পথচারী নাকি যাত্রী: কাকে বেছে নেবে চালকবিহীন গাড়ি
প্রকাশিত : ০৬:৩৬ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৭:১৬ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার
প্রযুক্তির কল্যাণে মানব চালকবিহীন গাড়ি এখন বাস্তব। উন্নত দেশগুলোতে পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যেই চলছে মনুষ্যবিহীন এসব স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি ও যানবাহন। তবে যদি এমন মুহুর্ত আসে যখন গাড়ির সামনে থাকা পথচারি অথবা ভেতরে বসা যাত্রী; দেই দুইয়ের মধ্যে থেকে একটিকে বাঁচাতে এবং অন্যটিকে মেরে ফেলতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গাড়িটিকে তাহলে কী হবে? একজন পথচারীকে বাঁচাতে মেরে ফেলবে গাড়ির চারজন যাত্রীকে নাকি একজন যাত্রীকে বাঁচাতে মেরে ফেলবে সড়কের একাধিক পথচারীকে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ২০১৪ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে এমআইটি মিডিয়া ল্যাব। মোরাল মেশিন বা নৈতিক যন্ত্র নামের এই প্রকল্পের আওতায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষের তথ্য ও উত্তর সংগ্রহ করেছে গবেষক দল।
যেভাবে এই ধারণা জন্ম নেয়
অতীত কালের একটি ধারণা ‘ট্রলি প্রব্লেম’ থেকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হন গবেষকেরা। এনবিসি সিরিজের একটি নাটকের এক পর্ব এ বিষয়ে গবেষকদের প্রথম নাড়া দেয়। সেই নাটকে দেখানো হয় যে, নৈতিকতা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান এমন এক অধ্যাপক চিদি আছেন একটি চলন্ত ট্রামের নিয়ন্ত্রণে। ট্রামটি যদি নিজে থেকে চলে আর অধ্যাপক চিদি কোন পদক্ষেপ না নেন তাহলে ট্রামটির ট্র্যাকে কাজ করতে থাকা ৫ জন ইঞ্জিনিয়ার মারা যাবেন। আর চিদি যদি ট্রাম্পটিকে ঘুরিয়ে অন্য ট্রাকে নিয়ে যান তাহলে মারা যাবেন এক জন প্রকৌশলী। এই দুই ট্র্যাকের বাইরে আর কোন বিকল্প নেই চিদির সামনে। এমন একটি অবস্থায় যদি মানুষ বিহীন গাড়ি চলে আসে তাহলে সেটির কী করা উচিত এই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন গবেষকেরা।
যেভাবে গবেষণা করা হয়
গবেষণার জন্য ৪০ মিলিয়ন মানুষের মতামত নেওয়া হয়। তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট দিয়ে একটিকে গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রী ও বাইরে থাকা মানুষদের থেকে একটিকে বেছে নিতে বলা হয়।
গাড়িতে থাকা যাত্রীর বিপরীতে যে বিকল্পগুলো দেওয়া হয় সেগুলো হলো-
১) একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী
২) একজন পরিচিত সন্ত্রাসী
৩) একদল বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ
৪) এক পাল গরু
৫) সড়ক অতিক্রম করতে থাকা একদল পথচারি যাদের ঐ সময়ে সড়ক অতিক্রম করা বারণ ছিলো
ন্যাচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, সকল মানুষই যেকোন ধরণের পশুর থেকে মানুষদের বাঁচাতে মত দিয়েছেন। সেই সাথে সর্বাধিক সংখ্যক জীবন বাঁচতে পারে এবং বয়স্কদের থেকে তরুণদের বাঁচাতেও ঐক্যমত ছিলো বেশিরভাগ মানুশেরই।
এছাড়া কেউ কেউ মত দিয়েছেন পুরুষদের থেকে নারীদের বাঁচাতে। অনেকে আবার পছন্দ করেছেন ধনীদের তুলনায় গরীবদের মৃত্যুর জন্য বেছে নিতে। তবে গাড়িতে থাকা যাত্রীর বিপরীতে নিয়ম ভঙ্গ করে সড়ক পারাপারকারীদের মৃত্যুর জন্য বেছে নিতে মত দিয়েছেন বেশিরভাগই।
গবেষক দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “মানবতার ইতিহাসে আমরা কখনও একটি যন্ত্রকে এই সিদ্ধান্ত নিতে দেইনি যে কার বাঁচা উচিত আর কার মরা উচিত; আর তাও মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময়ে। আমরা সেই সীমাবদ্ধতা সামনের যেকোন সময়ে অতিক্রম করতে যাচ্ছি”।
সূত্রঃ বিবিসি
//এস এইচ এস//