ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় নতুন কলিংয়ের স্বপ্নে বিভোর দালাল চক্র-২

শেখ আরিফুজ্জামান, মালয়েশিয়া থেকে:

প্রকাশিত : ০৯:০৯ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার

বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির অন্যতম প্রধান বাজার মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া জনশক্তির জন্য বাংলাদেশকে তাদের ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকাভুক্ত করেছে। ফলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ পাঁচটি খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালের দৌরাত্ম্যের ঘটনায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার প্রশ্নবিদ্ধ হলেও দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় আবারও খুলতে শুরু করছে নতুন দ্বার।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাসে দশ সিন্ডিকেট চক্রের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়মনীতি থাকলেও তা মানা হয়নি। লোভনীয় চাকরি ও উচ্চ বেতনের কথা বলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনা হয় মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিতে। কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই অনেক শ্রমিক ওই সব কোম্পানি থেকে পালিয়ে যায়। তাদের সব কাগজপত্র এমনকি ভিসা ওই কোম্পানির নামে থাকলেও ভালো কিছুর আশায় কোম্পানি থেকে পালিয়ে যাচ্ছে অহরহ শ্রমিক। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না এক কোম্পানি থেকে একজন ব্যক্তি যখন পালিয়ে যাবে তখনই সে মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে যাবে। যেটাকে মালয়েশিয়ান ভাষায় বলে ‘লাড়ি’ হয়ে যাওয়া।

মালয়েশিয়া আসার পর কোম্পানিতে কাজ না থাকা, আবাসন সমস্যা, কয়েক মাসের বেতন আটকে দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রে ২৬ দিনে দৈনিক ৮ ঘণ্টা ডিউটিতে ১ হাজার থেকে ১২শ’ রিঙ্গিত বেসিক বেতন ও ওভারটাইম দেওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ থাকলেও তা মানা হয় না। এমনও অভিযোগ আছে, মাস শেষে আবাসন, বিদ্যুৎ বিলসহ বেতনের একটা অংশ কেটে নেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে। এছাড়া বছর শেষে লেভির টাকা কোম্পানি মালিকের বহন করার কথা থাকলেও মাস শেষে বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়।


জীবিকার তাগিদে সহায়সম্বল বিক্রি করে একজন ব্যক্তি ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া আসে। সেই খরচের টাকা তুলতে গিয়ে লেগে যায় কয়েক বছর।

জুলাই মাসে কলিং ভিসায় আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, আমাদের ফেক্টরিতে কাজের পরিমাণ এতো বেশি যে দুইজনের কাজ একজনকে করতে হয় তার পরও ওটি দেয় না! মাস শেষে কোনও রকমে ১১’শ থেকে ১২’শ রিঙ্গিত বেতন পাই, খাওয়া খরচ ও অন্য খরচ বাদে কতো টাকাই বাঁচে! এমন করে চলতে থাকলে কতো বছরে আসল টাকা উঠাতে পারবো তাও জানি না ৷ এ জন্য এ কোম্পানি থেকে অনেকই পালিয়ে যেতে চায় ৷


সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের আগে দূতাবাসের শ্রম শাখার কর্মকর্তারা বিভিন্ন ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে যান। এ সময় তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা, কর্মীদের সাক্ষাৎকার, কর্মস্থল ও হোস্টেল পরিদর্শন এবং নতুন কর্মী নিয়োগ করার সুযোগ, আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা, ওভার টাইম, বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেয় কি-না ইত্যাদি যাচাই করে।

এছাড়া বর্তমানে কর্মরত কর্মীদের পে স্লিপ চেক করা, কোম্পানির আয়-ব্যয়, শেয়ার, লাইসেন্স, প্রোডাকশন, এক্সপোর্ট ইত্যাদিও দেখা। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়ার অনুমতি আছে কি-না- সেটিও যাচাই করা হয়।

সূত্রে আরও জানা যায়, এ সব ক্ষেত্রেও কোম্পানি মালিক বা এজেন্টরা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়। দূতাবাসের কর্মকর্তারা যখন পরিদর্শনে যান তখন অন্য হোস্টেল ভাড়া নিয়ে নিজেদের বলেও চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে।

এদিকে, গত ১১ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় এসে মাত্র তিন দিনের মাথায় ৬৮ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরতের ঘটনায় তোলকালাম শুরু হয়। গত ১১ অক্টোবর বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স ক্যাথারাসীজ ওভারসীজের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার গ্লোব ফ্যাক্টরির নামে আশা ৬৮ জন বাংলাদেশিকে তিন দিন এয়ারপোর্টে আটকে রাখার পর তাদেরকে গত ১৩ অক্টোবর বিকালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। (চলবে)
একে//