১০০ রোগীকে হত্যার কথা স্বীকার করলেন এই জার্মান নার্স
প্রকাশিত : ০৯:৪২ এএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার
জার্মানিতে নিলস হোগেল নামের সাবেক একজন নার্স স্বীকার করেছেন যে তিনি একশোজন রোগীকে হত্যা করেছেন। উত্তরাঞ্চলীয় ওল্ডেনবুর্গে নতুন করে তার বিচার শুরু হওয়ার প্রথম দিনেই তিনি আদালতের কাছে এই স্বীকারোক্তি দেন।
গোয়েন্দারা বলছেন, ৪১ বছর বয়সী নার্স নিলস হোগেল জার্মানির দুটো হাসপাতালে কাজ করেন। তিনি হাসপাতালে যে সব রোগীর সেবা-যত্ন করছিলেন, তাদের মধ্যে ১০০ জনের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করে তাদেরকে হত্যা করেন।
সরকারি কৌসুলিরা বলছেন, রোগীদের শরীরে অতিরিক্ত ডোজের ওষুধ দেওয়ার পর তাদের জ্ঞান ফিরিয়ে এনে তিনি তার সহকর্মীদের চমকে দিতে চেয়েছিলেন। এটাই ছিল তার উদ্দেশ্য।
হাসপাতালে নার্স হোগেলের সেবা যত্নে থাকা এ রকম লোকজনকে হত্যার দায়ে ইতোমধ্যেই তার যাবজ্জীন কারাদণ্ড হয়েছে।
নতুন করে বিচার শুরু হওয়ার পর আদালতকে তিনি বলেছেন, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
তিনি স্বীকার করেছেন যে ওল্ডেনবু্র্গে তিনি ৩৬ জন এবং পার্শ্ববর্তী ডেলমেনহোর্স্টে তিনি আরো ৬৪ জন রোগীকে হত্যা করেছেন।
আদালতের বিচারকরা তার কাছে তখন জানতে চেয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে হত্যার যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে সে সব সত্য কি-না। তখন নার্স হোগেল আদালতের কাছে এ সব অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, ‘মোটামুটি ঠিকই আছে।’
তার এই স্বীকারোক্তির ফলে নার্স নিলস হোগেল হয়ে ওঠলেন যুদ্ধোত্তর জার্মানির সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার।
তার এই বিচার আগামী মে মাস পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিচার চলাকালে নিহতদের কবর থেকে তাদের মৃতদেহ তুলে টক্সিকোলজি পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
বার্লিন থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জেনি হিল বলছেন, এই মামলাটি জার্মানির স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষের জন্যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ নিহতদের পরিবার থেকে নার্স হোগেলের বিরুদ্ধে এর আগে যখন অভিযোগ তোলা হয়েছিলো, কর্তৃপক্ষ সেগুলোকে খুব একটা আমলে নেয়নি।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, নার্স হোগেল হয়তো আরো বেশি রোগীকে হত্যা করে থাকতে পারেন। তাদের অনেককেই হয়তো দাহ করা হয়েছে। ফলে সে সম্পর্কে জানার সুযোগ খুব কমই আছে।
নার্স হোগেলের হাতে যারা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের আত্মীয় স্বজনরা এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
হোগেলকে প্রথম ধরা হয় ২০০৫ সালে যখন তিনি একজন রোগীকে প্রেসক্রাইব করা হয়নি এরকম একটি ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন। হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ২০০৮ সালে তার সাত বছরের সাজা হয়েছিল।
পরে তার আরও একটি বিচার হয় ২০১৪-২০১৫ সালে। ওই বিচারের সময় প্রমাণ হয় যে তিনি দুজনকে হত্যা করেছেন এবং আরও দু’জনকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সে সময় তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছিল।
নার্স হোগেল বলেছেন, তিনি এখন সত্য কথাটা বলে দিয়েছেন এবং আশা করছেন যে তার হাতে নিহত রোগীদের পরিবারের সদস্যরা এখন কিছুটা হলেও শান্তি পাবেন।
তিনি বলেছেন, খুব বেশি চিন্তাভবনা করে নয়, অনেকটা স্বতস্ফূর্তভাবেই তিনি এ সব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
বিচার শুরু হওয়ার পর প্রথমে তিনি মনোবিজ্ঞানীদের কাছে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি প্রায় ৩০ জন রোগীকে হত্যা করেছেন।
পরে এ সব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তের পরিসর আরও বাড়ানো হয়। কবর থেকে ১৩০ জনের মৃতদেহ তুলে পরীক্ষা করে দেখা হয় কী কারণে তারা মারা গিয়েছিলেন।
হাসপাতালের পুরনো কাগজপত্রও তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন। তাতে দেখা গেছে, নার্স হোগেল যখন ডিউটিতে ছিলেন তখন মৃত্যুর হার ছিল দ্বিগুণের মতো।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এমএইচ/