ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

হিরো আলমের উত্থান যেভাবে

একুশে টিভি অনলাইন রিপোর্ট

প্রকাশিত : ০৫:৪৪ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:৪৬ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যক্তি বগুড়ার হিরো আলম। সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য জাতীয় পার্টির হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করছেন তিনি। এরপর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন টেলিভিশন  চ্যানেলে লাইভ অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে তাকে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিসপাড়ায় তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যারা তাকে দেখেননি তারা নতুন প্রজন্মের কাছে নাম শুনেই চিনে নিচ্ছেন। আসলেই তিনি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মহাজোটের প্রার্থী হতে পারবেন কি-না তা নিয়েও চলছে হিসাব-নিকাশ।

নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে জনসমর্থনের কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র কি? সেটি খুঁজে বের করতেই অনুসন্ধান চালানো হয় হিরো আলমের নিজের বাড়ি এরুলিয়া ও নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

অনুসন্ধানের দেখা যায় গেছে, আশরাফুল আলম নামের এই হিরো আলম প্রথমে চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন তাকে মানুষ চিনতো চানাচুর আলম বলে। এরপর সিডি বিক্রি করতেন। তখন ছিলেন সিডি আলম। সেটা বেশ আগের ঘটনা। সিডি যখন চলছিল না তখনই মাথায় আসে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসার। ভাবলেন নিজ গ্রামেই সেটা করবেন। করেও ফেললেন। বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের আশেপাশের গ্রামেই শুরু হয় আলমের ডিশ ব্যবসা। এখনও লোকে তাকে ডিশ আলম নামেই চেনে। ভার্চুয়াল জগতে আসার পর তিনি হয়ে যান হিরো আলম। একের পর এক মিউজিক ভিডিও বানানো শুরু করেন আলম। নিজের কেবল নেটওয়ার্কের মাধ্যেমে সেগুলো প্রচারও করতেন তিনি।

স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন হিরো আলম। এরপর জীবিকার তাগিদে সিডি বিক্রি থেকে আলম ডিশ ব্যবসায় হাত দিয়ে সফলতা অর্জন করেন। সেখান থেকে এখন তার মাসিক আয় ৭০-৮০ হাজার টাকা।

সিডির ব্যবসা করতেন আলম। ক্যাসেটে দেখতেন মডেলদের ছবি। সেই থেকে মাথায় ঢোকে মডেল হওয়ার। ২০০৮ সালেই করে ফেলেন একটা গানের মডেলিং। সেটাই ছিল শুরু। এরপরে সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সংসারে মনোযোগী হন। ২০০৯ সালে বিয়ে করেন পাশের গ্রামের সুমী নামের এক তরুণীকে। আলম সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সুমী পড়েছেন এসএসসি পর্যন্ত।

হিরো আলম বলেন, আমার মডেল হওয়ার ইচ্ছে ছিল আগে। যখন সিডি বিক্রি করতাম। আমি জানি না এসব ইচ্ছে পূরণ হয় কি-না, তবে লেগে ছিলাম। হয়েছে। অনেকে বলে বাজে হয়েছে। তাতে আমি কান দেই না। অনেকে আবার বলে ভালোই হয়েছে।

নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার আমি মাত্র ৭০ ভোটে হেরেছি। এর আগেরবারও হেরেছি অল্প ভোটে। তবে এলাকার মানুষের ভালোবাসার জন্য আমি আরেকবার নির্বাচন করবো। আমি বলেছিলাম আর দাঁড়াবো না, কিন্তু ভালোবাসার জন্য দাঁড়িয়েছি।

অনুসারে বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে হিরো আলমের বাবা আব্দুর রাজ্জাক (সৎ বাবা), মা আশরাফুন বেগম, স্ত্রী সাবিহা আক্তার সুমি, বড় মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী আলোমনি, মেজো মেয়ে ১ম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি আলো এবং চার বছরের ছেলে আবির হোসেনের।

হিরো আলমের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওর বাবা আহম্মদ মারা গেলে আমি আশরাফুন বেগমকে বিয়ে করি। এরা তিন বোন এক ভাই।নিজের ছেলে-মেয়ের মতোই তাদের মানুষ করেছি। মেয়েগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে। আলমের ডিশের ব্যবসা রয়েছে। এই ব্যবসাটি মূলত সেই দেখাশুনা করে। আলম ইচ্ছে মতো টাকা উড়ায়। মিউজিক ভিডিও বানানোর নামে রাতদিন পড়ে থাকে নানা জায়গায়। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী সন্তানদের কোনো খোঁজ রাখে না।

আপনার ছেলেতো অনেক বড় সেলিব্রিটি। ইউটিউবে তার ভিডিওর ভিউয়ার্স সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। আর তার আইডি সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৮৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এবার জাতীয় সংসদের নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন তুলেছেন।

এসব বলতেই হিরো আলমের বাবা বললেন, ‘কিসের সেলিব্রিটি, ভাইরাল? এগুলা কি? হামরা তো অতো কিছু বুঝি না। বাড়ির, ছোলপোলের খোঁজ লেয় না, আবার এমপির ভোট করিচ্চে। অক কাহালু নন্দীগ্রামের কে চেনে? আসলে এগলা অর ট্যাকা খাওয়ার জন্যে কিছু মানুষ ভুল বুঝে অক ল্যাচা (নাচা) লিয়্যা বেড়াচ্চে।

আলমের মেয়ে আলোমনি জানে না তার বাবা এখন কোথায়, কি করছে? বাড়ির কোনো খোঁজ রাখে না সে।

এরুলিয়া ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মন্ডল। একাধারে পাঁচ বার তিনি ওই এলাকার চেয়ারম্যান। হিরো আলমের বিষয়ে জানতে চাইলে এক গাল হেসে বললেন-এক বছর আগে ওর শালি (স্ত্রীর ছোট বোন) বিলকিসকে নিয়ে পলাসলো। সেই বিচার করে দেয়া লাগছে। আর বিচারতো হামার মাঝে মধ্যেই করা লাগে। ট্যাকা লিয়্যা দুই-একদিন পরপরই ঝামেলা লাগায়। তারপরেও এলাকার ছোল, ভালোই আছলো। শুনলাম আবার লির্বাচন করিচ্ছে। আসলে মাতা পাগলা হলে ইংকাই হয়। এটি মেম্বরত উটবার পারেনি। আবার জাতীয় লির্বাচন। আসলে এনা ট্যাকা হচে তো। গরমে থাকপার পারিচ্চে না।

এলাকার তরুণ প্রজন্ম হিরো আলম সম্পের্কে জানলেও প্রবীণরা তাকে চেনেই না। প্রবীণদের কাছে হিরো আলম সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তারা বলেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যেভাবে এলাকায় গণসংযোগ করেছেন হিরো আলম বগুড়া-৪ আসনে গণসংযোগ করেননি। এমনকি তার নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

তথ্য মতে, হিরো আলম লাঙ্গল প্রতীকে যে আসনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সেই বগুড়া-৪ নন্দীগ্রাম-কাহালু উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন। এই আসনে এবার ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৮১ জন।

 

 টিআর/