হঠাৎ বুক ধড়ফড় জটিল রোগের লক্ষণ: ডা. সোহরাবুজ্জামান
প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৩:৪২ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার
ডা. সোহরাবুজ্জামান
হঠাৎ বুক ধড়ফড় জটিল রোগের লক্ষণ। এমন অবস্থা দেখা দিলে হতে পারে অ্যারিদমিয়া বা জটিল হৃদস্পন্দন। এটি একটি নীরব ঘাতক রোগ। মূলত অনিয়মিত হৃদস্পন্দনকে বলা হয় অ্যারিদমিয়া। তাই হঠাৎ বুক ধড়ফড় শুরু হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে এসে চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রতি মিনিটে স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের মাত্রা ৬০ থেকে ১০০- এর কম বা বেশি হলে কিংবা দুটিই যদি ঘটে, তবে সেটি অ্যারিদমিয়ার লক্ষণ। সাধারণত হৃদস্পন্দন উৎপাদনকারী বৈদ্যুতিক সংকেত কোনোভাবে বাধা পেলে বা দেরি হলে তখনই জটিল হৃদস্পন্দনের উদ্ভব হয়।
বৈদ্যুতিক সংকেত যে বিশেষ কোষ থেকে উৎপন্ন হয়, তা ঠিকমতো কাজ না করলে বা হৃদয়ের ভেতর দিয়ে ঠিকমতো প্রবাহিত হতে না পারলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। শুধু এ রোগের আমেরিকাতেই প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ রোগী মারা যায়।
একটু সচেতন হলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান। তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালের সিনিয়র কন্সালটেন্ট ও কার্ডিওলজিস্ট। সেই সঙ্গে কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাব ও হার্ট রিদম সার্ভিসেসের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি হৃদরোগের বিভিন্ন দিক নিয়ে একুশে টিভি অনলাইনকে সাক্ষাতকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: অ্যারিদমিয়া বা জটিল হৃদস্পন্দন কি ?
ডা : আ প ম সোহরাবুজ্জামান: এটি হৃদয়ের তড়িৎ প্রবাহের জটিলতা যার ফলে হৃদয়স্পন্দন খুব দ্রুত অথবা ধীর গতিতে হয়। এমনটি হলে অবশ্যই রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে আসতে হবে। এটা শুধু ওষুধে নয় নিয়মিত ব্যায়াম ও পরিমিত খাবার গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।
একুশে টিভি অনলাইন: অ্যারিদমিয়া বা জটিল হৃদয়স্পন্দন উপসর্গগুলো কি কি ?
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: এই রোগে আক্রান্ত হলে নানা উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
বুক ধড়ফড়: এক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত হয়। যা অনেক ক্ষেত্রে তেমন ক্ষতিকারক হয় না এবং চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এ ধরনের সমস্যা যদি বারবার দেখা দেয় তখন বুঝতে হবে যে এটা হৃদয়ের অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট-এর কারণে হচ্ছে। এলেকট্রেফিজিওলজি স্টাডির মাধ্যমে তার সঠিকভাবে নির্ণয় করে ওষুধ বা রেড়িও ফ্রিকুয়েনসি অ্যাবলেশন এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা দরকার।
অজ্ঞান হওয়া/ মুর্ছা যাওয়া:
অজ্ঞান হওয়া বা মুর্ছা যাওয়া অনেক রোগীর সাধারণ ঘটনা, এবং অনেক ক্ষেত্রে একে স্নায়ুরোগ মনে করা হয়। কিন্তু এতে হৃদয় ও রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়া। এবং অস্থায়ীভাবে অজ্ঞান হওয়া। এক্ষেত্রে স্নায়ু সমস্যার চিকিৎসা খুবই কম কার্যকরী কয়। এই সময় রোগীর মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন মাথা ব্যাথা, হালকা বোধ করা। অবসাদ প্রচুর ঘাম হওয়া। বুক ধড়ফড় করা, দুর্বলতা এবং রোগী পানিশূণ্যতা রক্তস্বল্পতা ইত্যাদি উপসর্গগুলোকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
একুশে টিভি অনলাইন: ব্যক্তিবিশেষে কাজের কারণে উপসর্গগুলো দেখা দেয় কি ?
