উইমেন্স ইনোভেশন ক্যাম্প ২০১৮-এ পুরস্কৃত ৩ নারী উদ্ভাবক
প্রকাশিত : ১২:৪৯ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
নারীদের নিয়ে দেশের প্রথম উদ্ভাবনমূলক প্রতিযোগিতা উইমেন্স ইনোভেশন ক্যাম্প-২০১৮-এ জাতীয় সমস্যা সমাধানে তিন জন নারী উদ্ভাবকের তিনটি আইডিয়াকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনটি আইডিয়া হলো উইমেন হোম, আমাদের শিশু আমাদের গর্ব, এবং বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলিং এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। হবিগঞ্জ জেলার দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইউএনডিপি এবং ইউএসএইড এর সহায়তায় এটুআই এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে উইমেন্স ইনোভেশন ক্যাম্প ২০১৮ এর বুট ক্যাম্পের মাধ্যমে চূড়ান্ত বাছাই পর্ব আয়োজন করেছে।
বুট ক্যাম্পের বিচারক মন্ডলীর দায়িত্ব পালন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জুয়েনা আজিজ, এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক এবং অতিরিক্ত সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এর অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. সাদেকা হালিম এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগ এর বিভাগীয় প্রধান ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম।
২০১৬ ও ২০১৭ সালের সফলতার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেও ‘জাতীয় সমস্যা সমাধানে নারীর উদ্ভাবন’ -এই স্লোগানকে সামনে রেখে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং এটুআই আয়োজন করেছে উইমেন্স ইনোভেশন ক্যাম্প-২০১৮। সামাজিক এবং আর্থিক কাঠামোতে নারীর ক্ষমতায়নের পরিবেশ তৈরিতে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পেশার নারীদের কাছে থেকে ৩১৬ টি উদ্ভাবন জমা পড়ে। এগুলোর মধ্যে থেকে ৩টি উদ্ভাবনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
এই প্রতিযোগিতায় শীর্ষ সেরা উদ্ভাবনী সমাধানের জন্য তিন নারী উদ্ভাবককে ১ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে এবং অন্যান্য আইডিয়ার মধ্য থেকে বাস্তবায়ন উপযোগী সমাধানগুলোকে সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তীতে আর্থিক অনুদান ও কারিগরী সহায়তা প্রদান করা হবে।
উইমেন্স ইনোভেশন ক্যাম্প-২০১৮ তে ৩১৬ টি আইডিয়ার মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ৯ টি আইডিয়ার উদ্ভাবকরা চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করেন। উক্ত প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে লিপি খাতুন-এর ‘উইমেন হোম’, তানজিলা ইসলাম-এর ‘আমাদের শিশু আমাদের গর্ব’ এবং আফরোজা আহমেদ-এর ‘বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলিং এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’ চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছে।
লিপি খাতুন-এর ‘উইমেন হোম’ এর মাধ্যমে নারীদের আবাসন সমস্যা নিরসনে অ্যাপ এর সাহায্যে ঢাকা শহরের মধ্যে খালি বাসা খুঁজে পাওয়ার আইডিয়া প্রদান করেছেন। একটি ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ এর মাধ্যমে কোন এলাকায় কর্মজীবী নারী এবং ছাত্রীদের জন্য বাসা খালি হবে, তার ভাড়া, বাসার ভেতরের ছবি, এবং বাসা সম্পর্কে সমস্ত তথ্য ও ফিচার জানা যাবে। কর্মজীবী নারীরা অফিসে এবং অফিসের বাইরে যে কোনো স্থান থেকে স্মার্টফোনের মাধ্যমে তাদের কর্মস্থলের আশেপাশের এলাকায় বাসা খুজতে পারবেন। এই এই ব্যবস্থার মাধ্যমে মেয়েরা যেকোন বিপদে জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় থানা এবং অভিভাবককেও জানাতে পারবেন।
দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা তানজিলা ইসলাম একটি গেম এর আইডিয়া দিয়েছেন, যা মূলত যৌন অত্যাচার এবং এ বিষয়ক বিভিন্ন জ্ঞানমূলক শিক্ষা অর্জনে শিশুদের সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। তার আইডিয়া ‘আমাদের শিশু আমাদের গর্ব’ এর মাধ্যমে মজার কিছু টাস্কের ভেতরে যৌন-শিক্ষা ও যৌন নির্যাতন সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেওয়া থাকবে। গেইমের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে যার সাথে বাস্তব জীবনের মিল থাকবে। গেইমটি এমনভাবে সাজানো হবে যেন তারা খেলাচ্ছলে এধরনের শিক্ষা লাভ করতে পারে।
আফরোজা আহমেদ-এর আইডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিলিং এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানসিক এবং সামাজিক সমস্যা দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হচ্ছে কিন্তু সকল বিশ্ববিদ্যালয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়মিত প্রদানে সক্ষম নয়। এছাড়া, মানসিক অসুস্থতার সাথে জড়িত সামাজিক ট্যাবু তাদেরকে সহায়তা চাইতে এবং তাদের সুষ্ঠু কর্মসূচি পরিচালনার জন্য বাধা সৃষ্টি করে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক ও সামাজিক সমস্যা, তাদের মনস্তাত্ত্বিক অ্যাসেসমেন্ট এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে এই অ্যাপ্লিকেশনে জানতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মৌলিক প্যাকেজ তৈরি করা হবে যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত মানসিক চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকবে।
প্রসঙ্গত, এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হলো জাতীয় পর্যায়ে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা চিহ্নিত করা এবং একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারীদের দ্বারা এগুলোর উদ্ভাবনী সমাধান আহবান করা। বিজয়ী আইডিয়াগুলোকে এটুআই ইনোভেশন ফান্ডের আওতায় প্রকল্প আকারে বিবেচনাপূর্বক সফল বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন করা হয়ে থাকে।
//এস এইচ এস//