বাংলাদেশে প্রায় ৬ কোটি নারী ক্যান্সার ঝুঁকিতে
প্রকাশিত : ০৬:১৯ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৩২ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বিভিন্ন বাঁধা বিপত্তি পেড়িয়ে এক সময়ের ‘তলা বিহীন ঝুড়ি’ রাস্ট্রটি আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। সবক্ষেত্রেই উন্নতি আজ দৃশ্যমান। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশের আরো বেশি অগ্রগতি দরকার। বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে। রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা থেকে শতভাগ সাফল্য এখনো আসেনি।
ক্যান্সার নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই একটি মারাত্মক ব্যধি। তবে নারীর বেলায় বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সারের ঝুঁকিটা যেন একটু বেশিই। যেমন, তিন সন্তানের জননী রাবেয়া ফেরদৌসী। বয়স ৩৭। স্বামী বেসরকারী এক প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। রাবেয়া নিজেও ছিলেন একজন চাকরিজীবি। কিন্তু আজ প্রায় চার বছর হল চাকরী ছেড়ে এখন পুরোপুরি গৃহিনী। কারন সন্তানদের দেখাশোনার কেউ নেই। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তিনি খুব অসুস্থ। কিছুদিন পর পর আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বরে। অনেক ডাক্তার দেখানো আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল রাবেয়া ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। একেবারে শেষ ধাপে।
আরেক নারী শাহেদা আক্তার চাকরী করেন এক মোবাইল কোম্পানীতে। স্বামী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে ভালই চলছিল তার সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই তার পরিবারে নেমে আসে দুঃখ। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা যায় শাহেদার ব্রেস্ট ক্যান্সার।
মিথিলার বিয়ে হয়েছে মাত্র এক মাস আগে। এখনো হাতে লেগে রয়েছে বিয়ের মেহেদি। বিয়ের আগে থেকেই তার প্রায় সময় অল্প অল্প জ্বর লেগেই থাকত। জ্বর আসলেই সে প্যারাসিটামল অথবা নাপা খেয়ে নিত। এই জ্বর নিয়ে কখনো ডাক্তারের কাছেও যায়নি মিথিলা।
বিয়ের পর স্বামী বিষয়টি জানতে পেরে নিয়ে যায় তাদের পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল মিথিলার ফুসফুস ক্যান্সার। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই যেন পাঁয়ের নিচের মাটি সরে যায়।
সম্প্রতি পরিচালিত এক জরীপে দেখা যায়, বাংলাদেশর প্রায় ছয় কোটি নারী কোনো না কোনোভাবে ক্যান্সার ঝুকিতে রয়েছেন। শুধুমাত্র সারভাইক্যাল ক্যান্সারে প্রতি বছর ১২ হাজার নারী আক্রান্ত হন এবং এদের মধ্যে ৬ হাজার নারীর মৃত্যু হয়।
অনকোলজিষ্ট অধ্যাপক ড. মো. ইহতেশামুল হক বলেন, বাংলাদেশে মৃত্যুর ষষ্ঠ প্রধান কারণ ক্যানসার। বাংলাদেশে নারীদের ১৬.৯০ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে, ১৫.৬০ শতাংশ জরায়ু ও জরায়ুমুখ এবং ১১.৯০ শতাংশ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত। এছাড়াও পুরুষদের ২৩.৯০ শতাংশ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর, ২২.৯০ শতাংশ মুখ গহ্বর এবং ১৫.৯০ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত।
তিনি বলেন বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর নতুন করে এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন আরও দুই লাখ মানুষ। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন আরও দেড় লাখ মানুষ- পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি।
গাইনি বিশেষজ্ঞ ড. মনোয়ারা বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সারের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এরমধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী। দেশে প্রায় ছয় কোটি নারী কোনো না কোনোভাবে ক্যানসার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশই ডাক্তারের কাছে আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে। তখন আসলে ডাক্তারদের আর তেমন কিছুই করার থাকে না। বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সারের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারে কোন ধরনের ব্যাথা থাকে না। যার ফলে অধিকাংশ নারীই বুঝতে পারেননা যে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য দরকার সচেতনতা। প্রয়োজন কয়েক মাস পর পর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নেওয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এর সংখ্যাও অপ্রতুল। সারা দেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র ১৫০ জন। এছাড়াও অধিকাংশ হাসপাতালে নেই কোন ক্যান্সার সেন্টার। আবার ক্যান্সার নির্ণয়ের যন্ত্রপাতিও যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে তিনি সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের আরো বেশী জোর ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রেজিষ্টার ড. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রায় সব ক্যান্সারই মরন ঘাতক। এজন্য দরকার দ্রুত সময়ে সঠিক চিকিৎসা।
তিনি বলেন, অনেক সময় রোগ নির্ণয় হতে হতেই রোগীর ক্যান্সারের অবস্থান শেষ ধাপে চলে যায়। এসময় রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ করে নারীরা সহজে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চান না। অল্প অল্প জ্বর থাকলে তারা নিজেরা ওষুধ নিয়ে এসে খেয়ে ফেলেন। কিন্তু এই অল্প অল্প জ্বর ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ। এ থেকে রোগীর ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে যা পরে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
এজন্য দরকার সচেতনতা। বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপের পরামর্শ দেন ডা. সোহাগ। বাসস
এসি