দশম জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষ
সমাপনী ভাষণে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ১২:৩১ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:৩১ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার
দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই জনগণ নৌকায় ভোট দেবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুনরায় নির্বাচিত হতে পারলে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
গতকাল সোমবার দশম জাতীয় সংসদের সমাপনী অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে উন্নয়নের ছোঁয়া আজকে বাংলাদেশের জনগণের জীবনে লেগেছে নিশ্চয়ই আজকে তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য যে মেগা প্রজেক্টগুলো আমরা হাতে নিয়েছি সেগুলো সমাপ্ত করার সুযোগ দেবে এবং এজন্য আরও কিছু সময় আমাদের প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আজকে স্বাধীন, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও তারা অভিযান চালাচ্ছে এবং ইনশাআল্লাহ আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’
গ্রামের মানুষ যেন শহরের সুবিধা পায় সে জন্য প্রতিটি গ্রামকে তার সরকার শহর হিসেবে গড়ে তুলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যে উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে সেটা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।
সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছি ২০২৪ সাল পর্যন্ত যদি আমরা উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে পারি তাহলে জাতিসংঘের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের স্থায়ী স্বীকৃতিও পেয়ে যাবো। তার জন্য সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের ধারাবাহিকতা।
সরকার প্রধান বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা এ জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। তাছাড়া বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি সেগুলোও আমাদেরকে সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। তা এখন দৃশ্যমান। দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় দারিদ্র্যের হার ১৮ ভাগ, আমরা তার থেকেও দারিদ্র্যের হারকে কমিয়ে আনতে চাই। আমরা যদি ১৬-১৭ ভাগের নামিয়ে আনতে পারি তাহলে আমরা নিজেকে দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা তা করতে পারবো, যদি বাংলাদেশের জনগণ ভোট দেয় এবং আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারি বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করবো।’
এ সময় পুনরায় নির্বাচিত হতে পারলে আগামীতে ব্লু-ইকোনমির বাস্তবায়ন ঘটানোর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেন, ‘যদি আপনারা আমাদের ভোট দেন, আবার সেবা করার সুযোগ দেন, এ বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না।’
জাতির পিতার ভাষণের সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতি ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কন্ঠ মিলিয়ে বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে অবশ্যই সক্ষম হব।
তিনি এ সময় শতবর্ষ মেয়াদি তার সরকার গৃহিত ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ এরও উল্লেখ করে বলেন, তরুণ প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই তার সরকারের এই পরিকল্পনা।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং তার সরকারের উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক আমরা সৃষ্টি করেছি।
তিনি এ সময় ঢাকা থেকে দ্রুত দিনাজপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, পটুয়াখালী থেকে বরগুনা-পায়রা বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার জন্য দ্রুতগামী ট্রেন প্রতিষ্ঠাসহ সড়ক পথ এবং নদীগুলোকে ড্রেজিং করে নদীগুলোকে সচল করা, যাতে একশোটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুললে পণ্য আমদানি-রফতানি সহজ হয় তা তার সরকার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
ইতোমধ্যে দেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে এবং জনগণের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে । মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, ‘আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং নিম্ন মূল্যস্ফীতি এই অর্থনীতির সুফল গ্রামের তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আজকে গ্রামের মানুষের জীবন-যাত্রায় সেজন্য পরিবর্তন এসেছে, তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।
কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স সমমান প্রদানে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ৩৬ হাজার স্কুলকে জাতীয়করণ করে যান। আর তার সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করে। সেই সঙ্গে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ এবং স্কুলকে সরকারিকরণ করে, যা অন্য কোনও সরকার করেনি।
তিনি বলেন, তার সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত করে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের এই অধিবেশনটি শেষ অধিবেশন হতে যাচ্ছে। যদি কোনও দুর্ঘটনা বা দুর্বিপাক না ঘটে এটাই হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন।
তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও মজবুত হয়েছে। সংসদ সম্পর্কে মানুষের মনে যে বিরূপ ধারণা ছিল, তা দূর হয়েছে।
এই সংসদে কোনও খিস্তী-খেইর নয় বরং সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকায় বিরোধীদলের প্রশংসা করেন তিনি।
পরিশেষে জীবনানন্দ দাসের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার পংক্তির আলোকে তিনি পুনরায় এ সংসদে ফিরে আসারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সূত্র: বাসস
একে//