‘তুই আমার চেয়ে ভালো গাইবি’
শুভ, ডি-রকস্টার
প্রকাশিত : ০৬:০৭ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:৩৭ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কাজ করা সুযোগ হয়েছে। তবে প্রথম দেখা ২০০২ সালে ‘স্টার সার্চ’ প্রতিযোগিতার ফাইনালে। সেখানে আমি গিয়েছিলাম একটি অনুষ্ঠান দেখতে। তার এক বছর পর নিজেই এতে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হই। তখন থেকেই আমাকে দেখে আসছেন বাচ্চু ভাই।
নিজে ডেকে নিয়ে আমার ব্যান্ড রুটসকে বেশ কিছু শো দেন। ২০০৫ সালে ‘ডি-রকস্টার’-এ নাম লেখালে আমাকে দেখে খুশি হন। বলেন, ‘আমি স্বপ্ন ছিলো, তোদের মতো মানুষগুলো যাতে এসব কম্পিটিশনে আসুক। গ্রামীণফোন স্পন্সর করলেও এই প্রতিযোগিতার স্বপ্নটা তাঁরই ছিল।
রকস্টার’ নামটাও তাঁর দেওয়া। ২০০৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের মার্চ পর্যন্ত আমরা একসঙ্গেই ছিলাম। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সারা দেশে তাঁর সঙ্গে শো করেছি। তারপর ‘ডি-রকস্টার’ অ্যালবামে আমার জন্য দুটি গান করেন—‘কত দিন পর’ এবং ‘যদি ভুল করে’।
তাঁর সঙ্গে এত এত স্মৃতি বলে শেষ করা যাবে না। বেশির ভাগ সময় তাঁকে বসই ডাকতাম। ২০০৮ সালে ‘সাউথ এশিয়ান সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতার একটি রাউন্ডে তাঁর ‘সেই তুমি’ গেয়েছিলাম। সেই গানটি একজন ইউটিউবে আপ করে ক্যাপশনে লেখে, ‘আইয়ুব বাচ্চু ভার্সেস ডি-রকস্টার শুভ’। আমি ছেলেটাকে ফেসবুকে কমেন্ট করি লেখাটা মুছে ফেলতে।
আইয়ুব বাচ্চু ভার্সেস ডি-রকস্টার শুভ কিভাবে হয়? ২০১৪ সালে সেই ভিডিও লিংকটা ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছিলাম, ‘দয়া করে সবাই টাইটেলটা ইগনোর করবেন।’ এরপর বাচ্চু ভাই নিজে সেখানে কমেন্ট করেন,‘তুই তো আমার ছেলে।
তুই আমার চেয়ে ভালো গাইবি না কে গাইবে।’ কথাটা শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছিল! কতটা ভালোবাসা থাকলে এটা বলতে পারেন। আমি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার পর বারবার বলেছেন, ‘তুই কেন দেশের বাইরে গেলি? চলে আয়। বিদেশ তোর জন্য নয়, তোর জন্য বাংলাদেশ।’ মারা যাওয়ার ঠিক ছয় দিন আগে আমি আমেরিকা থেকে এসে চট্টগ্রামে শো করতে যাচ্ছিলাম।
এয়ারপোর্টে তাঁর সঙ্গে দেখা। সালাম দেওয়ার পর খোঁজখবর নেন। বলেন, নাসিরাবাদে শো শেষে কল দিস।’ এটাই তাঁর সঙ্গে শেষ কথা। সব সময় বলতেন, ‘ভালো মিউজিক করবি। যেটা করছিস সেটা ধরে রাখ। ফুয়াদের সঙ্গ কখনো ছাড়িস না। খুব ভালো একটা ছেলে।’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ‘সোনাবন্ধু’ গাওয়ার পর খুব খুশি হয়েছিলেন, ‘তুই যে শেফালীদির গানটা করেছিস, খুব ভালো হয়েছে।
দেখা হলেই আমার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেন। সারা জীবন আমাকে দিয়েই গেছেন। আমার আজকের অবস্থানে আসার পেছনে তাঁর অনেক অবদান। শেষ দিকে কোনো প্রতিযোগিতায় অতিথি হয়ে গেলে আমাকে দিয়ে সবাইকে উদাহরণ দিতেন! শেষ চার-পাঁচ বছর ধরে দেখা হলেই আগে তাঁর শরীরের খোঁজ নিতাম। আর কখনো দেখা হবে না। কেমন আছেন জানতেও পারব না।
টিআর/