পিকেএসএফের উদ্যোগে বাংলাদেশ কিশোর-কিশোরী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত : ১০:০৪ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৮ রবিবার
‘মেধা ও মননে সুন্দর আগামী’ – এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ কিশোর-কিশোরী সম্মেলন ২০১৮’। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউণ্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত দিনব্যাপী এই সম্মেনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাজনীন সুলতানা, সদস্য, পরিচালনা পর্ষদ, পিকেএসএফ, এবং সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসলেও দারিদ্র্য দূরীকরণ এখনও সরকারের মূল লক্ষ্য। দেশে বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে যার মধ্যে ১ কোটি মানুষ অতিদরিদ্র। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উন্নতির ধারা বজায় রাখতে হবে কমপক্ষে আগামী ৭ থেকে ১০ বছর, তবেই দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে ১০ ভাগের নীচে। তিনি আরও বলেন, একটা যুদ্ধপীড়িত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মাটি ও মানুষের উপযুক্ত ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজকের কিশোর-কিশোরীরা সেই আহ্বান হৃদয়ে ধারণ করে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এবং তাদের নেতৃত্বেই ২০৪১ সালের মধ্যেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, টেকসই উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। এই মূলমন্ত্র নিয়েই পিকেএসএফ তার কার্যক্রম এমনভাবে সাজিয়েছে যেন নৃগোষ্ঠী, সম্প্রদায়, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, বয়স নির্বিশেষে সবাই টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি মানবমর্যাদা নিশ্চিত হয়। সমন্বিত এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই কিশোর-কিশোরী সম্মেলন ২০১৮-এর আয়োজন। আপন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে বলীয়ান ভবিষ্যত জাতি গঠনে পিকেএসএফ-এর এই কার্যক্রম আগামীতে আরও জোরদার হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দেশবরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ।
মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে প্রবীণকাল পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের জন্য পিকেএসএফ-এর পৃথক কার্যক্রম রয়েছে উল্লেখ করে পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম বলেন, সুস্থ সংস্কৃতি ও ক্রীড়া-চর্চার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশের মাধ্যমে উন্নয়নকে টেকসই করার লক্ষ্যে ‘সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মসূচি’ পরিচালনা করছে পিকেএসএফ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘শিশু অধিকার আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে জাতির ভবিষ্যত নেতৃত্ব গঠনের যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তার আলোকেই পিকেএসএফ-এর এই কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানব উন্নয়নসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে, আজকের কিশোর-কিশোরীরা সেই অগ্রযাত্রাকে ভবিষ্যতে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাবেক এই মুখ্যসচিব।
কিশোর-কিশোরীদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ উন্নয়নে ভবিষ্যত পরিকল্পনাবিষয়ক বক্তব্য প্রদান করেন পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (কার্যক্রম) মো. ফজলুল কাদের। তিনি বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে মেধা, মনন ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বিকাশের বিকল্প নেই। যাত্রাশুরুর মাত্র দুই বছরে মাঠপর্যায়ে ‘সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মসূচি’ যে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে, তা ভবিষ্যতে এই কর্মসূচির পরিধি প্রসারে উৎসাহব্যঞ্জক ভূমিকা রাখবে এবং এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় বুনিয়াদ তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া কিশোর-কিশোরীদের ‘মেধা ও মননে সুন্দর আগামী’ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার শপথ পাঠ করান পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এছাড়া, সম্মেলনে অংশ নেওয়া একজন কিশোর, একজন কিশোরী ও একজন শিক্ষক বক্তব্য দেন। দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে ছিলো ‘আনন্দঘন অংশগ্রহণমূলক শিখনের মাধ্যমে নেতৃত্ব ও নৈতিকতা’বিষয়ক একটি কর্মশালা।
সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
সম্মেলনের শেষাংশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানে সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, এমপি উপস্থিত থেকে কিশোর-কিশোরীদের অনুপ্রাণিত করেন।
অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় পিকেএসএফ শিশু-কিশোর ও তরুণদের উন্নত সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিকাশ ও ক্রীড়ামনস্ক করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মসূচি’ পরিচালনা করছে। এ কর্মসূচির আওতায় দেশের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক লক্ষ শিক্ষার্থীর মাঝে সৃজনশীল ও জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাইকৃত ৭১০ কিশোর-কিশোরী অংশ নেয় এই সম্মেলনে।
এসএইচ/