ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১

আলোচনায় ডা. জোবাইদা রহমান

একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ০৬:৩৫ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

ডা. জোবাইদা রহমান। ফাইল ছবি

ডা. জোবাইদা রহমান। ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ সোমবার মনোনয়ন বিক্রি শুরু হয়েছে, চলছে আগামীকাল পর‌্যন্ত। মনোনয়ন বিক্রির শুরুই দিনেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন দলের তিন নেতা।

ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে নির্বাচন করার লক্ষ্যে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের পক্ষে এখনও মনোনয়নপত্র কেনা হয়নি। তিনি একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়ে বর্তমানে লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।

খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করা হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না সেটি নিয়ে ধোয়াশা রয়েই গেছে। কারণ তিনি দুটি মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নির্বাচন করতে পারবেন না যদি আদালত তাঁর দণ্ড স্থগিত করে। এই প্রথমবার জিয়া পরিবার থেকে কোনো সদস্যের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এমতাবস্থায় বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে ঘোর অমানিশায় থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের সামনে একটি নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। সেটি হচ্ছে ডা. জোবাইদা রহমান। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছে, বিএনপির শীর্ষ দুই নেতৃত্বের রাজনৈতিক ভবিষ্যত যখন প্রশ্নবিদ্ধ তখন জিয়া পরিবারের সদস্য ডা. জোবাইদা রহমানই পারেন দলের হাল ধরতে। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জোবাইদা রাজনীতিতে এলে চাঙা হবেন দলের নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক সঙ্কটে দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর কাছ থেকে সঠিক দিশা পাবেন।  

আলোচনা এমনও আছে যে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচন করতে না পারলে জোবাইদা রহমান নির্বাচনে অংশ নেবেন। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়া যে তিন আসনে মনোনয়ন কিনেছেন সেই আসনগুলোতে কিংবা জোবাইদার জন্মস্থান সিলেট থেকেও নির্বাচন করতে পারেন তিনি।   

বিএনপি ঘাটি বগুড়ার দুই আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন— এমন প্রশ্ন এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই নন, জেলার শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন।

অনেকেই বলছেন, আইনি জটিলতায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে তার পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারেন, তাহলে স্থানীয় নেতাদের বেছে নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।

ফলে এখন থেকেই পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের। তবে আবারও খালেদা জিয়ার মনোনয়নের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের নামও।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া-৭ আসনের গাবতলী উপজেলায়। যে কারণে তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সব নির্বাচনে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে তিনি পাশের বগুড়া-৬ (সদর) আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বগুড়া সদর আসনের এমপি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি বর্তমানে কারাগারে থাকায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তার প্রার্থিতা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডামের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ এখনও রয়ে গেছে। আশা করছি, বরাবরের মতো তিনিই বগুড়ার দুটি আসনে নির্বাচন করবেন।

খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে কে বা কারা নির্বাচন করতে পারেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের পার্লামেন্টারি বোর্ড নির্ধারণ করবে।

ডা. জোবাইদা রহমানের প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।

প্রায় একই মন্তব্য করেছেন বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। শীর্ষ নেতারা যেভাবে নির্দেশ দেবেন, সেভাবেই কাজ করব।

বগুড়া ও ঢাকায় বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মামলায় দণ্ডিত হলেও তারা খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার ব্যাপারে এখনও আশাবাদী। তারা মনে করছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামীতে রাজনীতিতে ইতিবাচক বেশকিছু বিষয় দৃশ্যমান হতে পারে। যার ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়ে যাবে।

তবে কোনো কারণে খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে না পারলে দুটি বিকল্প ভেবে রাখা হয়েছে। প্রথমত, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে প্রার্থী করা অথবা বগুড়ায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া।

তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ডা. জোবাইদা রহমানের এ মুহূর্তে দেশে আসা কিংবা তার প্রার্থিতার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাসপোর্ট সমস্যার কারণে ডা. জোবাইদা রহমান দেশে আসতে পারবেন না। লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে তার পাসপোর্ট আটকা।

যে কারণে অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি শাশুড়িকে দেখতে আসতে পারেননি। বরং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকার স্ত্রী শর্মিলা রহমানের দেশে এসে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়া এমনকি তার প্রার্থিতারও সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি না এলে বা প্রার্থিতার ব্যাপারে সম্মত না হলে স্থানীয় নেতাদেরই বেছে নেওয়া হবে।

সেক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু (বগুড়া-৭ আসন) এবং বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমানের (বগুড়া-৬ আসন) প্রার্থিতার সম্ভাবনাই বেশি।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দুই শীর্ষ নেতার পাশাপাশি বগুড়া-৬ আসনে জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং বগুড়া-৭ আসনে গাবতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোর্শেদ মিল্টন ও শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সরকার বাদলও আগ্রহী।

প্রার্থিতার বিষয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান বলেন, দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে প্রার্থী হবো। তবে জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

আলোচনায় থাকা জোবাইদা রহমান বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী জোবাইদার কাকা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আইরিন খানের চাচাতো বোন জোবাইদা চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হন।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন থেকে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে এমএসসি করেছেন।

প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসার গুঞ্জন নতুন নয়। বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে জিয়া পরিবারের এ সদস্য বিএনপির রাজনীতির হাল ধরবেন। তবে এখনও পর্যন্ত জিয়া পরিবারের কেউ এ বিষয়ে কিছুই বলেননি।

/ এআর /