ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ভেগানিজমের বিস্তার বাড়ছে দিন দিন

প্রকাশিত : ১০:৫১ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

ভেগান বা নিরামিষাশীদের খাদ্য তালিকায় কোনো প্রকার প্রাণীর কোনো মাংস থাকে না। এদের খাদ্য তালিকায় শুধু যে মাংস থাকে না এমন নয়। পোল্ট্রি, মাছ, দুগ্ধজাতীয় খাবার, ডিম ও মধু—এসবের কোনো কিছুই খান না একজন ভেগান। অর্থাৎ ভেগানরা ভেজিটেরিয়ানদের মধ্যেও আরও অনেক বেশি কট্টর।

এমনকি পশুর চামড়া, ওল বোনা ও মুক্তার ব্যবহারকেও সমালোচনার চোখে দেখেন ভেগানরা। ভেগান বা নিরামিষাশীদের সংখ্যা বাড়ছে। ভেগান জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন। ভেগান সোসাইটির তথ্য মতে, গত এক দশকে যুক্তরাজ্যে ভেগানিজমের বিস্তার বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। বৈশ্বিক ভাবেও মাংস-বিহীন খাবারের চাহিদা ২০১৭ সাল নাগাদ এক হাজার গুণ (১০০০%) বেড়েছে বেড়েছে। আর ২০১৮ সাল নাগাদ ভেগানিজমকে বিবেচনা করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ফুড ট্রেন্ড বা খাদ্যাভ্যাসের প্রবণতা।

ভেগানরা মূলত শাক-সবজি ও ফল-মূল জাতীয় খাদ্যই রাখেন তাদের খাদ্য তালিকায়। ১ নভেম্বর ছিল বিশ্ব ভেগান দিবস। এই দিবসকে ঘিরে আসুন জেনে নেওয়া যাক ভেগান আন্দোলনের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

১. ভেগানিজমের ইতিহাস:

১৯৪৪ সালে যুক্তরাজ্যের ডাল্টন ওয়াটসন প্রতিষ্ঠা করেন ভেগান সোসাইটি। ওয়াটসনই `ভেগান` শব্দটির প্রচলন ঘটান। তাই, ভেগান শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় এমন একজন ভেজিটেরিয়ান যে, এমনকি দুধ ও ডিম জাতীয় খাদ্যও গ্রহণ করে না।

খাদ্য তালিকায় মাংস না থাকাটা নতুন কিছু নয়। আজ থেকে আড়াই হাজারের বেশি (২৫০০) সময় আগে প্রাচীন ভারতে এই চর্চা ছিল। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাতেও এমন প্রচলন ছিল বলে জানা যায়।

কলিন স্পেনসার তার বই `ভেজিটেরিয়ানিজম: অ্যা হিস্ট্রি` গ্রন্থে ভারতে নিরামিষ আহারের শুরুর দিকের ঘটনা বলেছেন।

গ্রীক গণিত শাস্ত্রবিদ পিথাগোরাস নিজেও সব প্রাণীর প্রতি মমত্ব ও দয়া প্রদর্শনের পক্ষে বলেছেন। পিথাগোরাস ছিলেন প্রাচীন গ্রিক নাগরিক। খ্রিস্টের জন্মের ৫শ` বছর আগে তিনি জীবিত ছিলেন।

সত্যি বলতে কি, `ভেজিটেরিয়ান` ধারা জনপ্রিয় হয়ে উঠার আগে `পিথাগোরিয়ান ডায়েট` অর্থাৎ যারা খাদ্য তালিকায় মাংস পরিহার করতে তাদেরই বলা হতো পিথাগোরিয়ান ডায়েট মেনে চলা মানুষ।

২. স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব:

যুক্তরাজ্যে এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪৯ ভাগ মানুষ তাদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্য তালিকায় মাংস না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। কারণ গরুর মাংস ও প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত কৌটার মাংস খেলে অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে বলে সাম্প্রতিক অনেক গবেষণাতেই তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু নিরামিষাশী হয়ে গেলে কি সত্যি-সত্যি আপনার স্বাস্থ্যের কোনো উপকার হবে?

সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণা জানায় যে, হ্যাঁ, ভেগান হলে স্বাস্থ্যের কিছু উপকার সত্যিই হয় বটে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ভেগান হলেই কেউ দীর্ঘ জীবন পাবে।

৩. পরিবেশগতভাবে নিরাপদ

কিন্তু অদ্ভুত রকমভাবে লক্ষ্য করা গেছে যে, পৃথিবীতে ভেগানিজমের দিকে যেমন আগ্রহ বাড়ছে তেমনি আবার মাংস ভোগ করার পরিমাণও বেড়েছে। চীন ও ভারতের মতন দেশ, যাদের অনেক জনসংখ্যা আছে এবং যারা দ্রুত উন্নতির দিকে যাচ্ছে তাদের মধ্যে দেখা গেছে যে, মাংস ভোগের প্রবণতা ক্রমশই বেড়েছে।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন জানিয়েছে, পৃথিবীর বর্ধিত জনসংখ্যা এবং ধরিত্রীর প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে ভীষণ চাপ বাড়ার কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ সংকট দেখা দিতে পারে।

তবে, যদি টেকসই উপায়ে আরও ৭০ ভাগ বেশি খাদ্য উৎপাদন করত পারে তবে, এই সংকট এড়ানো সম্ভব।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মাংসের যোগান বাড়াতে খামারে যে ব্যাপক সংখ্যক গবাদি-পশু পালন হয় এতে করে প্রচুর মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। আর এই গ্যাস জলবায়ুর উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি। কিন্তু ২০৫০ সাল নাগাদ তা বেড়ে হবে প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি। এই জনবহুল পৃথিবীতে মাংস বাদ দিয়ে নিরামিষাশী হওয়াকে দায়িত্বশীল খাদ্যাভ্যাস বলে ব্যাখ্যা করছেন ভেগানরা।

৪. বাড়ছে রমরমা ব্যবসা:

বড় প্রচারণা, বিখ্যাত মানুষদের উদাহরণ দেখে বা সামাজিক মাধ্যমে সুন্দর দেখানো- এসব নানা কারণে নিরামিষ আহারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গ্লোবাল ডাটা রিপোর্ট বলছে, সারা দুনিয়া জুড়েই লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে ভেগানিজম বা নিরামিষাশীদের সংখ্যা। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই গত তিন বছরে ভেগানিজমের বিস্তার হয়েছে ৬০০% এর বেশি।

আর ভেগান সোসাইটির তথ্য মতে, গত এক দশকে যুক্তরাজ্যে ভেগানিজমের বিস্তার বেড়েছে ৪০০%। বৈশ্বিক ভাবেও মাংস-বিহীন খাবারের চাহিদা ২০১৭ সাল নাগাদ এক হাজার গুণ (১০০০%) বেড়েছে বেড়েছে। আর ২০১৮ সাল নাগাদ ভেগানিজমকে বিবেচনা করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ফুড ট্রেন্ড বা খাদ্যাভ্যাসের প্রবণতা।

৫. কট্টর ভেগানিজমের ক্ষতিকর দিক
ভেগানিজমের কেন্দ্রে রয়েছে প্রাণী জগতের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু সম্প্রতি ভেগানিজম নিয়েও কিছু বিতর্ক আর সমালোচনা দেখা দিয়েছে। ইদানীং অনেকস্থানে পশু-প্রেমী ও পশু-অধিকার রক্ষাকারী কর্মীদের দ্বারা পশু-পালনকারী খামারী বা কৃষক এবং কসাইদের দোকানগুলো হামলা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে। এছাড়া খুব বাজে আর আক্রমণাত্মক ভাষায় সমালোচনারও শিকার হচ্ছেন নিরীহ খামারী, কৃষক ও কসাইয়েরা।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

এসএইচ/