ডায়েট মানেই কি শুধু ওজন কমানো?
সামিয়া তাসনিম
প্রকাশিত : ০৩:৫৪ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:০৮ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
কথাটি এখন সবার মুখে মুখে। ছোট থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, সবাই এই শব্দটা জানেন। নিজে নিজে, ফেসবুক গ্রুপ থেকে বা অন্য কারও কাছ থেকে শুনে বা দেখে আমরা ডায়েট মেইনটেইন করছি এখন। ওজন বেড়ে যাচ্ছে? ব্যাচ শুরু করে দিলাম এগ ডায়েট!
আসলে কি এই ডায়েট? ডায়েট মানেই কি শুধু ওজন কমানো?
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একদিন আমার এক নিয়মিত রোগী যে আসতো বাড়তি ওজন কমানোর জন্য। সে একদিন আমাকে বললো ম্যাম আমার মেয়ের বয়স ১৩ বছর, ওর সামনে ভর্তি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার এর জন্য বাড়তি ওজন কমাতে হবে। আমি বললাম নিয়ে আসেন, সে আমাকে বললো ম্যাম যদি মেয়ে ডায়েট করে তাহলে তো ওর গ্রোথ কমে যাবে। অপুষ্টিতে ভুগবে।
তখন আমি খুব অবাক হলাম, এই ভেবে যে আমাদের দেশের সব মানুষ ডায়েট এর অর্থ জানেন না। শুধু সে নয় এমন অনেক মানুষকে জিজ্ঞাসা করলে একি উত্তর পাওয়া যাবে। এটা খুব বেশি অবাক হবারও বিষয় নয়। কারণ আমাদের দেশে এই সেক্টর নিয়ে আমরা সচেতন না। একজন পুষ্টিবিদের কাজ শুধু ওজন কমানো নয়! বা বাড়ানো নয়!
শিশু যখন মায়ের পেটে থাকে, তখন থেকেই তার ডায়েট মানে পুষ্টি সরবরাহ শুরু হয়ে যায়। এজন্য একজন মায়ের এই সময়ের পুষ্টি তার নিজের এবং বেবির দু’জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারপর শুরু হয় বাড়তি খাবার দিয়ে ৬ মাসের পর থেকে। এই সময় একটা শিশুর খাবার কেমন হলে, শিশুটি সুন্দর সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে সেটা কিন্তু ভাবার বিষয়। শুধু মোটা সাস্থ্য হলেই শিশু সুস্থ নয়! তারপর বাড়ন্ত বয়স, সন্ধি কাল, প্রাপ্তবয়স্ক থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত প্রত্যেকটা মানুষের পুষ্টি ডায়েট দরকার। ডায়েট এই জন্যই বলা হচ্ছে, কোন বয়সে কি খাবার কতটুকু দেওয়া প্রয়োজন সেটা আমরা সবাই জানি না। সব বয়সের পুষ্টি চাহিদা এক নয় আবার সব রোগের পথ্য ও এক নয়।
রোগের কথাটা আমাদের সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। একজনের একাধিক রোগ হতে পারে। যার কারণে খাবার গ্রহণের ব্যাপারে ও সচেতন হওয়াটা খুবি জরুরি। সব রোগের জন্য আলাদা আলাদা। তাই ওজন কমাতে গিয়ে আপনার শারীরিক সমস্যার কথা ভুলে যাবেন না। কারও যদি রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কম থাকে, ভিটামিন ডি কম থাকে, রক্তচাপ কম থাকে। তবে অবশ্যই তাকে নিজে নিজে ডায়েট বানানো থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আর ছোটদের ওজন কনানোর ক্ষেত্রে ওজন কমানোর সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রোথের কথাও মাথায় রেখেই পুষ্টিবিদরা ডায়েট প্ল্যান করে থাকেন।
প্রেগ্ন্যাসির সময় অনেকেই ভাবে ডায়েট করা যাবে না। এবার প্রশ্ন হলো ডায়েট মানে কি ওজন কমানো? উত্তর না! তাহলে ভয় কিসের! এই সময় বাচ্চা এবং মা দু’জনের পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য ডায়েট খুবি গুরুত্বপূর্ন। এ সময় একটা শিশুর মায়ের পেটেই ২৫ শতাংশ ব্রেন ডেভেলপমেন্ট হয়। তাই শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক বৃদ্ধিও অনেক জরুরি এই সময়ে। এবং শিশু জন্মগ্রহণ এর পরেও মায়ের পুষ্টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ! মায়ের বুকের দুধের পুষ্টি শিশুর জন্য প্রতিষেধক! রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মায়ের বুকের দুধে খেলেই হবে। আর মায়ের বুকের দুধ এর পুষ্টি কতটুকু পরিপূর্ণ হচ্ছে তা নির্ভর করবে মা কতটুকু পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করবে, তার উপর।
এবার সবকিছু পড়ে আপনার কি মনে হচ্ছে, ডায়েট মানে কি শুধুই ওজন কনানো! আসুন সবাই সতর্ক হই, অন্যকে সচেতন করি। কারণ সুস্থ্য মানুষ সুস্থ্য দেশ। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।
লেখক: পুষ্টিবিদ, ল্যাব এইড পল্লবী, ঢাকা।