ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

‘২১ আগস্টের হামলাসহ সকল অন্যায়ের প্রতিকারে ভোট চাই’

প্রকাশিত : ১১:০০ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:১২ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সাজা কার্যকরসহ সকল অন্যায় অবিচারের প্রতিকারে দেশবাসীর কাছে পুনরায় নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করেছেন।    

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ যদি চায় এবং আগামী নির্বাচনে যদি আমরা ফিরে আসতে পারি। অবশ্যই আমরা তাকে (তারেককে দেশে) ফিরিয়ে এনে শাস্তি দিতে পারবো। এজন্য আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ভোট চাই।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মামলায় তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে, তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ ১০ম জাতীয় সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্য কখনও চাপা দিয়ে রাখা যায়না, সত্য আপন নিয়মেই বেরিয়ে আসে। আজকে আদালতে সেই মামলা চলতে চলতেই সত্য বেরিয়ে এসেছে এবং আসামীরা সাজা পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই হত্যার যে বিচার করতে পেরেছি, সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।’
তিনি বলেন, ‘শাস্তি যখন পেয়েছে যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন আল্লাহ এবং বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার বিশ্বাস আছে, এমন একটা দিন আসবে যারা এতবড় জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে, রণক্ষেত্রে ব্যবহারের গ্রেনেড সাধারণ মানুষের ওপর প্রকাশ্য দিবালোতে রাজপথে যারা ব্যবহার করে হত্যার চেষ্টা করেছে এবং আইভি রহমানসহ দলীয় ২২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, একদিন তাদের সাজা পেতেই হবে। এ সাজা ভোগ করতেই হবে।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, মানুষ হত্যা করা, অত্যাচার করা তাদের একটা স্বভাব। তার পিতা জিয়াউর রহমান যেমন ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং তার মা (খালেদা জিয়া) এবং সে ২১ আগস্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে যে জড়িত, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময় বিএনপি-জামায়াত জোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। তাদেরই প্ররোচনায় এবং তাদেরই পরিকল্পনায় সেদিন তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।

হামলার পর অন্যায়ের ক্ষত মুছে ফেলতে শাসক শ্রেণী সক্রিয় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, হামলার কোন আলামতও রক্ষা করা হয়নি। উপরন্তু যখন জনমত সৃষ্টি হলো এর বিচার করতে হবে তখন জজমিয়া নামক এক লোককে ধরে এনে তাকে বিচারের সম্মুখীন করে মামলার নাটক করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, এখনও অনেকে সেদিনের স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছে, গ্রেনেড হামলার আঘাত নিয়ে এখনও পঙ্গু অবস্থায় রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর সেদিন দৈবক্রমে বেঁচে যাবার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীরা মানব ঢাল সৃষ্টি করে আমাকে রক্ষা করায় আমি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু আইভি রহমানসহ দলের ২২ জন নেতা-কর্মী ঐস্থানে এবং পরে হাসপাতালে ধুঁকে ধঁকে মারা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে ’৭৫ পরবর্তী শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতার হত্যার বিচার না করে এর খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।

১৯৮১ সালে ৬ বছর বিদেশে থাকতে বাধ্য করা হবার পর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে সে সময় দেশে ফেরার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে তিনি বলেন, খুনীরা বহাল তবিয়তে বিরাজমান এমনকি তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল এবং অনেকে তাদের নিয়ে দলও গঠন করেছিল। আবার অনেকে জনগণের ভোট চুরি করে তাদের সংসদেও বসিয়েছিল।

তিনি বলেন, একদিকে সেই খুনীরা অপরদিকে যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধীরাই ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এবং সে সময় বারবার তাঁর উপর প্রাণনাশি হামলা এবং সকল কাজে-কর্মে প্রতিবন্ধকতারও সৃষ্টি করা হয়।

তিনি বলেন, তাঁর একটাই লক্ষ্য ছিল এদেশটা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন কাজেই সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে, জনগণের মৌলিক চাহিদার সংস্থান করতে হবে এবং দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে।

সেই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেরিয়ে দলকে তিনি সুসংগঠিত করেন উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, যে কারণেই ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে। এরপরে তিনি এবং তাঁর দল দেশের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন করে। যার সুফলটা মানুষ পেয়েছিল বলেই তাঁকে এই সময়ে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার এবং বদনাম দেয়ার চেষ্টা এমনকি প্রাণনাশের চেষ্টাতেও ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে এই আহবান জানাবো যাতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার দেশের সেবা করার সুযোগ দেন। পাশাপাশি এই অন্যায়, অবিচার, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক দূর করে বাংলাদেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি।’  

আল্লাহ যেন সেই সুযোগ তাঁকে দেন সেটাও মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বাসস 

এসি