে সিজার পরবর্তী সময়ে মায়ের শরীরে দেখা দেয় নানা সমস্যা।
উন্নত বিশ্বে সিজারকে অনুৎসাহিত করতে ‘ইপিডুরাল প্রসব পদ্ধতি’ চালু হয়েছে বহু আগেই। বাংলাদেশেও ইপিডুরাল পদ্ধতি চালু হয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতালে।
রাজধানীর তেজগাঁয়ের ইমপালস পাসপাতালে গত এপ্রিলে ইপিডুরাল প্রসব পদ্ধতি চালু হয়। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত পঁয়ত্রিশ জন অন্ত:স্বত্ত্বার সন্তান প্রসব হয়েছে এই পদ্ধতিতে। দিন দিন এই চিকিৎসার চাহিদা বাড়ছে। সচেতন নারীরা এখন ব্যথামুক্ত প্রসবের জন্য ইপিডুরাল পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটিতে একই পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব করেন আয়েশা রহমান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান থেকে পাশ করে বের হওয়া আয়েশা আক্তারের স্বামী একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী করেন। আয়েশা রহমান একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ২৪ তারিখে আমার সন্তান প্রসব হয়। তার আগের দিন আমি দুপুরে সামান্য ব্যথা (প্রসবের পূর্ব মুহুর্তে যে ব্যথা হয়) নিয়ে ইমপালসে ভর্তি হই। দুপুর আড়াইটার দিকে স্যালাইন দিয়ে আমার প্রসবের ব্যথা উঠানোর চেষ্টা করে। তখন থেকে হালকা হালকা ব্যথা ছিল। কিন্তু তখন আমার সকল কাজ স্বাভাবিক ছিল। নিজে নিজে বাথরুমে যাওয়া, হাঁটা, খাওয়া দাওয়া কোন কিছুতেই তেমন সমস্যা হচ্ছিল না। আয়েশা রহমান বলেন, ব্যথা ছিল। তবে সেই ব্যথাটা ছিল সহনীয়।"
আয়েশা রহমান বলেন, ‘বিকাল পাঁচটার দিক থেকে আমার মনে হচ্ছিল, আমার ব্যথা তুলনামূলকভাবে বেশী। ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার তখন আমাকে চেক করে দেখেন। দেখে বুজতে পারেন আমার শরীর তখনো সন্তান প্রসবের জন্য প্রস্তুত নয়। তখন আমি প্রচুর ব্যথা অনুভব করছিলাম। সেই ব্যথাটা আমি আর নিতে পারছিলাম না। ফলে তখন ডা. কাজী ফয়েজা আক্তারকে জানালে তার নির্দেশে `ইপিডুরাল` টিম এসে আমাকে ইপিডুরাল দেন। ফলে আমি যে প্রচুর ব্যথা পাচ্ছিলাম তা বন্ধ হয়ে যায়। আমি নিজেকে অনেকটা এনার্জীটিক ফিল করি। ব্যথা না থাকায় আমার সকল কাজ আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়।’
আয়েশা রহমান বলেন, ‘এর কিছুক্ষণ পর থেকে আমার লেবার দ্রুত প্রগ্রেস করতে থাকে। ন`টার দিকে পানি ভাঙ্গা শুরু হয়। এসময় আমি বাচ্চার একটা প্রেসার অনুভব করতে থাকি। তবে ঐ ব্যথা সহনীয় ছিল। আমি নিতে পারছিলাম। তখন আমি মেম ( ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার) কে বলি, আমি প্রেসার ফিল করি। আমি পুশ করতে পারব। তখন মেম আমাকে কিছু নিয়ম শিখিয়ে দেয়। আমি সেগুলো করতে থাকি। আল্লাহর রহমতে কিছুক্ষণ পর আমি সন্তান প্রসব করি। আল্লাহর রহমতে এখন আমি ভাল আছি।’
আয়েশা রহমানের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, অন্যান্য নারী প্রসবকালীন মুহুর্তে যে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন, তাতে ডাক্তার বা রোগীর স্বজনরা অনেক সময় সিজারের জন্য তাড়াহুড়া করেন। অনেক ক্ষেত্রে নারী নিজেও সিজার করতে আগ্রহী হয়ে উঠে। কিন্তু ইপিডুরাল পদ্ধতিতে নারীকে সেই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়না। প্রসবকালীন একটা স্বাভাবিক চাপ নারী অনুভব করলেও তা সজনীয় পর্যায়ে থাকে ও নারী নিজের সকল হালকা কাজ করতে পারে।
আয়েশা রহমানের ননদ একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, আমরা যখন ভাবীকে হাসপাতালে ভর্তি করাই, দেখলাম ডাক্তার পনের মিনিট পর পর আসছেন। আমরা অন্য ক্ষেত্রে দেখেছি, পেইন উঠার আগে বা পেইন উঠার সঙ্গে সঙ্গে সিজার করার জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠে। কিন্তু এখানে সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করে সিজারটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য।
এ প্রসঙ্গে ইপিডুরাল টিমের কনসালটেন্ট ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার বলেন, আয়েশা রহমান যখন বলল, সে ব্যথা নিতে পারছে না তখনই আমি তাকে ইপিডুরাল দিই। আসলে সে যখন পেইন নিতে পারছিল না তখনই সে একটিভ লেবার (আসল প্রসব ব্যথা) শুরু হয়। তার আগে সে একটিভ লেবারে যায়নি। তিনি আরো বলেন, ইপিডুরাল নিলে প্রসবকালীন ব্যথা হয় না তা নয়, ব্যথা হয়। কিন্তু সেটা সহনশীল ব্যথা। ফলে প্রসূতি সিজার এড়িয়ে যেতে পারে।
প্রত্যেক নারীর জীবনে সন্তান প্রসব একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ইপিডুরাল পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে সিজার এড়ানো গেলে তা মা ও নবজাতক শিশু উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক। আমাদের দেশে এই প্রসব পদ্ধতি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হবে সেটাই প্রত্যাশা।
ভিডিও লিংক: https://youtu.be/V_I8NM8u3wg
আ আ//