ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

‘জয়েন্টের ব্যথার উৎস জন্মেরও আগে’

প্রকাশিত : ০৭:৫০ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

শরীরের জয়েন্ট বা অস্থি সন্ধি সম্পর্কে মানুষ তখনই ভাবে, যখন লাগাতার ব্যথার কারণে চলাফেরাই কঠিন হয়ে পড়ে৷ শরীরে এই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সেই ব্যথার উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে৷

আমাদের শরীরের জয়েন্ট বা অস্থি সন্ধিগুলি বেশ কয়েক দশক ধরে নিখুঁতভাবে কাজ করে৷ কিন্তু কোনো এক সময়ে সেগুলি কেন গোলমাল করে এবং শরীরে ব্যথা সৃষ্টিকরে?

গবেষকদের অনুমান, অনেক মানুষের শেষ জীবনে যা ঘটে, তার উৎস জীবনের শুরুতেই খুঁজে পাওয়া যায়৷ এমনকি জন্মেরও আগে, ভ্রূণ অবস্থায়৷ সেই পর্যায়ে শরীরের মৌলিক কাঠামো গড়ার এক কর্মসূচি চালু থাকে৷

ভ্রূণ অবস্থায় আমাদের কঙ্কাল কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি দিয়ে গঠিত থাকে৷ ধীরে ধীরে সেটি হাড়ে পরিণত হয়৷ শুধু জয়েন্টের মতো নির্দিষ্ট কিছু অংশে কার্টিলেজ থেকে যায়৷ সেখানে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়৷

তখন আমরা জন্মানোর পরের অবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠি৷ একদিকে হাড়গোড়ের স্থিতিশীল কাঠামো, অন্যদিকে কার্টিলেজের পাতলা স্তরের সমন্বয়ে আমরা অসাধারণ ক্ষমতা অর্জন করি৷

কার্টিলেজ অবিশ্বাস্য রকমের স্থিতিশীল৷ কয়েকশ` কিলোগ্রাম ওজনের চাপ ও চরম অবস্থাতেও তা অক্ষত থাকে৷ কার্টিলেজ তার বিশেষ গঠনের কল্যাণে এমন ক্ষমতা রাখে৷

কার্টিলেজ আসলে নমনীয় এক পদার্থ, যা পানি, শর্করা প্রোটিন ও কয়েকটি স্তরের কোলাজেন তন্তু দিয়ে তৈরি, যেগুলির ঠাস বা ঘন বুনন সেটিকে স্থিতিশীল করে তোলে৷

কার্টিলেজের তন্তুকে সবসময় ভালো অবস্থায় রাখতে হয়৷কার্টিলেজের কোষগুলিই সেই কাজ করে৷ সেগুলি একা অথবা জোড়ায় জোড়ায় তন্তুর ফাঁপা অংশে থাকে এবং নিরলসভাবে তার নবায়নের কাজ চালিয়ে যায়, পুরানো তন্তু ও প্রোটিন চেন প্রতিস্থাপন করে৷

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক বছর ধরে সেই প্রক্রিয়া ভালোভাবেই চলে৷ তারপর কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আগে অথবা পরে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে৷ জয়েন্টে সমস্যা দেখা দেয়৷ কোষগুলিই কার্টিলেজের ক্ষতি করতে শুরু করে৷

ভ্রূণ অবস্থার কর্মসূচি আবার চালু করে কোষগুলি কার্টিলেজের মধ্যে গঠনের বদলে ক্ষয় ঘটাতে শুরু করে৷ ফলে শরীরের কিছু কোষের মৃত্যু ঘটে৷ বাকিগুলি কার্টিলেজের কোষে রূপান্তরিত হয়৷ সেগুলি কার্টিলেজকে শক্ত হাড়ে পরিণত করে৷

 জয়েন্টের পাশে অস্থিতুল্য শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি হয়৷ ফলে শরীর নাড়াচাড়া করা কঠিন হয়ে ওঠে৷ যে কর্মসূচি ভ্রূণ অবস্থায় আমাদের শরীরকে জীবনের জন্য প্রস্তুত করে তোলে, সেটিই আবার আমাদের শক্ত ও স্থবির করে তোলে৷

তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে

এমএইচ/