সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেলের একাদশ বর্ষপূর্তি উদযাপন
প্রকাশিত : ১১:২৬ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার
‘ওঠো, জাগো এবং শ্রেয়কে বরণ করো’ এই মহামতি মন্ত্রে দীক্ষিত সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল অ্যাসোসিয়েশনের একাদশ বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে।
সোমবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় উপজেলা কমপ্লক্সে ‘জব প্রিপারেশন কোচিং সেন্টারের হলরুমে একাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, ও বন্ধু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্বা হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের মুল কমিটির সহ-সভাপতি রিধোয়ানুল বারী।
সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেলের এসোসিয়েশনের মূল কমিটির সমন্বয়ক সঞ্জয় মজুমদার ও এবি কলেজ শাখার সহ-সভাপতি মেহেরুন্নেসা রিমার যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এবি কলেজ শাখার সমন্বয়ক জাবেদ হোসেন, এবি কলেজ শাখার সভাপতি হায়দার গাজী, সহ-সভাপতি নুঝাত আনজুম মুনিয়া, এম আর কলেজ শাখার সভাপতি সালাউদ্দিন জিসান, উত্তর সন্দ্বীপ কলেজ শাখার সভাপতি পায়েল মাহমুদ, সংগঠনের আজীবন সদস্য সফিকুল আলম মানিক, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান, সন্দ্বীপ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইলিয়াস কামাল বাবু, কবি ও প্রাবন্ধিক নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ, কবি ও উন্নয়নকর্মী বাদল রায় স্বাধীন, কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের পেলিশ্যা প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা, সাংষ্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘আমার কৈশোর, যৌবনে সন্দ্বীপে সামাজিক-সাংষ্কৃতিক, ক্রিয়াঙ্গনে দীপ্ত পদচারণা ছিল। হারানো দিনের এসব কর্মকাণ্ড সংগঠনে দেখতে পাই। এতে করে আমার আশা জেগে উঠেছে। আমি এখন বেঁচে থাকার প্রাণ পাই। সমাজ পরিবর্তনে এই তরুণদের অসামান্য ভূমিকা দেখে আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। এই মাটির ঋণ শোধ করতে হলে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করতে হবে। আমরা ফ্রেন্ডস সার্কেল অ্যাসোসিয়শনের এ ধরণের সামাজিক আন্দোলনে সবাইকে সক্রিয় থাকতে হবে। বিশেষ করে ফ্রেন্ডস সার্কেলের একাদশ বর্ষপূর্তিতে থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ঢাকা থেকে টেলি-কনফারেন্সে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক বলেন, এক যুগের পথে এই সংগঠন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের আর্থ-সামাজিক কল্যাণে ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছে। তরুণদের প্রচেষ্টায় সন্দ্বীপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সমাজ পরিবর্তন যাত্রায় তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীলতার পথে রাখতে আমরা মাদক ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছি। ভালো বন্ধুদের নিয়ে একটি শোষণমুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যয়ে সমাজে আলোকিত মানুষদের সাথে নিয়ে সমাজে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছি। যাতে করে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অহিংস সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। পারস্পরিক সম্পর্কগুলি কাজে লাগিয়ে আমার আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সাংষ্কৃতিক বিপ্লব আনতে চাই।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে মাদক-জঙ্গি এবং সাম্প্রদায়িক অপসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য আমাদের তরুণরা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। দ্বীপের কৃতিসন্তান কবি আব্দুল হাকিম, কমরেড মুজফফর আহমেদ, বিপ্লবি লালমোহন সেন, ভাষা সৈনিক রাজকুমার চক্রবর্তী, শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদসহ সবার চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ বলেন, সন্দ্বীপের মতো একটি প্রান্তিক জনপদে যেখানে মানুষ শত শত বছর ধরে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। এখানকার মানুষের ইতিহাস সংগ্রামশীলতার ইতিহাস। মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিম একটি উদার গণতান্ত্রিক সমাজ-রাষ্ট্রের আখাংঙ্খা ধারণ করেছিলেন। কৃষক বিদ্রোহ খ্যাত এ দ্বীপে একই ধারাবাহিকতায় রাজ কুমার চক্রবর্তী, মুজাফফর আহম্মদ, লাল মোহন সেন, অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, বেলাল মোহাম্মদ এর চেতনা ধারণ করে সংগঠনটি আলোকিত সমাজের সম্ভাবনাকে উস্কে দিয়েছে। প্রান্তিক জনপদের মানুষের কাছে এর চেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক আর কি হতে পারে। আমি তাদের অভিবাদন জানাতে চাই। কেন্দ্রের যথার্থ সুবিধাবঞ্চিত ও দ্বৈপায়নরা নতুন করে জেগে উঠা চরের সঙ্গে তাদের স্বপ্নকে মূর্ত করতে চাইছে। ফ্রেন্ডস সার্কেল এক্ষেত্রে সহ-যোদ্বার ভুমিকা নিতে পারে।
আঞ্চলকিতার উপরে উঠে অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারলেই দিগন্ত উন্মচিত হবে। সন্দ্বীপের স্বার্থ সংরক্ষণে সংগঠনটির ভুমিকা অনেকের নজর কেড়েছে।ভবিষ্যতে নাগরিক সমঅধিকার পরিপন্থী যেকোন প্রচেষ্টার বিরুধে এসব সম্ভাবনাময় তরুণরাই প্রতিবাদে প্রতিরোধে ফেটে পড়বে।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রনেতা জিহাদ বাবু, এবি কলেজ শাখার সহ-সভাপতি জিহাদ হোসেন, সহ-সভাপতি সাজেদা আক্তার নাইমা, সাবেক যুন্ম সাধারণ সম্পাদক এস.এম শরিফুল আলম সৌরভ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহাগ হোসেন, মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক শাকিল শ্যাম, তূর্য মজুমদার অরিন, নাইমুল ইসলাম নিরব, ফয়সাল, এস জে সালমা জাহান, এম আর কলেজ সেক্রেটারি সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন রানা, মিডিয়াবিষয়ক সম্পাদক শাকিল পাটোয়ারি, উত্তর সন্দ্বীপ সভাপতি পায়েল মাহমুদ, সেক্রেটারি জয়সহ অসংখ্য তরুণ-তরুণী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এরপর সভার প্রধান অতিথি হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টুসহ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সাথে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেক কেটে সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস্ সার্কেল এসোসিয়েশনের একাদশ বর্ষপূর্তি উদযাপন করে।
উল্লেখ্য, প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ কাজী ইফতেখারুল আলম তারেকের হাত ধরে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে একঝাঁক সৃজনশীল তরুণদের সাথে নিয়ে গড়ে ওঠে একটি অসাম্প্রদায়িক, সংবেদনশীল, পরিবেশবান্ধব, সামাজিক, সাংষ্কৃতিক, ক্রিয়া ও মাদকবিরোধী সংগঠন। ২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সংগঠনটি সামাজিক অবক্ষয়য়ের বিরুদ্ধে নতুন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যা সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে আমির হোসেন রিশাদ।অতীতের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আগামিতেও আরও ভালো ভালো কাজ করার আশা বাদ প্রকাশ করেন তরুণরা।
কেআই/