ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা বলবেন সিইসি

প্রকাশিত : ০৫:২৮ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৭:২৮ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সন্ধ্যায় ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ের মধ্যে নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার একযোগে এই ভাষণ প্রচার করবে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনগুলো বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ফিড নিয়ে প্রচার করতে পারবে। সকালে কমিশন সভায় তফসিল চূড়ান্ত হয়।

এদিকে আজকের মধ্যে মাঠপর্যায়ে মনোনয়ন ফরমসহ নির্বাচনী মালপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির সহকারী সচিব সৈয়দ গোলাম রাশেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইস্যু করে বলা হয়, মনোনয়ন ফরম, জামানত বই, রসিদ বই ও আচরণ বিধিমালা ৮ নভেম্বর তেজগাঁও প্রিন্টিং প্রেস থেকে দেশের সব জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। তাঁরা নির্বাচনী মালপত্র গ্রহণ করবেন।

নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা অনুসারে তফসিল ঘোষণার পর সভা-সমাবেশের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আসবে। আজ রাত থেকেই সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। জনচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে, এমন কোনো সড়কে জনসভা, এমনকি পথসভা করা যাবে না। মাইকের ব্যবহার সীমিত করা হবে। ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের ২১ দিন ছাড়া কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারও নিষিদ্ধ থাকবে। এসব নিয়ম লঙ্ঘন হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে কমিশনসভায় তফসিল চূড়ান্ত হবে। ওই সভাতেই অনুমোদন করা হবে ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা সিইসির ভাষণের খসড়া। পাশাপাশি নির্বাচনের তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে বৈঠকে।  

ওই বৈঠকের পরই নির্বাচন কমিশন ভবনে সিইসির কক্ষে তার ভাষণ রেকর্ড করা শেষ হয়েছে। জানা গেছে, জাতির উদ্দেশে দিতে যাওয়া সিইসির ভাষণ ১০-১২ মিনিট দীর্ঘ হতে পারে।

নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। জানা গেছে, জাতির উদ্দেশে সিইসি ১০-১২ মিনিটের একটি বক্তব্য দেবেন। এর খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সিইসি তার বক্তব্যে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাবেন। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করবেন।

পাশাপাশি রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, গাফিলতি ও শৈথিল্য প্রদর্শন করলে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি থাকবে। নির্বাচনী আইনকানুন ও আচরণ বিধিমালা সংশোধনে তার কমিশনের নেয়া পদক্ষেপ জাতিকে জানাবেন সিইসি। তার বক্তব্যে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েন, সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়েও উঠে আসবে।

পাশাপাশি রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেবেন। দায়িত্বে ব্যর্থতা, গাফিলতি ও শৈথিল্য প্রদর্শন করলে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুশিয়ারি থাকবে সিইসির ভাষণে।

সিইসির তার ভাষণে বর্তমান কমিশনের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরতে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি উল্লেখ করবেন। নির্বাচনী আইনকানুন এবং আচরণ বিধিমালা সংশোধনে তার কমিশনের নেয়া পদক্ষেপ জাতিকে জানাবেন।

নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েন, সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়েও উঠে আসবে সিইসির ভাষণে। এ ছাড়া দ্রুত তফসিল ঘোষণার কারণও তিনি ভাষণে তুলে ধরতে পারেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ (আরপিও) ঋণখেলাপিসংক্রান্ত বিধিতে ত্রুটি রেখেই এ তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চলায় ৪ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার ইসির পরিকল্পনা থাকলেও পরে সরে আসে। ওই দিনই কমিশনের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় আজ বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা হবে।

এদিকে ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে আনা হয়েছে। এবারও বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

এক্ষেত্রে বর্তমানে পদায়নকৃত কর্মরতদেরই দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে কয়েকটি জেলায় পরিবর্তন আনতে পারে ইসি।এ ছাড়া ৮ নভেম্বর রাজধানীর গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস থেকে মনোনয়নসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম, আচরণ বিধিমালাসহ নির্বাচনীসামগ্রী বিতরণ করা হবে। দেশের সব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার উপযুক্ত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব মালামাল সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার পর কাল শুক্রবার থেকে সারা দেশে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে। প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখা হচ্ছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ (আরপিও) ঋণখেলাপিসংক্রান্ত বিধিতে ত্রুটি রেখেই এ তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে।

৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে। এর আগে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত বেশ কিছু দল বর্জন করেছিল। ফলে ওই ভোটে দেড় শতাধিক আসনের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। এবারেও একই ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধ অব্যাহত রয়েছে।

সিইসি জানাবেন, এবার পুরাতন পদ্ধতির পাশাপশি ভোট গ্রহণে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেকগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ ভোট গ্রহণের ইভিএন ব্যবহার সফল হয়েছে। সবশেষে কমিশনের সিন্ধান্তে মোতাবেক একাদশ জাতী সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করা করবেন। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ,মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ,প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ, ভোট গ্রহণের তারিখ,সন্ধ্যায় জানা যাবে।
 
টিআর/