ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

গর্ভের শিশু নড়াচড়া না করলে কী করবেন: ডা. কাজী ফয়েজা

প্রকাশিত : ০৭:৪৯ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার

ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার

একজন মায়ের জন্য গর্ভকালীন সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসময়ে মায়ের শরীরের যত্ন যেমন ঠিকঠাক মতো নেওয়া দরকার তেমনি গর্ভস্থ শিশুর দিকেও নজর দিতে হয়।

গর্ভের শিশু যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে তাহলে সে মায়ের পেটে স্বাভাবিক নড়াচড়া করবে। যা অন্ত:স্বত্ত্বা অনুভব করতে পারেন।

আমাদের কাছে মায়েরা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন যে, পেটে থাকা শিশু নড়ে না। আবার কেউ কেউ বলেন, পেটে বাচ্চা কম নড়ে। আবার অনেকে প্রশ্ন করেন, পেটে শিশু ভালো আছে কি-না কীভাবে বুঝবেন?

পেটের মধ্যে শিশুর নড়াচড়া শুরু হয় প্রসবের বহু আগ থেকেই। দশ সপ্তাহ বা বার সপ্তাহ থেকেই পেটের মধ্যে শিশু নড়াচড়া করতে থাকে। কিন্তু মা তখন সেটা বুঝতে পারেন না।

যিনি প্রথম বারের মতো মা হচ্ছেন তিনি এই নড়া চড়া বুঝতে পারেন তার গর্ভকালীন সময়ের ছ’মাসের পর। এর আগে তার মধ্যে একটা অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু বাচ্চার নড়াচড়ার পরিমাণ গুনতে সক্ষম হয় না।

যার আগের গর্ভধারনের অভিজ্ঞতা আছে, যিনি আগে মা হয়েছেন, অর্থাৎ যিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো মা হচ্ছেন তিনি হয়তো আরো আগে পেটে বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে বা গুনতে পারেন। তবে সেটাও অন্তত পাঁচমাস সময়ে।

একটা বাচ্চা পেটে নড়াচড়া করছে কী করছে না, কতবার নড়াচড়া করছে এটা মা কখন থেকে গোনা শুরু করবে? আমরা ( ডাক্তার) বলি, ২৮ সপ্তাহের পর থেকে আপনারা পেটে বাচ্চার নড়াচড়া গুনবেন।

প্রতি ১২ ঘন্টায় অর্থাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পেটে একটি সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা দশবার নড়াচড়া করে থাকে। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখি, পেটে বাচ্চা হয়তো সকালে নড়েছে। দুপুরে কিছু সময়ের জন্য বাচ্চা নড়াচড়া করেনি। তখনই অন্ত:স্বত্ত্বা ফোন করে অস্থির করে ফেলেন যে, পেটে বাচ্চা নড়াচড়া করছে না।

এতে অস্থির হওয়ার বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দেখতে হবে পুরো ১২ ঘন্টায় শিশুটি দশবার নড়াচড়া করলো কি-না? শিশু পরিস্থিতির উপর নড়াচড়া করে। তারাও পেটে ঘুমায়। যখন ঘুমায় তখন নড়াচড়া বন্ধ থাকে।

আমরা সাধারণত যেটা বলি মা ভারি খাওয়ার পরপর বাচ্চা ভালো নড়ে। মাকে আমরা বলি সকালে নাস্তার পর, দুপুরে খাওয়ার পর ও রাতে খাওয়ার পর আপনি ( গর্ভবতী মা) শুবেন। এ সময় বাচ্চা যে নড়াচড়াটা করে তা আপনি গুনবেন।

যদি সকালে নাস্তার পরে তিনবার, দুপুরে খাওয়ার পর তিনবার ও রাতে খাওয়ার পর তিনবার- অর্থাৎ মোট ন`বার যদি বাচ্চা নড়ে ও সারাদিনের চলাফেরায় অন্তত একবার নড়ে, তাহলে বুঝতে হবে পেটে বাচ্চা সুস্থ আছে।

একটা লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে বাচ্চা যখন নড়তে থাকে তখন কিন্তু অনেকক্ষণ ধরেই নড়ে। এটাকে আপনি `এক` হিসেবে কাউন্ট করতে হবে। যখন থামল আবার নড়াচড়া শুরু করল তখন আবার `দুই` করে গুনতে হবে।

অনেকে যেটা ভুল করে, যখন বাচ্চা নড়া শুরু করে তখন গুনতে গুনতে এক থেকে একশ পর্যন্ত গুনে ফেলে। আসলে কিন্তু তা নয়। প্রতিবার থামলেই `এক` গুনতে হবে। এভাবে যদি সারাদিনে সে দশবার নড়াচড়া করে তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চা সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে।

তবে কোনো বাচ্চা যদি কোনো কারণে অস্বাভাবিক থাকে তাহলে কিন্তু সে দশবারের কম নড়ে। কোনো বাচ্চা যদি পাঁচবার বা ছয়বার নড়ে তাহলে সেটা সবার আগে মা টের পাবেন যদি তিনি সতর্ক থাকেন। তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে তখন যোগাযোগ করা উচিত।

আরও পড়ুন : ৬ কারণে মায়ের স্তনে দুধ আসে না: ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদা

অনেকে বলে থাকে, আজ কম নড়েছে। আচ্ছা কালকের দিনটা দেখি, পরশু দিনটা দেখি। না, এ অবহেলা ভুলেও করা যাবে না। গর্ভে থাকার শিশুর লক্ষণ খারাপ হওয়ার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে পেটে নড়া চড়া কমিয়ে দেওয়া।

একটা পর্যায়ে নড়াচড়া বন্ধ করে দেওয়া। এরকম অনেক দেখা গেছে বাচ্চা নড়াচড়া কমিয়ে দেওয়ার পর মা অবহেলা করেছে। বলেছে কালকে দেখি, পরশু দেখি। শেষ পর্যন্ত বাচ্চাটা আর রক্ষা করা যায়নি। তাই একজন মা যখনই টের পাবে বাচ্চার নড়াচড়া দশবারের কম হচ্ছে তখনই ( সেদিনই) তার ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

আরও পড়ুন : গর্ভের সন্তান মারা যায় যে কারণে: ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার

পেটে বাচ্চা নড়াচড়া কমিয়ে দেওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা হচ্ছে কোনো কারনে পেটে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়া। অনেক সময় দেখা যায় পেটের মধ্যে বাচ্চা ঘুরতে ঘুরতে নাড়ীটা বাচ্চার গলায় প্যাঁচ খায়। ফলে তার ব্লাড সাপ্লাই কমে যায় ও বাচ্চার নড়াচড়া কমে যায়।

আরেকটি কারণ হচ্ছে মায়ের রক্তশুন্যতা। রক্তশুন্যতা হলে বাচ্চা তখন অক্সিজেন কম পায় ও বাচ্চা নড়াচড়া কমিয়ে দেয়। বাচ্চা নড়াচড়া করছে না মানে বাচ্চা ভালো নেই। তাই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়ার বিকল্প নেই।

লেখক: কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল। নারী রোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ।

/ এআর /