ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১

‘প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিন আজ

প্রকাশিত : ০৬:১৩ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৮:১১ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার

বাংলাদেশের সংগীত জগতের কালজয়ী গানের শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর তিনি রাজশাহীতে জন্মগ্রহন করেন। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। কয়েক দশক ধরে সেই সমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছেন শ্রোতারা। তার কণ্ঠ মধু ছড়ায়, তার শত শত গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে।      

সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ সব অনুভূতির গানই তিনি গেয়েছেন। তার কণ্ঠের অমীয় সুধায় পাগলপারা এ দেশের লাখ লাখ মানুষ। ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’ ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ ‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো’ বা ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’ এ ধরনের অসংখ্যা শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে তার।

বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সঙ্গীতশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ শিল্পী কখনই জন্মদিনে বিশেষ কিছু করেন না। তেমনি এবারও অনেকটা সাদামাটাভাবেই দিনটি পালন করছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে এন্ড্রু কিশোর বলেন, ‘আমার জন্মদিন নিয়ে কখনোই তেমন কোনো বাড়াবাড়ি ছিল না। যতটুকু প্রয়োজন পরিবার থেকে করা হয়। এবার আমার শাশুড়ি অসুস্থ, তাই তেমন কিছুই করা হচ্ছে না। আমার স্ত্রীকে তাই হাসপাতালে তার মায়ের পাশে থাকতে হচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাদের সবার প্রিয় আইয়ুব বাচ্চুও হঠাৎ করেই সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেছেন। তার শোক কাটাতে পারছি না। এমন সময় কোনো আনন্দ ছুঁতে পারছে না মনকে। সে আমার বন্ধু ছিলো। অনেক সময় তার সঙ্গে কেটেছে। এত স্মৃতির মানুষ, কাছের মানুষ চলে গেলে যে শূন্যতা আসে তা হুট করে পূরণ হয় না। আমি সবার কাছে বাচ্চুর জন্য দোয়া চাই, আমার জন্যও দোয়া চাই।’

বাংলা গানের এই প্লেব্যাক সম্রাট চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের জাদুতে সঙ্গীতপ্রেমীদের মাতিয়ে চলা এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে সঙ্গীতের পাঠ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে রাজশাহী বেতারে তালিকাভূক্ত হন। তার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে।

তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধারাক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর এখন প্লেব্যাক ও স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক`দিন আগে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথা ও ফরিদ আহমেদের সুর-সঙ্গীতে `অধিকার` ছবির একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আলম খানের সুর-সঙ্গীতে গেয়েছেন প্রয়াত সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হকের লেখা শেষ তিনটি গান। নতুন গান রেকর্ডিং ছাড়াও আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতার নজরুল মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন তিনি।

এন্ড্রু কিশোর একজন ব্যবসায়ীও। ১৯৮৭ সালে তিনি বরাবর আহমাদ ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডলি জহুর, দিদারুল আলম বাদল, শামসুল ইসলাম নান্টু সাথে টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য ‘প্রবাহ’ নামে একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তার দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সঙ্গ্গা আর দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক।

তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছুঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি, সবাইতো ভালোবাসা চায়, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন, ভালো আছি ভালো থেকো, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, চোখ যে মনের কথা বলে’।

এসি