স্মৃতির পাতায় হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশিত : ১১:১০ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:০৩ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নিমার্তা হুমায়ূন আহমেদের ৭০ জন্মবাষির্কী আজ। এ দিনে শিল্প-সাহিত্যের সবখানে আলোচনার বিষয় তিনি। শ্রদ্ধাভরে আজ তাকে স্মরণ করছেন সবাই। তারকাদের অনেকেই বিভিন্ন সময় হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। খুব কাছে থেকে দেখেছেন তাকে। প্রিয় সেই মানুষটির জন্ম দিবসে স্মৃতির কথা জানালেন লেখক ও সাহিত্যিক ফাতেমা হক মুক্তা।
তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে নেই এটা আমি বিশ্বাস করি না। তিনি সবখানেই আছেন। আমরা তাকে অনুভব করি সবসময়। আমি মনে করি, বাংলা ভাষার সাহিত্যপ্রেমী, সংস্কৃতিপ্রেমীরা সবাই একজন মহান শিল্পী ও শিল্পের স্রষ্টাকে মিস করেন। তিনি মরে গিয়েও বেঁচে আছেন তার সৃষ্টিকমের্। অদেখা ভুবনে ভালো থাকুন আমাদের সবার প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। "স্মৃতির পাতা থেকে" আমার চোখে দেখা একজন লেখক নয় ---- "মানুষ" হুমায়ূন আহমেদ। লেখক হুমায়ূন আহমেদের এই লেখাটি যতবার আমি পড়ি --ঠিক ততবারই আমার মানুষ হয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, সবার থেকে আলাদা রকমের ভালো মানুষ হতে।
**আমার নানার বাড়ীতে নসু বলে একটা লোককে ছোটবেলায় দেখেছিলাম। তার সমস্ত শরীর আগুনে ঝলসানো। সে আগুনে আটকা পড়া একটা বিড়াল ছানাকে বাঁচাতে গিয়ে পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল।
সবাই তাকে ডাকতো বোকা নসু। কিন্তু সেই `বোকা` নামের সাথে কি গভীর মমতাই না মেশান থাকতো ! ছোটবেলায় আমি ভেবেছিলাম, নসু মামা বোধ করি খুব বিড়াল পছন্দ করেন। তাকে জিঙ্গেস করতেই তিনি দাঁত-মুখ কুঁচকে বললেন, ``দূর ভাইগনা। বিলাই আমার দুই চউক্ষের বিষ।`` আশ্চর্যের ব্যাপার, এই ``দু`চোখের বিষের বাচ্চা`` বাঁচানোর জন্যেও আগুনে ঝাপিয়ে পড়া যায়। মানুষ বলেই সে পারে।
মানুষকে চেষ্টা করে মহৎ হতে হয় না, মহৎ হয়েই সে জন্মেছে।
---- হুমায়ূন আহমেদ (অনন্ত অম্বরে)
আমি এই হুমায়ূন আহমেদ কে চিনি ও জানি। , লেখক, নাট্যকার, গল্পকার, যেটাই বলি না কেন--
এই ব্যক্তি মানুষটির কাছে আমার চোখে সব নশ্বর। মানুষ এমনই হতে হয়,
লেখক হলেও এমন লেখকই হতে হয়, যেন, সহজ, সরল হয়ে প্রতিটা মানুষের অন্তরের ভিতর প্রবেশ করতে পারা। উনি পেরেছেন। আমার মতো সাধারণ মানুষদের প্রিয় হতে পেরেছেন। উনার কাছে সেই যাদু ছিল, মানুষের অন্তর পড়ে, সেটা লিপিবদ্ধ করা। কজন পারেন এমন? কজন পারে সাধারণ থেকে এমন অসাধারণ হতে। হুমায়ূন আহমেদ আমার চোখে একজন ভালো মানুষ।
ভুল, ভুলের পথে পা মাড়ানো, এই মানুষেরই স্বভাব। দূর হতে মানুষ সেই ভুলটুকুই শুধু দেখতে পায়--
কিন্তু, ভুলের পিছনের যে গল্প --- সেটা মানুষ জানেনা, জানার চেষ্টাও করেনা, আর সেই কারণেই মানুষ মানুষের সমালোচনা করে। ২০১৪তে আমি নুহাস পল্লিতে গিয়েছিলাম। কি ভেবে, কি জানি শুধু কান্না আসছিলো আমার। আমি চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাচ্ছিলাম --- লেখক হুমায়ূন আহমেদ ছাড়াও, অন্য একজন মানুষকে। যে মানুষটি ছড়িয়ে, ছিটিয়ে আছেন সারা নুহাশ পল্লির আনাচেকানাচে।
হয়ত, সেই মানুষটার সাথে নিজের কোথাও না কোথাও বারবার মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম।
বা অন্যকিছু --- যেটা আমি কখনো কাউকে বলতেই পারবো না। সেদিন অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁর সমাধির পাশে বসে যা লিখেছিলাম---
"প্রণামী তোমায়"
তোমারে দেখিবার তরে
নয়ন মেলিয়া
আজ আমি আসিয়াছি --
লাল সাদা গোলাপ হাতে
হয়ত আসিনি,
চোখ মেলে দেখো --
নীলপদ্ম হৃদয় আনিয়াছি।
তুমি আমার কেহ নহে --
না শিক্ষক, না অভিভাবক
না তুমি আমার প্রিয় লেখক--
তবুও,
তবুও, তুমি ঘুমাবার পরে
আমি তোমারেই ভালোবাসিয়াছি।
হে প্রিয়,
হয়ত আগে কখনো
তোমারে দেখিবার পারিনি
তারপরও যে তোমারে
আজও ভুলিবার পারিনি ---
কত কষ্ট যে পাইয়াছি তোমার তরে
এ হৃদয়খানি বারবার কাইন্দা মরে।
আখি মেলিয়া দেখো
এ দুনয়নে কত জল ঝরাইয়াছি
তোমারে দেখিবার তরে
নয়ন মেলিয়া--
আজ আমি আসিয়াছি।
২৫/০৪/২০১৪
নুহাস পল্লি, গাজীপুর।
আজ আমার এই প্রিয় লেখকের জন্মদিন।
তাঁর জন্য রইলো আমার শ্রদ্ধা ও দোআ।
আল্লাহ্ যেন ভালো রাখেন।
""হে প্রিয়, হলুদ হলুদ সালাম জানাই --
হলুদে হলুদে ছেয়ে থাক তোমার আপন ভুবন।
কলুষিত, কুৎসিত মুছে যাক পৃথিবী থেকে--
হলুদে হলুদে ভরে যাক তোমার বসুন্ধরা,
এই হলুদে শুধু তোমার হিমুদেরই মানায় ""
হে প্রিয়,
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে
তোমাকে হলুদ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
*শুভ জন্মদিন *
হেমন্তের এই হীমে খুব খুব জানতে ইচ্ছে
করে--
তুমি কেমন আছো?
কেমন আছে তোমার মিসির আলি,
কেমন আছে তোমার হিমু, রুপা?
দোয়া রইলো -- তুমি ও তোমরা ভালো থেকো --
খুব খুব ভালো থেকো।
:লেখক ও সাহিত্যিক ফাতেমা হক মুক্তা