ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

দেশভ্রমণে শতকের পথে খুলনার মেয়ে আসমা

মাসুদ রানা, জবি

প্রকাশিত : ১২:০৪ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৯:১৯ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

ভ্রমণ পিয়াসী একজনের নাম কাজী আসমা আজমেরী। আর মাত্র ১টি দেশ ঘুরলেই দেশভ্রমণে আসমা সেঞ্চুরি করে ফেলবেন। ফলে তার ছোট বেলার দুই চোখের দেখা স্বপ্ন পূরণ হবে। বাংলাদেশি আসমা একজন রোটারিয়ান। পাশাপাশি ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। তিনি ২০০৭ সালে প্রথম দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড দিয়ে ভ্রমণ যাত্রা শুরু করেন। ইতোমধ্যে তিনি ৯৮টি দেশ ভ্রমণ করে ৯৯ তম দেশ উজবেকিস্তানে অবস্থান করছেন।

আসমা জন্মগ্রহণ করেন খুলনার বিখ্যাত কাজী পরিবারে। বড় হয়েছেন খুলনা শহরে। তার বাবার নাম কাজী গোলাম কিবরিয়া। মায়ের নাম কাজী সাহিদা আহমেদ। বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে কাজী আসমা আজমেরী।

আজমেরী একমাত্র ব্যক্তি যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ভ্রমণ করছেন। তার আছে সবুজ কালারের পাসপোট। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণে বিভিন্ন জটিলতা থাকা সত্ত্বেও তিনি অন্য দেশের পাসপোর্ট নেননি। ২০০৮ সালে তার বন্ধুর মা বলেছিলেন, তিনি দুর্বল ও যোগ্যতাহীন। কারণ তার বন্ধু ২৬টি দেশ ভ্রমণ করলেও তিনি মাত্র ২টি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। তখন তিনি পঞ্চাশটি দেশ ভ্রমণ করার জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। চ্যালেঞ্জ করা আর সেটা সফল করা সহজ ছিল না। বাংলাদেশের নারীদের পক্ষে চ্যালেঞ্জ নেওয়া আসলেই কঠিন বিষয়।

তারপর তিনি নিজের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করতেন। সেই থেকে নিজের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৫০টি দেশ ঘুরার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তবুও তিনি দমে যাননি আরও ইচ্ছা শক্তি নিয়ে অন্যান্য দেশে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ২০০৯ সালে ভিয়েতনাম ভ্রমণে গিয়ে ফিরতি টিকিট না থাকায় তাকে ২৩ ঘণ্টা আটকিয়ে রাখা হয়। তারপর ২০১৪ সালে ব্রাজিল ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে ৫০ টি দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছিল। তবুও থেমে থাকেন নি তিনি ইতোমধ্যে ৯৮ টি দেশ ভ্রমণ করে ৯৯ তম দেশ উজবেকিস্থানে অবস্থান করছেন।

বাংলাদেশি বিশ্ব ভ্রমণকারী কাজী আসমা আজমেরী বিশ্বের ভ্রমণকারীদের থেকে অন্য ধরনের। তিনি বাংলাদেশের মানচিত্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তুলে ধরছেন। তার অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও পাসপোর্ট পরিবর্তন করেন না। কারণ তিনি নিজ দেশের পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করতে চান। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন ইতিবাচক দিক দেশের কাছে তুলে ধরতে চান। এছাড়া তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চান।

আসমা বড় ইকবালনগর গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তারপর খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে (বিবিএ) মার্কেটিং-এ স্নাতক করেন। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে একই বিষয়ে এমবিএ করেন। আসমা এখন থাকেন নিউজিল্যান্ড।

কাজী আসমা আজমেরী বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকার বাহক হিসেবে পৃথিবীর অজানাকে জানার জন্য ঘুরবেন সারাবিশ্ব। আসমা একশত দেশ ঘুরে বিশ্ববাসীর কাছে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। যিনি ভ্রমনের মধ্য দিয়ে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি, দেশের মানুষ সম্পর্কে জানান দিচ্ছেন। বিশেষ করে তিনি পৃথিবীর মানুষের যে বৈষম্য সেটা ভালো করে তার মানবিক দৃষ্টি দিয়ে দেখছেন। তার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের বৈষম্য দূর করার কাজও করবেন।

তিনি জনপ্রিয়তার জন্য দেশ ভ্রমণ করেন না। তিনি প্রথমে দেশ ভ্রমণ করেন নিজের শখ থেকে। শখের বশে ভ্রমণ শুরু করলেও এখন তিনি অনুভব করেন ভ্রমণের মাধ্যমে নিজ দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরা যায়। সেটা তাকে বেশি আনন্দ দেয়।

কাজী আসমা আজমেরী বলেন, আমি ১০০টি দেশ ভ্রমণ শেষে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের মানুষের জন্য চক্ষু হাসপাতাল, একটি ডেন্টাল হাসপাতাল, একটি ট্রেনিং সেন্টার ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন। এজন্য তিনি সবার কাছে সহযোগীতা কামনা করেছেন।

কাজী আসমা আজমারী বলেন, ‘আমি শৈল্পিকভাবে ইবন বেতুর, ঠাকুরমার ঝুলি, তেপা›তরের রাজ্যকন্যার গল্পে শুনে আমার শৈশবে কল্পনায় তাদের মনে মনে ভাবতাম। কিন্তু তারপর তাদের ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাই আমি স্বাবলম্বী হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। চাকরি করে স্বাবলম্বী হই। তারপর শুরু করি ভ্রমণ। স্বপ্ন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে দেশ ভ্রমণ করে চলছি।

উল্লেখ্য, তিনি ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড দিয়ে ভ্রমণ যাত্রা শুরু করেন। এর পর ২০০৯ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং। ২০১০ সালে কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, চীন, ম্যাকাউ, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সাইপ্রাস, তুরস্ক, মিশর, মরক্কো, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১১ সালে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, যুগোস্লাভাকিয়া, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, জাপান।

২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, নিউজিল্যান্ড, কুক দ্বীপ, টঙ্গা। ২০১৩ সালে নিউ ক্যালেডোনিয়া, তাহিতি, সলোমন দ্বীপ, নিউ, কিরিবাটি তাইওয়ান, ভানুয়াতু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট। ২০১৪ সালে মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এল সালভাডর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা, পানামা, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর। ২০১৫ সালে পোর্ট রিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বেলিজ, জ্যামাইকা, বাহামা, আরুবা। ২০১৬ সালে ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, কোসোভো, আবলানিয়া, ম্যাসেডোনিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মোল্দাভিয়া, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইতালি, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, নরওয়ে, কুয়েত। ২০১৭ সালে কিউবা, সামোয়া, কাতার। এবং ২০১৮ সালে ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কানাডা, জর্জিয়া, বেলারুশ, আজারবাইজান।

তার স্বপ্ন বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের বাকি সব দেশ ভ্রমণ করবেন। এভাবে তিনি পৃথিবীর বাকি দেশে ঘুরবেন। তার মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। ভ্রমণ বিশ্বে নাজমুন নাহারের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ইতিহাস গড়বেন কাজী বাড়ির মেয়ে কাজী আসমা আজমেরী।

একে//