তরিকুল ইসলাম এক ইতিহাসের নাম: মির্জা ফখরুল
প্রকাশিত : ১১:৫৭ এএম, ৫ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় প্রিয় সহকর্মীকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানান বিএনপি নেতারা।
সকাল ১০ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজা হয়। এসময় তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা বক্তৃতা করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরিকুল ইসলাম এক ইতিহাসের নাম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার অবদান গোটা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তরিকুল ভাই যখন চলে গেলেন, জাতি তখন এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। ফলে তার এই চলে যাওয়ায় বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো। এ শূন্যতা কেবল বিএনপির জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
জানাজায় তরিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। জানাজার আগে তরিকুল ইসলামের ছোট ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বাবার রুহের মাগফেরাত কামনায় বক্তৃতা করেন।
অমিত বলেন, ‘আমার বাবা সারা জীবন আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে তিনি তার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন নিজের সর্বোচ্চটুকু দেওয়া। দলের নীতি, আদর্শ এবং সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি কখনো যাননি। তারপরও আমার বাবার কথাবার্তা, আচার-আচরণে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। দোয়া করবেন তার সন্তান হিসেবে আমরাও যেন দল, দেশ এবং মানুষের সেবা করতে পারি।
রোববার বিকাল ৫টার পর রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান বিএনপি নেতা তরিকুল। তরিকুলের মৃত্যুর খবরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাসপাতালের সামনে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
খবর পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে তিনি প্রয়াত নেতার স্ত্রী নার্গিস ইসলাম, ছেলে সুমিত ও অমিতের সঙ্গে কথা বলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, আমিনুল হক, শায়রুল কবির খানও হাসপাতালে ছিলেন। মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না ভাই নেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী দর্শনের আপাদমস্তক এক নেতা।’
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘তরিকুল ভাই আমাদের নেতা ছিলেন। ৫০ বছর একসঙ্গে আমরা ছিলাম। মজলুম এ জননেতা আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার প্রথম ছিল রাজনীতি, শেষও রাজনীতি। এ রাজনীতি ছিল দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য। তরিকুল ইসলামই আমাদের আদর্শ।’
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল মালেকের পরিচালনায় জানাজায় অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমকন হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।
জোট নেতাদের মধ্যে জানাজায় অংশ নেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মোহম্মদ ওয়াক্কাস, মহিউদ্দিন একরাম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজীব প্রমুখ।
জানাজা শেষে তরিকুল ইসলামের মরদেহে ফুল দিয়ে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিএনপির তরফ থেকে ফুল দেন বিএনপি’র মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা। এসময় তার কফিনে দলীয় পতাকা মোড়ানো হয়।
যশোর সদর থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য তরিকুল ইসলাম চার-দলীয় জোট সরকারের তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসার আগে তিনি ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। যশোর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তরিকুল ইসলাম।
তার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মো. ইসহাক ও মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম শোক জানিয়েছেন।
/ এআর /