শীতে চুলকানি হয় যে কারণে : ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার
প্রকাশিত : ০৪:৪৭ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:৩১ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার
ভোরের প্রকৃতিতে হাত বাড়লেই ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব চলে এসেছে প্রকৃতিতে। সকাল-সন্ধ্যে ঘাসের ওপর মুক্তোর মতো দেখা যাচ্ছে শিশিরের কণা। গাছ থেকে ঝরছে পাতা, ঝরছে শিউলি ফুল। শেষ রাতে গায়ে চাদর চাপাচ্ছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে রাজধানীতে শীতের আমেজ দেখা দিয়েছে। এমন ঠাণ্ডা অবহাওয়ার কারণে অনেক শরীরে চুলকানি বা বডি ইচিংয়ের সমস্যা হতে পারে। সঠিক সময় চিকিৎসা না করালে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে।শীতের সময়ে নানা রোগ ও এর প্রতিকার নিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চর্ম ও যৌন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: শীত আসলে শরীরে চুলকানি কেন দেখা দেয়?
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার: শীত আসলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ময়েশ্চার কমে যাওয়ার কারণে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে য়ায়। এমন অবস্থায় সব চেয়ে বেশি রোগে আক্রান্ত হয় শিশু ও বৃদ্ধরা। যে কারণে অনেক সময় শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া শীতকালে এক বিছানায় চাপাচাপি করে ঘুমানো এবং অপরিস্কার পোষাক পরিধান করার কারণে সংক্রমিত হয়ে পারে। এ ক্ষেত্রে শরীরে অসম্ভব রকম চুলকানি হতে দেখা যায়। রাতের বেলা চুলকানির তীব্রতা আরও বাড়ে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই একটু দরকার বাড়তি সচেতনতা।
একুশে টিভি অনলাইন: বডি ইচিংয়ের ধরনগুলো কী ?
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার: আমরা প্রথমে যেটি বলি ভাগ্যিস ইচিং ছিল। এই সমস্যাকে সাধারণ মনে হলেও তা মোটেও সাধারণ নয়। অনেক কারণে এটি হতে পারে। কিছু কিছু দেখা যায় স্বাভাবিক কারণ। যেমন যাদের ত্বক খুব শুষ্ক, শীতকালে যখন ময়েশ্চার কমে যায়, তখন দেখা যায় চুলকাতে পারে। কারো যেমন ধরেন রক্তশূন্যতা আছে, সেখান থেকে সারা গা চুলকাতে পারে। কারো ডায়াবেটিস আছে, সেখান থেকে সারা গা চুলকাতে পারে। কারো কারো হরমোনে সমস্যা আছে, যেমন আমরা বলি থাইরয়েডের যদি কোনো তারতম্য হয়, বা কম বেশি হয়, দুটো থেকেই চুলকানি হতে পারে। এ ছাড়া সিস্টেমিক রোগ—যেমন অবসট্রাকটিভ জন্ডিস, লিভার সমস্যা; এসব থেকে ইচিং হতে পারে। কিডনিতে যাদের সমস্যা আছে, দেখা যায়, সারা গা চুলকাচ্ছে। এমনকি ম্যালিগন্যান্সি, রক্তের ক্যানসার সেখান থেকে সারা গায়ে ইচিং হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে গরম পানিতে গোসল করে চুলকাচ্ছে। কারো কারো দেখা যায় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করে চুলকাচ্ছে। এটা বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
একুশে টিভি: শীতকালে কেন শরীরে চুলকানি বেশি দেখা দেয় ?
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার: শীতে মানুষের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। শীতকালে মানুষ মোটা কাপড় পরিধান করে। যা অনেক সময় অপরিষ্কার, অপরিছন্ন থাকে। ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে থাকে ও নিজেও অপরিচ্ছন্ন থাকে তাদের ক্ষেত্রে ত্বকের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কয়েকটি সাধারণ চর্মরোগ হচ্ছে : পাঁচড়া, খুজলি ও দাদ। তবে পাঁচড়া জাতীয় চর্মরোগের লক্ষণ হলো আঙ্গুলের মাঝখানে, কব্জিতে, কোমরের চারদিকে, যৌনাঙ্গের আশপাশে, শরীরের অন্যান্য অংশেও ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা যায়।
একুশে টিভি অনলাইন: ত্বকের কারণে যেই চুলকানি হচ্ছে সেগুলো কী ?
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার: বেশির ভাগ ত্বকের সমস্যাতেই চুলকানি হয়। আমাদের দেশে একটা খুব প্রচলিত রোগ, শীতকালে অনেক বেশি হয় স্ক্যাবিজ। এক সঙ্গে অনেক লোক থাকে, একজনের কাছ থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যায়। পুরো পরিবারকে চুলকাচ্ছে। একধরনের পরজীবী দিয়ে এটা হয়। চুলকাবে রাতে বেশি। রাতে যখন বেশি চুলকানি হয়, আমরা ভাবি স্ক্যাবিজ হতে পারে। আমরা এসব লক্ষণগুলো খুঁজি। দেখি আঙুলের ফাঁকে কোনো দানা দানা আছে কি না। জেনিটাল রিজিয়নে, নারীদের স্তনের নিচে, খাঁজগুলোতে কোনো দানা দানা আছে কি না। পারিবারিক ইতিহাস নিচ্ছি আমরা। চুলকানির ধরন দেখে আমরা পুরো বিষয়টিকে নির্ণয় করে ফেলি।
একুশে টিভি অনলাইন: চুলকানির রোগের লক্ষণ কি?
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার : আক্রান্ত স্থানে সব সময় চুলকানির ভাব অনুভূতি হয়, না চুলকিয়ে থাকা যায় না, চুলকাতে চুলকাতে চামড়া উঠে যায়, ফুসকুড়িগুলোয় পুঁজ/ পানি জমে, আবার চুলকালে পুঁজ ছড়িয়ে পড়ে ও চুলকানি অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়, ব্যথায় শরীরে জ্বর আসে।
একুশে টিভি অনলাইন: চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে করণীয় কি?
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার: শীতকালে শরীর ও ত্বক খুবই শুষ্ক হয়ে যায়। ময়েশ্চার কমে যায়, তাই বিভিন্ন চুলকানি দেখা দেয়। এসব থেকে মুক্তি পেতে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ময়েশ্চার ক্লিম ব্যবহার করা যায়। এছাড়া যদি তাতে কোন সমাধান না হয় তাহলে অবশ্যই।
একুশে টিভি অনলাইন: আপনার মূল্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার: একুশে পরিবারকেও ধন্যবাদ।
টিআর/ এসএইচ/