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: ব্যক্তিবিশেষে কিছু কাজের কারণে এই উপসর্গগুলো লক্ষ করা যায়। যেমন দীর্ঘক্ষণ ধরে একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে। এককথায় লাইনে দাড়িয়ে থাকার মতো। দীর্ঘক্ষন উষ্ণ ও আদ্র পরিবেশে থাকলে। মানসিক আঘাত পাওয়া- যেমন ভয় পাওয়া, দু:খের সংবাদ শোনা, রক্তাক্ত অবস্থা দেখা ইত্যাদি। কারো কারো খাওয়ার পরপরই এই উপসর্গ দেখা দেয়। কারণ তখন পাকস্থলিতে রক্ত সরররাহ বেশি প্রয়োজন হয়। ফলে মস্তিক রক্ত প্রবাহ বেরে যায়।
একুশে টিভি অনলাইন: কিছু সময় হঠাৎ হৃদয়ের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় কি কারণে ?
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: অনেক কারণে হঠাৎ করে হৃদয়ের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এর মূল কারণ অ্যারিদমিয়া বা জটিল হৃদস্পন্দন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদয়ের ক্রিয়া ১ ঘন্টা বন্ধ হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হৃদয়ের নিলয়ে উৎপন্ন হয়ে দ্রুত হৃদস্পন্দন হয়।
এ ধরনের জটিল হৃদস্পদনকে ভেন্ট্রিকুলার টেকিকার্ডিয়া বলে। জীবননাশক-এজটিলতা হৃদয় বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিটের ফলে ঘটে এবং ওই রোগীর পূর্বে কোন ধরনের হৃদয়ের অসুখ হয়ে থাকতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন: সিক সাইনাস সিন্ড্রোম কি ?
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: সাইনাস নোড হলো হৃদয়ের প্রাকৃতিক পেসমেকার যা হৃদযন্ত্রকে কার্যক্ষম রাখে। এর কাজে কোন ব্যাঘত ঘটলে সিক সাইনাস সিন্ড্রোম দেখা দেয়। এই ক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন অনেক কমে যায় এবং দুর্বলতা আবসাদ অথবা অজ্ঞান হওয়া হত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। মাঝে মাঝে হৃদস্পন্দন বেড়েও যেতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন: অ্যারিদমিয়া বা জটিল হৃদয়স্পন্দন এর কারণে কি হার্টে ব্লক দেখা দেয়?
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: অবশ্যই এরোগের কারণে হার্ট ব্লক দেখা দিতে পারে। স্বাভাবিক তড়িৎ প্রবাহের গতিপথে তড়িৎ সংকেতের ধীরগতি বা বাধাপ্রাপ্ত হলে হার্ট ব্লক বল হয়ে থাকে। এবং এতে হৃদস্পন্দন কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা, অবসন্নতা এবং অজ্ঞান হওয়া ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই ধরনের রোগীর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার স্থাপন করা উচিত।
একুশে টিভি অনলাইন: কি কারণে এই রোগ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে?
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, বিশেষ কিছু ওষুধ সেবন, ক্যাফেইন, প্রেসক্রিশপন ছাড়া ওষুধ সেবন ইত্যাদি অ্যারিদরিয়ার মূল কারণ।
একুশে টিভি অনলাইন: যেভাবে নির্ণয় করা যায়…
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: এ রোগের উপসর্গগুলো সহজে চিহ্নিত করা যায় না বলে অনেক সময় রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে। তবে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম, করোনারি এনজিওগ্রাম, ইলেকট্রোফিজিওলজি স্টাডির মাধ্যমেও অ্যারিদমিয়া নির্ণয় করা যায়।
একুশে টিভি অনলাইন: চিকিৎসা কি?
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই সাধারণ কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আনলেই হৃস্পন্দনের মাত্রা ঠিক হয়ে যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে শুধু ওষুধ সেবনে ফল পাওয়া যায়। তবে কোনো কোনো অ্যারিদমিয়া সত্যি ভয়ঙ্কর। সেসব ক্ষেত্রে রোগীর সার্জারির প্রয়োজন ।
একুশে টিভি অনলাইন: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ডা: আ প ম সোহরাবুজ্জামান: একুশে পরিবারকেও ধন্যবাদ।
টিআর/ এআর