পুরুষের অধিকার রক্ষায় আন্দোলনে
প্রকাশিত : ১১:১৮ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১১:২৮ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার
বাংলাদেশে যখন হ্যাশট্যাগ মি-টু আন্দোলনের ঢেউ এসে লেগেছে, যৌন নিপীড়নের শিকার হবার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করছেন নারীরা-তখন একদল পুরুষ সোমবার `পুরুষ রক্ষা` আন্দোলনে রাস্তায় নামবেন।
এরা মনে করেন, বাংলাদেশের সমাজে `পুরুষরাই এখন আসলে বেশি বৈষম্য এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিদ্যমান আইন-কানুন বিচার ব্যবস্থা পুরুষদের বিপক্ষে।`
বিশ্বের অনেক দেশে কিছু বেসরকারি সংগঠন সোমবার ১৯শে নভেম্বর `আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস` পালন করবে। বাংলাদেশে এই উপলক্ষে ঢাকায় এক `পুরুষ রক্ষা আন্দোলনের` সূচনা করছে `বাংলাদেশ মেন`স রাইটস ফাউন্ডেশন` নামে একটি সংগঠন।
এটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ খায়রুল আলম একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। নারাণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি ফুড কোম্পানি ডিলারশীপ নিয়ে ব্যবসা করেন। সেই সঙ্গে একটি পোলট্রি ফার্মও চালান।
আর মহাসচিব ফারুক সাজেদ পেশায় প্রকৌশলী। প্রায় দশ বছর প্রবাসে ছিলেন। দুবাই এবং কাতারে কাজ করেছেন।
তারা দুজনেই মনে করেন, বাংলাদেশের আইন-কানুন, বিচার-ব্যবস্থা থেকে সবকিছু কার্যত পুরুষদের বিপক্ষে, এখানে পুরুষরা বৈষম্যের শিকার, ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত।
তারা ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ করে পুরুষ অধিকার রক্ষায় তাদের আন্দোলনকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
শেখ খায়রুল আলম বলেন, "আমি ব্যবসা করতাম। পারিবারিক সূত্রে আমার বিয়ে হয়। তিন মাস পর আমার স্ত্রীকে ঘরে তোলার কথা ছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ীর লোকজন ঘরে তুলতে দিচ্ছিল না।"
"আমরা পারিবারিকভাবে চাপ দেই, স্ত্রীকে দেয়ার জন্য। কিন্তু ওরা সেটা না করে যৌতুকের মামলা করে আমার বিরুদ্ধে। অভিযোগ তোলে যে আমি স্ত্রীকে মারধর করেছি যৌতুকের জন্য। আমার এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান সবাই বলেছেন, এই অভিযোগ মিথ্যে। কিন্তু কোর্ট এই কথা গ্রহণ করেনি।"
শেখ খায়রুল আলম বলছেন, এটি তিন বছর আগের ঘটনা। তার ভাষায়, কোর্ট নারী ভিক্টিম যা বললো, সেটাকেই গ্রহণ করলো, এলাকার লোকে কি বললো, সেটা মানলো না।
"প্রথম মামলায় জামিন নিয়ে আসার পর আমার বিরুদ্ধে আবার নারী নির্যাতনের মামলা দিয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এই অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। তারপর আমি ৭৭ দিন হাজত খেটেছি, বিনা অপরাধে।"
শেখ খায়রুল আলম বলেন, তিনি আদালতে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছেন। অনেক মানবাধিকার সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু তার মনে হয়েছে, পুরুষদের পক্ষে কেউ নেই, পুরুষের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই।
"আমি আইন ও সালিশ কেন্দ্রে গিয়েছি। উনারা বলে, আমরা পুরুষের কোন কাজ করি না। এরপর ব্লাস্ট বলে আরেকটি সংগঠনের কাছে গিয়েছি। উনারাও বলেন,আমরা পুরুষের কাজ করি না। আমি বললাম, আমি তো নাগরিক এদেশের। নাগরিক হিসেবে আমার আইনের সুবিধা পাওয়ার অধিকার আছে। উনারা বললেন, আমরা পুরুষের মামলা করি না। তাহলে আমরা পুরুষরা কোথায় যাব? আমাদের পুরুষদের তো একটা যাওয়ার জায়গা থাকতে হবে।"
সেখান থেকেই এই সংগঠনের জন্ম। শেখ খায়রুল আলম তৈরি করলেন, পুরুষদের অধিকার রক্ষার সংগঠন।
শেখ খায়রুল আলম বলছেন, তারা প্রচুর সাড়া পাচ্ছেন। অনেক পুরুষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নানা বিষয়ে বুদ্ধি-পরামর্শ চাইছেন।
তিনি বলেন, "প্রতিদিন দেশ বিদেশে থেকে আমরা অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। অনেকে কান্নাকাটি করেন। কিন্তু আমরা কি করতে পারি। আইন তো আমাদের পক্ষে না।"