ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

পুড়ে ছাই হলো সাভারের শ্রমিক কলোনীর ৭৩ কক্ষ

প্রকাশিত : ০৪:২০ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

রাজধানীর উপকন্ঠ শিল্পাঞ্চল সাভারে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তিনটি শ্রমিক কলোনীর ৭৩টি কক্ষ। আগুনে কোন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও পুড়ে গেছে এসব কক্ষে থাকা আসবাবপত্রসহ স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রী। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পৌর এলাকার দক্ষিন দরিয়াপুর মহল্লার আলী হাসান, আলমগীর হোসেন ও শামসুল হকের মালিকানাধীন শ্রমিক কলোনীতে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

খবর পেয়ে সাভার ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে প্রায় আড়াই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। ততোক্ষনে তিনটি শ্রমিক কলোনীর ৭৩টি টিনসেড ঘর ও ভিতরে থাকা সমস্ত মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া কক্ষের বাসিন্দারা জানান, রাত আড়াইটার দিকে আলমগীর হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া আইসক্রীম ব্যবসায়ী খোকনের কক্ষ থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। এসময় আগুন দ্রুত বাড়তে থাকে এবং পার্শবর্তী শামসুল হক এবং আলী হাসানের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে বাড়ির মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, আলী হাসানের বাড়ির গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। কারন তার রান্ন ঘরের ওখান দিয়ে প্রথম আগুনের সুত্রপাত হয়েছে। তবে দুই বাড়ির মাঝখান থেকে আগুন লাগায় সঠিকভাবে বলতে পারছিনা কিভাবে আগুন লেগেছে। আগুনে আলমগীর হোসেনের প্রায় ১৫ টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় প্রায় বিশ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মজিদ মিয়া জানান, আগুন লাগার সাথে সাথে আমরা ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালাই। এসময় পাশর্^বর্তী তৈরী পোশাক কারখানা জে.কে ফেবিক্স এর পানির পাইপ দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করি আমরা। কিন্তু আগুনের তিব্রতা এত বেশী ছিলো যে পানি মারার সাথে আগুন দ্রুত আশপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে।
চাকুরীজিবী আফজাল হোসেন বলেন, আইসক্রীম ব্যবসায়ী খোকন কয়েকদিন আগে বাড়ি গেছে। রাতে তার কক্ষটি তালাবদ্ধ ছিলো এবং ভিতরে ফ্রীজও ছিলো। ধারনা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারনে ওই কক্ষটি থেকেই আগুনের সুত্রপাত হয়েছে।

অপর শ্রমিক কলোনীর মালিক মোঃ আলী হাসান বলেন, আগুনে তার ২০ টি টিনসেড ঘর এবং ঘরের ভিতরে থাকা সমস্ত মালামাল পুড়ে গেছে। এসময় তার একটি গরুর খামার এবং আরও ১৫টি কক্ষের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আগুনের কারনে দৌড়ঝাপ করায় খামারে থাকার একটি দুটি গরুর পা ভেঙ্গে গেছে এবং একটি গরুর অর্ধেক শরীর পুড়ে গেছে। সবমিলিয়ে তার প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়া শামসুল হকের শ্রমিক কলোনীতে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তাড়াহুড়ো করে ভাড়াটিয়া কিছু দরকারী জিনিস বেড় করতে পারলেও বিশটি কক্ষ এবং ভিতরে থাকা সমস্ত মালামাল পুড়ে যায়।

গার্মেন্টস কর্মী শাহানাজ নিজের সহায় সম্বল হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আমি পার্শবর্তী জে. কে ফেব্রিক্সে চাকুরী করে অনেক কষ্টে নিজের সংসারটা গুছিয়েছি। আমার ঘরে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল ছিলো। গর্ভবতি হওয়ায় অসুস্থ্যতার কারনে গত কয়েকদিন ধরে কাজে যেতে পারছেনা। আগুনে আমার সব পুড়ে গেলো এখন আমি অনাগত সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো কি করতো বুঝতে পারছিনা।

সাভার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার লিটন আহম্মেদ বলেন, আগুনের সংবাদ পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি ইউনিটের দুই ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রন করেছি। তবে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে আনতে তিনটি শ্রমিক কলোনীর প্রায় ৭৩টি সেমিপাকা টিনসেড ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিকগন। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সুত্রপাত হয়েছে এবং প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আরকে//