ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা খাবেন: তাসনিম আশিক
প্রকাশিত : ০৩:১৯ পিএম, ৭ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:৪০ এএম, ৮ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
পুষ্টিবিদ তাসনিম আশিক
বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটায় এরকম প্রধান পাঁচটি কারণের মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ মারা যায় এবং প্রতি ১০ সেকেন্ডে দুইজন ডায়াবেটিস রোগী সনাক্ত করা হয়। তবে সঠিক নিয়ম মেনে খাবার খেলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন পুষ্টিবিদ তাসনিম আশিক।
সম্প্রতি ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি সাক্ষাতকার দিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনকে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন : ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বা নিয়ন্ত্রণে কি কি খাবার খাওয়া ভাল ?
তাসনিম আশিক: ডায়াবেটিস রোগকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকি।এদের মধ্যে অনেকেই ইনসুলিন গ্রহণ করে। আবার অনেকেই ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। তাদের খাদ্য তালিকা তৈরি করার আগে ডায়াবেটিসের ধরণ কেমন সেটা আগে জেনে নিতে হবে। পাশাপাশি অন্য কোনও রোগ আছে কি না পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে। রোগী কি ধরনের কাজ করে চাকরিজীবী না গৃহিণী সেটা জেনে নিতে হবে। এর সঙ্গে তার অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন সেটা জেনে নিতে হবে। এরপর তাদের একটি সঠিক খাদ্যাভ্যাস বা ব্যালেন্স ডায়েট গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেজন্য নিকটস্থ একজন পুষ্টিবিদের সাহায্যে নিজের ক্যালরির চাহিদা অনুযায়ী একটি খাদ্যতালিকা বা ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডায়াবেটিস রোগীকে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করে খেতে হবে।
এবং অবশ্যই ফাইবার জাতীয় খাদ্যের দিকে জোর দিতে হবে।কারণ ফাইবার বা আশ সমৃদ্ধ খাবারে ক্যালরি মূল্য কম থাকে যা ডায়াবেটিক রোগের ক্ষেত্রে অনেক উপকারি।
মূল ৬টি উপাদানের উপরে ভিত্তি করে তাদের খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হয়। সেগুলো হলো- কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন,ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস ও পানি। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য উপাদান থেকে খাবার নির্ধারণ করতে হবে। এবং একজন ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকে। রোগীকে যতুটুকু পরিমান কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয় অতটুকু পরিমান কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।
একুশে টিভি অনলাইন: ডায়াবেটিস রোগীরা দেহের প্রয়োজনীয় ক্যালরি কীভাবে পেতে পেরে ?
তাসনিম আশিক: ক্যালরির হিসাবটা একটু অন্য রকম। দেহের ওজন, উচ্চতা, বয়স এবং তার ডায়াবেটিস এর ধরণ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা নির্ধারণ করা হয়। একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: ডায়াবেটিস রোগীদের সকালে খাদ্য তালিকা ?
তাসনিম আশিক: সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের নির্ধারিত খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহন করা উচিত। যেমন: লাল আটার রুটি, পাশাপাশি ১ কাপ রঙ্গিন সবজি সেই সঙ্গে একটি সিদ্ধ ডিম খেতে পারে। তবে আলু ও মাটির নিচে উৎপাদিত হয় এ জাতীয় সবজি কম খেতে হবে।
এবং অবশ্যই যে কোন তরকারি নির্ধারণ করা পরিমাপ মতো তৈল, মশলা নিয়ে রান্না করে খাবেন। মধ্য সকালে রোগীর জন্য নির্ধারিত ডায়াবেটিস বিস্কিট বা মুড়ি খেতে পারে। বা কিছু পরিমাণ ফল খেতে পারে। তবে অবশ্যই যে সব ফলে সুগারের পরিমাণ অনেক কম, যেমন :আঙ্গুর ,আপেল ,কমলা,মালটা ইত্যাদি।
একুশে টিভি অনলাইন: দুপুরে ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা কেমন হবে ?
তাসনিম আশিক: ডায়াবেটিস নির্দিষ্ট মাত্রার বাইরে গেলে তা শরীরের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণে রাখাই সর্বোত্তম পস্থা। এজন্য প্রয়োজন সঠিক নিয়মানুবর্তিতা। এর পাশাপাশি কিছু খাবারও ডায়াবেটিস রোগীকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। দুপুরে খাবার তালিকায় ভাত রাখতে হবে তবে অবশ্যই পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবে ।যেমন মাছ, মুরগীর মাংস,পাতলা ডাল, ইত্যাদি। সেই সাথে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমান শাক/সবজি থাকতে হবে কারণ শাক /সবজিতে প্রচুর পরিমান ফাইবার রয়েছে যা ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।
একুশে টিভি অনলাইন: ডায়াবেটিস রোগীদের স্যন্ধায় খাদ্য তালিকা কেমন হবে ?
তাসনিম আশিক: সন্ধ্যার নাস্তা বা বিকেলের নাস্তায় টকদই খাওয়া যেতে পারে কারণ এতে কোন সুগার ও ট্রান্স ফ্যাট নেই সেই সাথে ক্যালসিয়ামের চাহিদাও পূরন করছে। এর সাথে বিভিন্ন ধরনের ফল নির্ধারিত পরিমাপ অনুযায়ী সালাদ বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কোন কোন সময় সবজি বা চিকেন দিয়ে তৈরি করা ক্লিয়ার স্যুপ ও খাওয়া যেতে পারে (তবে কর্নফ্লাওয়ার ব্যবহার এর পরিমান অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কারন এটি কার্বোহাইড্রেট)। ডায়াবেটিস বিস্কিট ও খাওয়া যেতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন: ডায়াবেটিস রোগীদের রাতের খাবার কেমন হবে?
তাসনিম আশিক: রাতের খাবারে আটার রুটি সাথে সবজি ও প্রোটিন চাহিদা অনুযায়ী মাছ/মুরগীর মাংস খাবে ।রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই এক গ্লাস গরুর দুধ বা এখন ডায়াবেটিক মিল্ক পাওয়া যায় বাজারে সেটি খাওয়া উচিত। সুগার বেরে যাওয়া যেমন ক্ষতিকর অর্থাৎ হাইপারগ্লাইসেমিয়া হওয়া তেমনি সুগার একেবারে কমে যাওয়া অর্থাৎ হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়াও ক্ষতিকর এজন্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্তা সঠিক রাখার জন্য অবশ্যই খাদ্যতালিকা ও ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশন মেনে চলা জরুরী।
সেই সাথে সারাদিন পরিমানমত পানি গ্রহন করতে হবে। সঠিক খাবার গ্রহন ,পরিমান মত হাঁটা ও ব্যায়াম করা এবং নির্ধারিত ঔষুধ গ্রহণ বা ইনসুলিন গ্রহনের মাধ্যমে অবশ্যই ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
টিআর/