ঢাকা, রবিবার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১৪ ১৪৩১

আজ ইন্দিরা গান্ধীর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী  

প্রকাশিত : ০৬:৩৭ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৬:৪৪ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

আজ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতের এলাহাবাদে তার জন্ম। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার দুই দেহরক্ষীর গুলিতে প্রাণ হারান আজ থেকে ৩৪ বছর আগে। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিহত হন তিনি। স্বর্ণ মন্দিরে সেনা অপারেশনের বদলা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে মেরে ফেলা হয়।      

এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে ইন্দিরা হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। সেদিন প্রিয়দর্শিনীকে তারই দুই শিখ দেহরক্ষী সতবন্ত সিং ও বিয়ন্ত সিং অপারেশন ব্লু স্টার চলাকালীন স্বর্ণমন্দির শিখদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই হত্যা করেছিল। আর তারপরে শিখ বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো দেশজুড়ে।

মৃত্যুর আগে দিনের প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্টটা ছিল পিটার উস্তিনভের সঙ্গে। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর ওপরে একটা তথ্যচিত্র বানাচ্ছিলেন সেই সময়ে। আগের দিন ওড়িষ্যা সফরের সময়েও তিনি শুটিং করেছিলেন। দুপুরে ইন্দিরার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জেমস ক্যালিঘান আর মিজোরামের এক নেতার সঙ্গে।

সন্ধ্যাবেলায় ব্রিটেনের রাজকুমারী অ্যানের সম্মানে একটি নৈশভোজ দেওয়ার কথা ছিল তার। তৈরি হয়েই ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসেছিলেন তিনি। দুটো পাউরুটি টোস্ট, কিছুটা সিরিয়াল, মুসাম্বির জুস আর ডিম ছিল সেদিনের ব্রেকফাস্টে। খাবারের পরেই তৈরি হলেন তিনি। তখনই হাজির হন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার কে পি মাথুর।

রোজ ওই সময়েই ইন্দিরাকে পরীক্ষা করতে যেতেন তিনি। ভেতরে ডেকে নিয়েছিলেন ডাক্তার মাথুরকে। হাসতে হাসতে বলেছিলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান কী রকম অতিরিক্ত মেকআপ করেন? ৮০ বছর বয়সেও তার মাথার বেশির ভাগ চুল কালোই রয়েছে।

ঘড়িতে যখন নয়টা বেজে দশ মিনিট তখন ইন্দিরা বাইরে বের হলেন। বেশ রোদ ঝলমলে ছিল দিনটা। তবুও রোদ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আড়াল করতে সিপাহি নারায়ণ সিং একটি কালো ছাতা নিয়ে পাশে পাশে হাঁটছিলেন।

কয়েক পা পেছনেই ছিলেন ব্যক্তিগত সচিব আর কে ধাওয়ান আর তারও পেছনে ছিলেন ব্যক্তিগত পরিচারক নাথু রাম। সকলের পেছনে আসছিলেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার সাব ইন্সপেক্টর রামেশ্বর দয়াল। ঠিক সেই সময়েই সামনে দিয়ে এক কর্মচারী হাতে একটা চায়ের সেট নিয়ে পেরিয়ে গিয়েছিলেন। ওই চায়ের সেটে তথ্যচিত্র নির্মাতা পিটার উস্তিনভকে চা দেওয়া হয়েছিল।

ওই কর্মচারীকে ডেকে ইন্দিরা বলেছিলেন, উস্তিনভের জন্য যেন অন্য আরেকটা চায়ের সেট বের করা হয়। বাসভবনের লাগোয়া দফতর ছিল আকবর রোডে। দু’টি ভবনের মধ্যে যাতায়াতের একটা রাস্তা ছিল। সেই গেটের সামনে পৌঁছে ইন্দিরা গান্ধী তার সচিব আর কে ধাওয়ানের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

ধাওয়ান তাকে বলছিলেন যে ইন্দিরার নির্দেশমতো ইয়েমেন সফররত রাষ্ট্রপতি গিয়ানী জৈল সিংকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে তিনি সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই দিল্লি চলে আসেন। পালাম বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে সময়মতো যেন রাজকুমারী অ্যানের ভোজসভায় পৌঁছাতে পারেন ইন্দিরা সেই জন্যই ওই নির্দেশ।

হঠাৎই পাশে দাঁড়ানো নিরাপত্তাকর্মী বিয়ন্ত সিং রিভলবার বের করে ইন্দিরা গান্ধীর দিকে গুলি চালায়। প্রথম গুলিটা পেটে লেগেছিল। ইন্দিরা গান্ধী ডান হাতটা ওপরে তুলেছিলেন গুলি থেকে বাঁচতে। তখন একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে বিয়ন্ত সিং আরও দু’বার গুলি চালায়। সে দু’টি গুলি তার বুকে আর কোমরে লাগে। ওই জায়গার ঠিক পাঁচ ফুট দূরে নিজের টমসন অটোমেটিক কার্বাইন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সতবন্ত সিং।

ইন্দিরা গান্ধীকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে সতবন্ত বোধহয় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল। স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে ছিল। তখনই বিয়ন্ত চিৎকার করে সতবন্তকে বলে গুলি চালাও। সতবন্ত সঙ্গে সঙ্গে নিজের কার্বাইন থেকে চেম্বারে থাকা ২৫টা গুলিই ইন্দিরা গান্ধীর শরীরে গেঁথে দিয়েছিল।

৩ নভেম্বর মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থল রাজঘাটের নিকটস্থ শক্তিস্থল নামক স্থানে তার সৎকার সম্পন্ন হয়। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী চারদিন ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনায় প্রাণ হারান বেশ কয়েক হাজার শিখ। এই ঘটনা মূলত ঘটেছিল দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। ইন্দিরা-হত্যার তদন্তের জন্য গঠিত জাস্টিস ঠক্কর কমিশন ষড়যন্ত্রের জন্য পৃথক তদন্তের পরামর্শ দেয়। তবে সৎবন্ত সিংহ ও ষড়যন্ত্রকারী কেহার সিংহ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৮৯ সালের ৬ জানুয়ারি তাদের দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধি অনন্য অবদান রেখেছিলেন। যে কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ তাকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর সম্মান জানিয়েছে। ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালি জনগণের ওপর। যখন শুরু হলো গণহত্যা। তখন তিনি বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দিয়েছিলেন তার দেশের দরজা। সে সময় লাখ লাখ বাংলাদেশি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ইন্দিরা গান্ধীর অবদান ছিল অপরিসীম।

ইন্দিরা গান্ধীর প্রজ্ঞা, রাষ্ট্রনায়কোচিত দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে তাকে গত শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠতম রাষ্ট্রনায়কের আসনে বসিয়েছে। ১৯৭১ সালে ভারতে অর্থনৈতিক সংকট ছিল। ছিল চীনের নানা হুমকি। এত কিছুর পরও ইন্দিরা গান্ধী যেভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন এবং আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ে যে অবদান রেখেছেন, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।   

এসি