ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১

ব্যবসায়ীরা নির্বাচন করলে সুবিধা অসুবিধা কি?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৫ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার

বাংলাদেশে গত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সংসদ সদস্য হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ বছরও ইতিমধ্যেই অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বা জমা দিয়েছেন।

রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ এই ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে ওঠাকে উদ্বেগজনক বলে মনে করেন সুশাসন নিয়ে কাজ করে এরকম সংগঠনগুলো।

ফরিদপুর চার আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সৈয়দ মনজুরুল হক। টেকনোগ্রুপ নামের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।

তিনি বলছেন, "আমার পরিবারে পলিটিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড খুব স্ট্রং। সেজন্য আমি আমার এলাকাতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়েছি। এলাকার মানুষজন বিশ্বাস করে আমার যে ক্লিন ইমেজ ও আমি যদি তাদের লিড করি তাহলে এলাকার উন্নতি হবে।"

তিনি মনে করেন, রাজনীতি মানে মানুষের প্রয়োজন বুঝতে পারা, সমস্যার সমাধান দিতে পারা, এলাকার ভালো করা। এসব করতে পারলে রাজনীতি খুব একটা কঠিন নয়।

কিন্তু রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ এই ব্যবসায়ীদেরকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া ও নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে ওঠাকে কিভাবে দেখেন পেশাদার ও ঝানু রাজনীতিবিদরা?

খুলনা থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কামরুজ্জামান জামাল, যিনি সব মিলিয়ে ৩০ বছরের মতো রাজনীতি করছেন, তিনি বলছেন, "আমার চেয়েও যোগ্য ব্যক্তি মনোনয়ন পেলে কষ্টটা কম লাগে।"

বাংলাদেশে কয়েকটি সংসদ নির্বাচনের তথ্য যাচাই করলে দেখা যায় ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের নির্বাচনে দাঁড়ানো ও সংসদ সদস্য হয়ে ওঠার হার বাড়ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রথম সংসদে এমপিদের মধ্যে ব্যবসায়ী ছিল ১৭ শতাংশের মতো। দশম জাতীয় সংসদে তা বিপুল পরিমাণে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ শতাংশে।

রাজনৈতিকদলগুলো ব্যবসায়ীদের কেনো মনোনয়ন দিচ্ছে? এবিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, "দেশের যে রাজনীতি তা অনেকটাই অর্থের উপরে নির্ভর করে। ভোটাররাও তাদেরকে গ্রহণ করে। আদর্শবাদী একজন মাঠ-পর্যায়ের নেতা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে কিন্তু পাশ করতে পারবে না। কারণ একজন ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনে জেতা সম্ভব হয় না। পার্টি যখন নমিনেশন দেয় প্রথমেই ভাবে সে পাশ করে আসতে পারবে কিনা। কারণ সব দলই তো সরকার গঠন করতে চায়।"

এবারো বহু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর মধ্যে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফিবিসিসিআইএর শীর্ষ পর্যায়ের নেতা যেমন রয়েছেন, তেমনি আরও নানা ধরনের ব্যবসায়ীও রয়েছেন। বিষয়টিকে উদ্বেগজনক মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলছেন, "অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে একটা উদ্বেগের জায়গা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের রাজনীতি, ব্যবসা আর বিনিয়োগ একাকার হয়ে যাচ্ছে।"

রাজনীতিতে এলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে নীতি-নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করছেন তিনি।

তিনি একটি নমুনা দিয়ে বলছেন, "যেমন আমরা যেটা সম্প্রতি দেখেছি পোশাক শিল্প খাতে শ্রমিকদের অধিকার-ভিত্তিক আইনি সংস্কারের কথাগুলো যখন ওঠে তখন সংসদে পোশাক শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের এক ধরনের সক্রিয়তা দেখা যায়। অনেক সময় তাদের ইচ্ছামতো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হতেও দেখা যায়।"

ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদরা কর রেয়াত, ঋণ সুবিধা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার মতে, "রাজনীতিকে যদি ব্যবসা ও মুনাফা বিকাশের উপায় হিসেবে দেখা হয় তখন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বিনষ্ট হয়। যারা মূল রাজনীতির ধারক বাহক তারা ক্রমাগতভাবে কোণঠাসা হয়ে যান।"

রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যেই প্রার্থীদের যাচাই বাছাই শুরু করেছে। মনোনয়ন পাওয়ার এই দৌড়ে এবারও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।