ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

পালিয়ে নির্যাতন থেকে রক্ষ পেল সামসুন্নাহার

প্রকাশিত : ০৬:৩৪ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

বয়স কতই বা হবে সামসুন্নাহারের! বার কি তের। এই বয়সে যাওয়ার কথা ছিল বিদ্যালয়ে, মেতে থাকার কথা ছিল সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলায়। কিন্তু জীবন ও জীবিকার তাগিদে তাকে নিজ সংসারের মায়া ত্যাগ করে অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে হয়েছে।

দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার ভোয়ালদার গ্রামের কৃষক সামসুদ্দিন ও গৃহিনী হোসনেয়ারা দম্পত্তির একমাত্র মেয়ে সামসুন্নাহার। গত ৩০ অক্টোবর বাবা-মাকে ছেড়ে প্রতিবেশি এক খালার মাধ্যমে ঢাকা শহরের ধানমন্ডি এলাকার জয়নাল আবেদিনের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে আসে। কে জানত সামসুন্নাহারকে কাজের নামে সইতে হবে অমানুষিক নির্যাতন। প্রথমদিন থেকেই গৃহকর্তীর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। সেই নির্যাতনের কথাই ফুটে উঠে সামসুন্নাহারের মুখে।

সামসুন্নাহার জানায়, গ্রাম থেকে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা ওই খালা বাসার গৃহকর্তীর নিকট তাকে হস্তান্তর করে ১০ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান। যাবার সময় খালা তাকে আশ্বস্ত করেন তুই এখানে খুব ভাল থাকবি। কোন চিন্তা করিস না। খালার কথায় প্রথমে সামসুন্নাহারের কচি মনে আনন্দের ঢেউ খেললেও পরক্ষণেই তা বিষাদে রূপ নেয়। তার উপর কারণে অকারণে চলতে থাকে নির্যাতন। কাজের ভুল ধরে নির্যাতন করতে থাকে গৃহকর্তী। তাকে হুমকি দেওয়া হয় নির্যাতনের কথা কাউকে জানালে তাকে চোর অপবাদ দিয়ে পুলিশে দেওয়া হবে।নিরূপায় মেয়েটি সব নির্যাতন সহ্য করে কাজ করতে থাকে। তবে গৃহকর্তা ভাল মানুষ বলে জানান সামসুন্নাহার।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে গৃহকর্তা জয়নাল আবেদিন সপরিবারে ঢাকার দোহারের সাতভিটা তার নিজ গ্রামে বেড়াতে আসে। সাথে নিয়ে আসেন গৃহপরিচারিকা সামসুন্নাহারকে। ওইদিন সন্ধ্যায় সুযোগ বুঝে মেয়েটি জয়নাল আবেদিনের বাসা থেকে পালিয়ে উপজেলার নয়াবাড়িতে আসে। ঘুরতে থাকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে। মেয়েটিকে ঘুরতে দেখে এগিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন। তার মুখ থেকে সব ঘটনা শুনে মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নানের নিকট। চেয়ারম্যান সাথে সাথে ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সালমা খাতুন ও দোহার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাজ্জাদ হোসেনকে জানায়। প্রশাসন থেকে চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় মেয়েটি রাখা হয় নয়াবাড়ির ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষত মহিলা মেম্বার জীবননেছার বাড়িতে। মাতৃ স্নেহে মেয়েটিকে বুকে তুলে নেন ইউপি সদস্য জীবননেছা।

অপরদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় মেয়েটির পরিবারের সাথে। মেয়েটির দুর্দশার কথা শুনে স্থির থাকতে পারেনি মেয়েটির বাবা সামসুদ্দিন। শনিবার সকালে মেয়েকে নিতে ছুটে আসেন দোহার থানায়। মেয়েকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাবা। এসময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সকল প্রক্রিয়া শেষে দুপুরে সামসুন্নাহারকে তার বাবার হাতে তুলে দেয় পুলিশ প্রশাসন। এসময় নয়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান উপস্থিত ছিলেন।

নয়াবাড়ি ইউপি চেযারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান বলেন, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা মেয়েটিকে ওর পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া পর্যন্ত যতটুকু সহযোগিতা তা করেছি। এভাবে সবারই উচিত বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে থাকা।

দোহার থানার ওসি মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঘটনাটি শুনে ওর পরিবারকে আমরা খবর দিয়ে মেয়েটিকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছি।

আরকে//