ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

পুণ্যস্নানে ভাঙল রাসমেলা

প্রকাশিত : ০১:৪৬ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার

হালকা কুয়াশায় ভেজা জোছনার আলোয় রাতভর চলেছে আরাধনা। নানা আনুষ্ঠানিকতায় প্রহর গুনেছেন নতুন সূর্য ওঠার। ভোরে দিনের প্রথম জোয়ারে নেমে পড়েছেন নোনা জলে। এ দৃশ্য শুক্রবার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের। এর মধ্য দিয়ে এদিন সেখানে শেষ হয় ঐতিহ্যের রাসমেলার।

কুয়াকাটা সৈকতের মতো এদিন নোনা জলে পুণ্যস্নানে রাসমেলা শেষ হয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দুবলার চরের আলোরকোলেও। মোংলার চিলা ও কাইনগরে রাস মেলা শেষ হয় পশুর নদীতে স্নানে। এদিন রাসোৎসব সাঙ্গো হয়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াতেও।

আলোকচর ও কুয়াকাটায় আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে নভেম্বরের পূর্ণিমা তিথিতে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় মেলারও। পুণ্যার্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের বহু দর্শনার্থী এতে যোগ দেন। যুগান্তরের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুয়াকাটা : তিন দিনের রাসমেলা শুরু হয়েছিল বুধবার। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে কুয়াকাটা সৈকত মহামিলনমেলায় পরিণত হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার শ্রী রাম চন্দ্র দাস। বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, বরিশাল রিজিওন ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম, পটুয়াখালী জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।

সারা রাত শিল্পীরা গানে গানে মাতিয়ে রাখেন দর্শনার্থীদের। মন্দিরের সামনে শ্রীকৃষ্ণের নাম যজ্ঞের মধ্য দিয়ে রাত শেষ হয়। উলুধ্বনি দিয়ে ও মন্ত্রপাঠ করে পুণ্যার্থীরা নেমে পড়েন পানিতে। মানতকারীরা মাথা ন্যাড়া (প্রায়শ্চিত্ত) ও পিণ্ড দান করেন। পুণ্যের আশায় বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুরও অর্পণ করেন সমুদ্রের পানিতে।

মোংলা (বাগেরহাট) : দুবলার চরের আলোরকোলে রাতভর মন্দিরে আরাধনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। নানা আনুষ্ঠানিকতার পর ভোরে প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে নেমে পড়েন তারা। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় তিন দিনের উৎসব। বুধবার সকাল থেকে এ উৎসবকে ঘিরে আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল এ সাগরদ্বীপটি। সুন্দরবন বন বিভাগ নির্ধারিত ৮টি রুটে এ উৎসবে যোগ দেয় কয়েক হাজার ব্যক্তি।

মোংলার চিলা ও কানইনগরে পৃথক রাসমেলা শেষ হয় শুক্রবার দুপুরে জোয়ারে পশুর নদীর তীরে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে। এ উপলক্ষে সেখানেও মেলায় বসে হরেকরকম পণ্যের দোকান।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ প্রাঙ্গণে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায় ও আদমপুরের তেতইগাঁও সানাঠাকুর মণ্ডপ প্রাঙ্গণে মণিপুরী মৈ-তৈ সম্প্রদায়ের মহারাসোৎসব শুরু হয় শুক্রবার সকাল থেকে। বেলা ১১টা থেকে রাখাল নৃত্য (গোষ্টলীলা) শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ সময়ে ভক্তরা মণ্ডপে বাতাসা ছিটিয়ে বাতাসা বৃষ্টি ঝরান। রাতে চলে সুনিপুণ নৃত্যাভিনয়। মণিপুরী সম্প্র্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও মেতে ওঠে এই আনন্দে।

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) : বাংলাদেশ সেবাশ্রম অঙ্গনে শুক্রবার ২৬তম এ রাসোৎসব শেষ হয়। উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ পাইক জানান, গুরুদেবের বর্ণনা, লীলা কীর্তন, রাস ও সাজ কীর্তন, সন্ধ্যা আরতী, গুরু মহিমা কীর্তন, ভজন কীর্তন, গীতা পাঠসহ নানা অর্চনা ও প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনের এ উৎসব ঘিরে আশ্রম অঙ্গনে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

দশমিনা (পটুয়াখালী) : দশমিনায় জমে উঠেছে রাসলীলা উৎসব। উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর সনাতন সংঘের উদ্যোগে রাইকানুন মন্দির প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ উৎসব শেষ হবে কাল। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মঙ্গল দ্বীপ প্রজ্বলন, শ্রীকৃষ্ণের রাম অধিবাস, পূজা-অর্চনা ও মঙ্গল অনুষ্ঠান, গীতাপাঠ, যজ্ঞানুষ্ঠান এবং পদাবলি কীর্তন।

টিআর/