ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বাংলাদেশের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন করছে রাশিয়া  

প্রকাশিত : ১১:৩৯ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:৪০ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

বাংলাদেশের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন করছে রাশিয়া। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা বাণিজ্য জটিলতা কাটাতে একমত হয়েছে দুই বন্ধু দেশ। দু’দেশের মধ্যে শিগগিরই চালু হচ্ছে ব্যাংকিং সুবিধা। এছাড়া ওয়ার হাউজ স্থাপনসহ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত পণ্যবাজার সুবিধা দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাশিয়া।     

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ মানবশক্তি রপ্তানিতেও ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ-রাশিয়া সরাসরি ফ্লাইট চালু, দুই দেশ যৌথভাবে বাণিজ্যমেলা আয়োজন করবে। এছাড়া বাংলাদেশকে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে সিকিউরিটি প্রদানে সহায়তা দেবে রাশিয়া।      

মস্কোতে দুই পক্ষের মধ্যে ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন বিষয়ক ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিশনের প্রথম বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ১৪ সদস্যের বাংলাদেশের একটি দল অংশ নিয়েছে। এটির নেতৃত্বে ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম। দলটিতে ইআরডি, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।  

এছাড়া বৈঠকে রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. এস এম সাইফুল হক, কমার্শিয়াল কাউন্সেলর ড. মো. আশফাকুল ইসলাম বাবুল উপস্থিত ছিলেন।  

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে শিগগিরই রাশিয়ার সঙ্গে আন্তঃব্যাংক সম্পর্কোন্নয়নে তথা ডাইরেক্ট করেসপন্ডেন্ট ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক বাণিজ্য যোগাযোগে এলসি সুবিধার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। এটি বাণিজ্য ক্ষেত্রে ব্যাংকিং অসুবিধাগুলো দূর করবে। এটি চালু হলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার লেনদেন সহজে করা সম্ভব হবে।   

শুধু ব্যাংক লেনদেনের সুরাহাই নয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সহায়তা, ফিসারিজ, কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, টেলি-কমিউনিকেশন, সরাসরি বিমান ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ, ওয়ার হাউজ চালু এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির দ্বারও উন্মোচিত হচ্ছে দু’দেশের মধ্যে। বৈঠকে এসব বিষয়ে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কলা-কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শেষে একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়। রাশিয়ার পক্ষে প্রোটোকল স্বাক্ষর করেন রাশিয়ান সরকারের উপমন্ত্রী এবং ইন্টার গভার্নমেন্টাল কমিশনের কো-চেয়ারম্যান ইলিয়া ভি. শেসতাকভ এবং বাংলাদেশের পক্ষে কাজী শফিকুল আজম।      

রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. এস এম সাইফুল হক বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি সফল হয়েছে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উন্নয়ন ও সহযোগিতা বাড়ানো, ব্যাংকিং লেনদেন, তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা ও বিনিয়োগ সুবিধার বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক নিয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে।  

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া আমাদের পাশে ছিল। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করেছে রাশিয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়তে আমাদের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে রাশিয়া। রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনে রাশিয়ার সহযোগিতা তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। ইন্টার গভার্ণমেন্টাল কমিশনে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক প্রোটোকল স্বাক্ষরের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের পথ আরো একধাপ এগিয়ে গেল। এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন। 

বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর ড. মো. আশফাকুল ইসলাম বাবুল বলেন, শিগগিরই ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। রাশিয়া, বেলারুশ, আর্মেনিয়া, কিরগিস্থান ও কাজাকিস্থান নিয়ে এই কমিশন গঠিত। এটি স্বাক্ষর হলে ইন্টারগভার্নমেন্টাল কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজতর হবে এবং রাশিয়াসহ ইউরোশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের শুল্ক মুক্ত পণ্য সরবরাহের পথ সুগম হবে। এছাড়া বাণিজ্যের পরিমাণও বাড়বে।   

সর্বশেষ হিসাব মতে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার। এটি আগের বারের তুলনায় ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য, যা আগের বারের চেয়ে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। আর একই সময়ে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের আমদানি ৭৬ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পণ্য, যা আগের বারের চেয়ে দশমিক ৬ শতাংশ কম।

কেআই/এসি