ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

তাজমহলে পূজা এবং নামাজ পড়া নিয়ে বিতর্ক

প্রকাশিত : ০৯:৩২ এএম, ২০ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

ভারতের আগ্রায় একটি কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনের নারীরা তাজমহলের ভেতরে ঢুকে পূজা ও আরতি করেছেন।এমন কী তাজমহলের ভেতরের মসজিদে পবিত্র গঙ্গাজল ছিটিয়ে তারা সেটিকে শুদ্ধ করেছেন বলেও দাবি করেন।

‘রাষ্ট্রীয় বজরং দল’ নামে ওই সংগঠনের নেত্রীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের নিয়ম লঙ্ঘন করে গত বুধবার তাজমহলের ভেতরের মসজিদে নামাজ পড়া হয়েছে - তার প্রতিবাদেই তাদের ওই পূজা অর্চনা।

তাজমহলের ভেতরে যে মসজিদ রয়েছে, আগ্রার স্থানীয় মুসলিমরা সেখানে বহুকাল ধরেই নামাজ পড়ে আসছেন।

কিন্তু এ মাসেই তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এ এস আই) বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, জুম্মার দিন (শুক্রবার) ছাড়া অন্য কোনও দিনে ওই প্রাঙ্গণে নামাজ পড়া যাবে না।

শুক্রবার তাজমহল দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য বন্ধ থাকে, শুধু সেদিনই স্থানীয়রা সেখানে নামাজ পড়তে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

কিন্তু সেই নির্দেশ লঙ্ঘন করে গত সপ্তাহে বুধবার বেশ কয়েকজন স্থানীয় মুসলিম তাজমহলে সংগঠিতভাবে নামাজ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠে।

আগ্রার প্রভাবশালী মুসলিম ধর্মীয় নেতা মুফতি মুকাররম সেই অভিযোগ স্বীকার বা অস্বীকার কোনওটাই করছেন না, কিন্তু তার বক্তব্য এএসআই-য়ের নির্দেশটাই আসলে বেআইনি!

মুফতি মুকাররম বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আমি জানি না বুধবার তাজমহলের ভেতরে ঠিক কী ঘটেছে। কিন্তু এটুকু জানি ওই মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ করে দেওয়ার কোনও এখতিয়ার আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের নেই!’

‘আগ্রার মুসলিমরা আবহমান কাল থেকে তাজমহলে নামাজ পড়ে আসছেন, কোনও দিন কোনও গণ্ডগোল হয়নি। মসজিদ তো বানানোই নামাজ পড়ার জন্য, আর সেটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে!’

আগ্রার কট্টর হিন্দুত্ব-বাদীরা অবশ্য এই যুক্তি মানতে রাজি নন। তাদের অনেকেই তাজমহল আসলে একটি শিবমন্দির ছিল বলে মনে করে থাকেন - এবং তাজমহলের ভেতরে নামাজ পড়া ঠেকানোর জন্য তারা বহুদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আগ্রাতে `রাষ্ট্রীয় বজরং দলে`র নারী শাখার নেত্রী মীনা দিবাকর সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেছেন, ‘মুসলিমদের নামাজ পড়ার জন্য শুক্রবারের দিনক্ষণ তো বেঁধে দেওয়া আছে। তার বাইরেও নামাজ পড়ে আমাদের তেজো মহল-কে তারা অপবিত্র করেছেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।’

প্রসঙ্গত, তাজমহল আসলে একটি শিবমন্দির ছিল বলে যারা দাবি করেন তাদের অনেকেই সেটিতে `তেজো মহল` নামে অভিহিত করে থাকেন।

মীনা দিবাকর আরও বলেছেন, ‘পূজা আর আরতি করে আমরা আমাদের মন্দিরকে শুদ্ধ করেছি। আর আমরা যা করেছি তার পুরোটাই শান্তিপূর্ণভাবে - এখন কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমরা তার মুখোমুখি হতেও তৈরি আছি।’

রাষ্ট্রীয় বজরং দলের আগ্রা ইউনিটের সভাপতি গোবিন্দ পরাশর আবার দাবি করেছেন, তাজমহলের ভেতরে যেভাবে পূজা পাঠ সম্পন্ন হয়েছে সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

‘যেভাবে ধূপধুনো, দেশলাই কাঠি নিয়ে আমাদের নারী কর্মীরা তাজমহলে ঢুকতে পেরেছেন তাতেই প্রমাণ হয় যে সেখানে নিরাপত্তার ঘাটতি আছে। আর সে কারণেই লোকজন সেখানে যখন তখন ঢুকে নামাজ পড়তে পারে’, বলছেন মি পরাশর।

তাজমহলের ভেতরে পূজা অর্চনা নিয়ে আগ্রার প্রশাসন বা উত্তরপ্রদেশ সরকার এখনও কোনও মন্তব্য করেনি - এই ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এমএইচ/