তরিকুলকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় দিল বিএনপি নেতারা
প্রকাশিত : ১১:৪০ এএম, ৫ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ সোমবার সকাল ১০টায় এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী জানাজায় অংশ নেন। এসময় তাঁরা অশ্রুসজল নয়নে ত্যাগী এ নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
জানাজায় তরিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। জানাজার আগে তরিকুল ইসলামের ছোট ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বাবার রুহের মাগফেরাত কামনায় বক্তৃতা করেন।
অমিত বলেন, ‘আমার বাবা সারা জীবন আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে তিনি তার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন নিজের সর্বোচ্চটুকু দেওয়া। দলের নীতি, আদর্শ এবং সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি কখনো যাননি। তারপরও আমার বাবার কথাবার্তা, আচার-আচরণে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। দোয়া করবেন তার সন্তান হিসেবে আমরাও যেন দল, দেশ এবং মানুষের সেবা করতে পারি।
জানাজার আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরিকুল ইসলাম এক ইতিহাসের নাম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার অবদান গোটা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তিনি যখন চলে গেলেন, জাতি তখন এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। ফলে তার এই চলে যাওয়ায় বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো। এ শূন্যতা কেবল বিএনপির জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল মালেকের পরিচালনায় জানাজায় অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বরকতউল্লাহ বুলু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমকন হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্যে জানাজায় অংশ নেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মোহম্মদ ওয়াক্কাস, মহিউদ্দিন একরাম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজীব প্রমুখ।
জানাজা শেষে তরিকুল ইসলামের মরদেহে ফুল দিয়ে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিএনপির তরফ থেকে ফুল দেন বিএনপি’র মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা। এসময় তার কফিনে দলীয় পতাকা মোড়ানো হয়।
বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, মহিলাদল, ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রোববার বিকাল ৫টার দিকে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তরিকুলের। সন্ধ্যা ৭টায় তরিকুলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে তার শান্তিনগরের বাসায় নেওয়া হয়।
সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশের। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা একনজর দেখতে ছুটে আসেন। এর পর রাতে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
যশোর সদর থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য তরিকুল ইসলাম চার-দলীয় জোট সরকারের তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসার আগে তিনি ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। যশোর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তরিকুল ইসলাম।
তার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মো. ইসহাক ও মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম শোক জানিয়েছেন।
/ এআর /