পোকামাকড় ডেকে এনে চাষের উন্নতি!
প্রকাশিত : ০৩:০০ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
আজকের বিশ্বে খাদ্যের বেড়ে চলা চাহিদা মেটাতে বিশাল আকারে কৃষিকাজ চলছে৷ সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করে দ্রুত ফসল তোলার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা পোকামাকড় আকর্ষণ করে এর এক বিকল্প পদ্ধতি তুলে ধরছেন।
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কাছের একটি শহরের খেতে নিয়মিত কীটপতঙ্গ পর্যবেক্ষণ করেন৷ কীটপতঙ্গ দূর করার বদলে কৃষিকাজকেই তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তারা৷ সবার আগে খেতের আলের দিকে চোখ চলে যায়৷ ঝোপঝাড় ও জংলি ফুল দিয়ে সাজানো সেই সীমানা।
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর টোমাস ড্যোরিং ও তার টিম এভাবে খেতে আরও কীটপতঙ্গ আকর্ষণ করতে চান৷ সেই ঝোপের মধ্যে ৫০টিরও বেশি প্রজাতির গুবরে পোকা শীতযাপন করে৷ বসন্তকালে তারা আবার জেগে উঠলে খেত বেশি দূরে থাকে না।
ড্যোরিং বলেন, ‘এটা এক ধরনের গুবরে পোকা, সেটি নানা রকম অনিষ্টকারী কীট খেয়ে ফেলে৷ তাদের বিশাল ঝাঁক খেতের উপর উড়ে বেড়িয়ে সেই সব কীট ধ্বংস করে।
কৃষি পরিবেশবিদরা খেতের ধারে এমন সব উপকারী পোকামাকড়ের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যারা ক্ষতিকারক কীট খেয়ে ফেলে৷ ফলে কীটনাশকের আর প্রয়োজন পড়বে না বলে তাদের আশা৷
টোমাস ড্যোরিং বলেন, ‘এখানেই লেডিবাগ প্রজাতির শূককীট রয়েছে, যারা অ্যাফিড বা জাবপোকা খায়৷ সার্বিক একটা প্রণালী হিসেবে আমরা উপকারী পোকামাকড়ের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে পারি৷ তবে তাদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে না৷ তা সত্ত্বেও আমরা গোটা কাঠামোকে স্থিতিশীল করে তুলতে পারি৷’
খেতের ধারে গবেষকরা ফুলের সারি সৃষ্টি করেছেন৷ ফুলগুলি একসঙ্গে ফোটে না, একের পর এক তাদের বিকাশ ঘটে৷ ফলে পোকামাকড়ের খাদ্যের অভাব হয় না৷
ড্যোরিং বলেন, ‘এখানে যেমন দেখা যাচ্ছে, নানা ধরনের পোকা এই ফুল ব্যবহার করতে পারে৷ খেতের ফাঁক দিয়ে ট্রাকটর চলে৷ ফলে সেখানকার মাটি সাধারণত বেশ শক্ত হয়৷ সে কারণে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর তেমন উপযোগিতা নেই৷ মাটির এমন বৈশিষ্ট্যের ফলে সেখান থেকে আয়ের অঙ্ক কম৷ আয়ের চিন্তা না থাকায় সেই জায়গা পোকামাকড় আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷’
শুধু ধারে নয়, এই খেতের উপরের অংশও জার্মানির বেশিরভাগ খেতের থেকে ভিন্ন৷ গবেষকরা আগাছা ধ্বংস করতে কোনো রকম রাসায়নিক ব্যবহার করেন না৷ ফলে পোকারা খেতের মধ্যেও খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে, যেমন বীজ, পরাগ, ক্যামোমিল ইত্যাদি৷
খেতের ধারে ফুলের মেলা, কোনো কীটনাশক নয়, সারের পরিমাণও কম এবং ফসল পরিবর্তনের মতো পদক্ষেপ বেশ সফল হচ্ছে৷ প্রচলিত কৃষিক্ষেত্রের তুলনায় এখানে জীববৈচিত্র্য প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি৷ সেইসঙ্গে পরাগবহনকারী পোকাদের মাত্রা ৫০ শতাংশ বেশি৷
তথ্যসূত্র : ডয়েচে ভেলে
এমএইচ/