স্তন ক্যান্সার, অন্তর্বাস ও কিছু কথা: ডা. ফারহানা সীমা
প্রকাশিত : ০৫:০৬ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:১২ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার
প্রতিকী ছবি
নারী শরীর মানেই আকর্ষণীয় কিছু। তেমনি নারীর অন্তর্বাসও। তাই ‘নো ব্রা ডে’ নিয়েও আছে বেশ ফিসফিস গল্প, কিছু ভুল ধারণা।
“নো ব্রা ডে” মানে কী?
ব্রা খুলে অশ্লীলতা প্রদর্শন করা?
না ব্যাপারটা মোটেও সেটা নয়।
“নো ব্রা ডে” মানে তুমি মাসে অন্তত একবার তোমার বক্ষবন্ধনী খোলো আর নিজ হাতে সেগুলো পরীক্ষা করো। এখানে অশ্লীলতার কিছুই নেই।
আরো পড়ুন : স্তনে ব্যথা হলে কী করবেন: ডা. অাফরিন সুলতানা (ভিডিও)
১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের মাঝে অন্য যেকোনো ক্যান্সারের চাইতে, ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বেশি। প্রাণঘাতী ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে সকলের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ সম্পর্কে নারীদের সচেতন করতেই পালন করা হয় ‘নো ব্রা ডে’।
প্রাচীন গ্রীসে নারীরা একটি বিশেষ পোশাক পরিধান করতেন। একে বলতো অ্যাপোডিসমোস যার অর্থ ‘স্তন-বন্ধনী’। এক টুকরো কাপড় সামনে থেকে স্তনযুগলকে ঢেকে পিঠ বরাবর বাঁধা হতো। সেই থেকে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নারীদের মধ্যে বক্ষবন্ধনীর প্রচলন হয়।
আরো পড়ুন : স্তনে ক্যানসার হয়েছে কি-না বুঝবেন যেভাবে: ডা. আফরিন সুলতানা
খুব স্বাভাবিকভাবেই, আমাদের দেশের নারীরা ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন। এমনকি ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, এমন নারীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
অজ্ঞতা, অসচেতনতা, বিভ্রান্তিমূলক ধারণা, জড়তা ও সঠিক তথ্যের প্রচারণার অভাবে প্রতি বছর ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা বেড়ে চলছে ক্রমেই।
আরো পড়ুন : স্তনের নিপলে যেসব রোগ হয়ে থাকে: ডা. আফরিন সুলতানা (ভিডিও)
বলা হয়ে থাকে সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি নিস্কৃতি পাওয়া সম্ভব। অথচ প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। যে কারণে নীরব ঘাতক ব্রেস্ট ক্যান্সারে অকালে প্রাণ হারাতে হয় অনেক ভুক্তভোগীকেই।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ জানা থাকলে একদম শুরু থেকেই সতর্ক হওয়া যায়। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার আগেই চিকিৎসা শুরু করলে, সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
লক্ষণসমূহ হলো–
১. স্তন্য ও বগলের নিচের দিকে পিন্ড (লাম্প) বা চাকার মতো বোধ হওয়া।
২. স্তন্যের ত্বকের রঙ পরিবর্তন হওয়া।
আরো পড়ুন : সাদা স্রাব গেলে কী করবেন : ডা. কাজী ফয়েজা
৩. স্তনের আকার ও আকৃতিতে পরিবর্তন আসা।
৪. স্তনের ত্বক কুঁচকে যাওয়া।
৫. স্তনের বোঁটা (নিপল) ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।
৬. স্তন বোঁটা ও বোঁটার চারপাশে ফুসকুড়ি কিংবা র্যাশের মতো দেখা দেওয়া।
৭. বোঁটা থেকে সাদা কিংবা হলদেটে তরল বের হওয়া।
জেনে রাখা ভালো যে, স্তন্যের ৯০ শতাংশ টিউমারই নিরীহ। সব টিউমারই ক্যান্সার নয়। তবে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা জরুরি। প্রতি মাসে পিরিয়ডের প্রথম অথবা দ্বিতীয় দিন নিজেই হাত দিয়ে স্তন পরীক্ষা করলে প্রাথমিক পর্যায়েই এটা চিহ্নিত করা সম্ভব।
আরো পড়ুন : স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের ঘরোয়া পদ্ধতি: ডা. মো. হাবিবুল্লাহ
এবার আসা যাক নো ব্রা ডে প্রসঙ্গে। “নো ব্রা ডে” পালন করা শুরু হয় ২০১১ সালের ৯ জুলাই। প্রথম তিন বছর জুলাইয়ে নো ব্রা ডে পালন করা হলেও, পরবর্তীতে অক্টোবরের ১৩ তারিখ থেকে পালন করা হয়ে আসছে এই বিশেষ দিনটি। কারণ অক্টোবর হলো “ব্রেস্ট ক্যান্সার এওয়ারনেস মান্থ”।
স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতেই মূলত এই নো ব্রা দিবস পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবং অনেকই মনে করেন ব্রা ব্যবহারের ফলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি একটু বেশিই বৃদ্ধি পায়, ব্রা ব্যবহার বন্ধ করতে পারলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিটা কমে আসবে। কিন্তু তেমন কোন প্রমাণ কোন গবেষণাতেই পাওয়া যায়নি। এটা একটা ভুল ধারণা।
আরো পড়ুন : মেনোপোজ হলে স্বামীর সঙ্গে মেলামেশা করা যায় যেভাবে: ডা. কাজী ফয়েজা
এখন কৌতূহলী হয়ে অনেকেই জানতে চাইবেন- ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে নো ব্রা ডে কেনো? বিশেষত এই দিনটিতে সব নারীদের স্তন পরীক্ষা করানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়। যার প্রতীকী রূপে দিনটিকে বলা হয়ে থাকে নো ব্রা ডে।
জড়তা ও লজ্জা ভেঙে প্রতিটি নারীকেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একজন সচেতন নারী যদি আরও দশজনকে সচেতন করতে পারেন, তবেই বাড়বে সচেতনতা। কমবে ব্রেস্ট ক্যান্সারে মৃত্যুর হার।
“আমি সুন্দর” ভেবে আনন্দিত হবার চাইতে নারী যখন বলবে “আমি বাঁচতে চাই” তখনই নারী একজন নারী নয় শুধু, মানুষ হয়ে উঠবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক
কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ
/ এআর /